নৈতিকতা কি শারীরিক নাকি মনস্তাত্ত্বিক?

মারিয়া সালাম

প্রকাশিত : জুলাই ১৭, ২০২০

একবার ছোটবেলায় স্কুলে বিস্কুট রেসে গিয়ে খুব বিপাকে পড়লাম। আমার সামনের দুটো দাঁত ছিল না, পোকা খেয়েছিল। সেই রেসে প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় কিছুই হতে পারি নি। তবে, বিস্কুট একটা ঠিকই ছিড়ে এনেছিলাম। সেই থেকেই শুরু হয়েছিল জীবনে দেরিতে হলেও লক্ষ্যে পৌঁছানোর দৌড়।

 

সেটা আমার একার ছিল, কারো সাথে কোন প্রতিযোগিতা ছিল না। এভাবেই দৌড়াতে দৌড়াতে একদিন মনে হলো আমি খুব ক্লান্ত, আর দৌড়াতে ভাল লাগছে না। আমার সবকিছু থেকে ব্রেক দরকার, সব সম্পর্ক থেকে, সব কর্তব্য থেকে। গায়ের জোরে টেনে বেড়ানো গাড়িটা মাঝপথে ছেড়ে দিলাম। তখন আমার ছোটবেলার কাছের বন্ধুরাই প্রথম প্রতিপক্ষ হিসেবে সামনে দাঁড়িয়ে গেল। এমন মোরাল পুলিশিং শুরু হলো, মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিল আমি সত্যি কি বাজে মানুষ?

 

আমার সন্তানদের চিন্তায় তাদের ঘুম আসতো না। তাদের এককথা মা`দের ক্লান্ত হওয়া চলে না। তুমি দৌড়াতে দৌড়াতে মরে যাও, তবু দৌড়াও। সন্তানদের ব্যপারে আমাকে বুঝাতে তাদের রাতদুপুরের ফোন কল আর আমার অফিসের বাইরে এসে ভীড় করা আমাকে অন্য বার্তা দিত। তবুও ভাবতাম আমি ভুল হয়তো।

 

গতকাল একটা গ্রুপে গিয়ে সেই বন্ধুদের দেখি কি অদ্ভুত আর অবলীলায় ডা সাবরিনাকে নিয়ে একেরপর এক বাজে মন্তব্য করে যাচ্ছে। সাথে তার উত্তেজক ছবি আর বন্ধুদের উত্তেজনাপূর্ণ ক্যাপশন। সেখানে সাবরিনার প্রকৃত অপরাধের বিষয়ে কিছুই বলা হচ্ছিল না, চলছিল তার শরীরচর্চা।

 

আমার মনে হলো, এইমাত্র ছ`মাস আগেও ওরা আমাকে নৈতিক জ্ঞান দিচ্ছিল। মায়ের সাথে সন্তানের ত্যাগের সম্পর্ক বুঝাচ্ছিল। সাবরিনা যতই খারাপ হোক, তারওতো সন্তান আছে। তাহলে সন্তান আর মাকে নিয়ে জ্ঞান দেয়া সে বন্ধুরা আজ কিভাবে এসব লিখে? নৈতিকতার সঠিক ব্যাখ্যা আসলে কি? আর তাদের চাওয়াওটাই বা কি?