বিশ্বজয়ী হও

পর্ব ৮

অমিত কুমার কুণ্ডু

প্রকাশিত : জুলাই ০২, ২০২০

নিজেকে যেমনটি ভাববে, ক্রমশ তুমি তেমন হয়ে যাবে। নিজেকে ছোট ভাবাই ধ্বংসের প্রধান কারণ। তুমি ছোট নও, তুমি পাপী নও; তুমি বোকা নও, নিজেকে সবার থেকে সেরা ভাবো, দেখবে তুমি অবশ্যই সেরা হবে। আমি জানি, নিজের বিষয়ে নিজে বিচারক হয়ে যখন নিজেকে নিজে প্রথম বলে ঘোষণা কেউ নিজের কাছে করবে, তখন প্রবল ইচ্ছাশক্তির জোরে সে নিশ্চয় প্রথম হবে।

তুমিও সকলের সেরা হও, তুমি যেক্ষেত্রে আছ সেক্ষেত্রে সফলতা দেখাও। যদি সফল হও তবে বোঝা যাবে তুমি অন্যান্য ক্ষেত্রেও সফল হবে। কোনো ক্ষেত্রে যদি কখনও বিফল হও তবে দুঃখ করো না। বিফল হয়েছো বলে নিজেকে দুর্বল ভেবো না, ভেবো না তুমি এ কাজের যোগ্য নও। কেন বিফলতা তার কারণ খুঁজে সেটা দূর করো, তাহলে তুমি অবশ্যই সফল হবে। অন্যেরা যা পারে, তুমিও তা পারবে। অন্যে চায় আর তুমি চাও না। এটাই পার্থক্য, আর এজন্যে অন্যে পায় তুমি পাও না।

নিজের দেবত্বকে বিকশিত করো, নিজের মহত্বকে প্রকাশিত করো, নিজের বীরত্বকে প্রদর্শন করো। নিজের জ্ঞানকে অন্যের মাঝে সঞ্চারিত করো। নিজেকে শামুক ঝিনুকের মতো খোলসের আড়ালে লুকিয়ে রেখো না। তুমি যদি প্রকাশিত হতে চাও, তবে তোমার দীপ্তি অবশ্যই জগৎ মাঝে ছড়াবে। তুমি জড়ের মতো নিস্তরঙ্গ থেকো না। প্রবল ঢেউয়ের মতো আঘাত করো। মেঘের ন্যায় ভীষণ গর্জন করো। বলো, আমি অমর হতে জন্মেছি। বলো, আমি বীর হতে এসেছি। বলো, আমি আকাশের মতো বিশাল। বলো, আমার শির হিমালয়ের সমান। বলো, জগতের সমস্ত সুখ, সমস্ত হাসি, সমস্ত খুশি আমার মাঝে বিদ্যমান।

বন্ধু, নিজেকে বড় না ভাবলে বড় হবার স্বপ্ন না দেখলে, বড় হবার পরিকল্পনা না করলে, বড় হবার পথে এগোবে কী করে? বড় হওয়া তো ভীষণ সহজ। শুধু একবার ভেবে দেখ তুমি বড় হতে চাও, তাহলেই তুমি বড় হবে। সত্যই তুমি কী মনে প্রাণে বড় হতে চাও? তবে তুমি নিশ্চয় বড় হবে। তুমি যদি বড় হবার চিন্তাকে কার্যে রূপান্তরিত কর, তবে একদিন দেখবে, তোমার কুড়ির জীবন মনের অজান্তেই ফুল হয়ে ফুটে গেছে।

হিতোপদেশ (মিত্রলাভে) বলা আছে, ‘সকল বিত্তের মধ্যে বিদ্যাবিত্তই শ্রেষ্ঠ। কারণ, বিদ্যা হরণ করা যায় না, তা অমূল্য ও অক্ষয়। বিদ্যা বিনয় দান করে, বিনয় থেকে মানুষ যোগ্য পাত্র হয়।’ বিদ্যা অর্জন করে তুমি যখন যোগ্য ব্যক্তি হবে তখন তোমার মন বলবে তুমি যোগ্য, সমাজও বলবে তুমি যোগ্য। এখন ভেবে দেখ এই যোগ্য ব্যক্তি তুমি কেমন করে হলে, নিশ্চয় বিদ্যা অর্জন করে। আর এই বিদ্যা অর্জন তুমি কেন করলে? নিশ্চয় যোগ্য ব্যক্তি হবার জন্য করেছ। অর্থাৎ তুমি নিজেকে ভেবেছ যে তুমি বিদ্যা অর্জনের যোগ্য তাই অর্জন করতে পেরেছ।

এভাবে পৃথিবীর সব কাজে নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তুলতে হলে আগে খারাপ ও নেতিবাচক চিন্তাগুলোকে নিজের মন থেকে দূরে সরিয়ে নিজেকে গুরুত্ব দিতে শিখতে হবে। নিজেকে যোগ্য ভাবতে হবে, তাহলেই যোগ্য হয়ে ওঠা যাবে। শ্রীরামকৃষ্ণ বলতেন, ‘যে কেবল বলে ‘আমি পাপী’ ‘আমি পাপী’ সেই পড়ে যায়। মনকে যদি কুসঙ্গে রাখো, তো সেইরকম কথাবার্তা, চিন্তা হয়ে যাবে।’

এই মনকে যখন আমরা বলি আমরা মানুষ হব তখন আমরা সেদিকে এগোয়, যখন আমরা মনে মনে ঠিক করি আমরা পরোপকার করব, তখন আমরা পরোপকার করি। এভাবে নিজেকে আমরা যেমনটি ভাবি ক্রমশ তেমন হয়ে যায়। শক্তিমান ভাবলে শক্তিমান হই। শক্তিহীন ভাবলে শক্তিহীন। পারব ভাবলে পারি। পারব না ভাবলে পারি না। যদি বিশ্বজয়ী হব ভাবি, তবে বিশ্বজয়ী হব। যদি ভাবি সম্ভব না। তাহলে সম্ভব না। তাই যে কোন কাজে উন্নত হতে গেলে আগে আমাদেরকে নিজেকে মনে মনে উন্নত করে তুলতে হয়, আত্মবিশ্বাসী হতে হয়।

স্বামীজি বলতেন, ‘হে বীরহৃদয় যুবকগণ, তোমরা বিশ্বাস করো যে, তোমরা বড় বড় কাজ করবার জন্য জন্মেছো। আপনাতে বিশ্বাস রাখো। প্রবল বিশ্বাসই বড় বড় কার্যের জনক। ভাবিও না তোমরা দরিদ্র, ভাবিও না তোমরা বন্ধুহীন; কে কোথায় দেখিয়াছে টাকায় মানুষ করিয়াছে! মানুষই চিরকাল টাকা করিয়া থাকে। জগতের যা কিছু উন্নতি, সব মানুষের শক্তিতে হইয়াছে, উৎসাহের শক্তিতে হইয়াছে। বিশ্বাসের শক্তিতে হইয়াছে। প্রাচীন ধর্ম বলিতেছে, যে ঈশ্বরে বিশ্বাস না করে সে নাস্তিক। নতুন ধর্ম বলিতেছে, যে আপনাতে বিশ্বাস স্থাপন না করে সে-ই নাস্তিক। সমগ্র মানবজাতির ইতিহাসে মহাপ্রাণ নর-নারীদের মধ্যে যদি কোন প্রেরণা অধিকতর শক্তি-সঞ্চার করিয়া থাকে, তাহা আত্মবিশ্বাস। তাঁহারা এই চেতনাসহ জন্মিয়াছিলেন যে তাঁহারা মহৎ হইবেন এবং তাঁহারা মহৎ হইয়াছিলেন। তোমাদের স্নায়ু সতেজ করো। আমাদের আবশ্যক, লৌহের মত পেশী ও বজ্রদৃঢ় স্নায়ু। আমরা অনেক দিন ধরিয়া কাঁদিয়াছি; এখন আর কাঁদিবার প্রয়োজন নাই, এখন নিজের পায়ে ভর দিয়া দাঁড়াইয়া মানুষ হও।’

বিশ্বাস করো তুমি মানুষ হবে। বিশ্বাস করো তুমি মহৎ হবে। বিশ্বাস রাখ নিজের উপর। তুমি বিশ্বাস করলেই এগিয়ে যাবে। আবারও বলছি নিজেকে যেমনটি ভাববে ক্রমশ তুমি তেমন হয়ে যাবে। আমি বিশ্বাস করি এই একটি বাক্যে। তুমিও বিশ্বাস করো। তাহলেই তুমি এগিয়ে যাবে। নিশ্চয় তুমি মহৎ হবে। চলবে