মারুফ ইসলামের চিলতে গদ্য ‘জীবন এখানে এমন’

পর্ব ৩

প্রকাশিত : জানুয়ারি ১৮, ২০২০

আমরা সবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পা দিয়েছি তখন। সেঁজুতিও পা রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেই বয়সে যা হয় আর কি, সেঁজুতিরও তাই হলো। হৃদয়ের পালে হাওয়া লাগলো। আর সেই পালতোলা হৃদয়ে গুণটানা মাঝি হলো শাকিল। শাকিল, সেঁজুতিরই ক্লাসমেট। সহপাঠী। একসঙ্গে ক্লাস করতে করতে, ক্যাম্পাসে ঘুরতে ঘুরতে, ফুচকা-চটপটি খেতে খেতে পরস্পর নিকটবর্তী হলো। আমরা একসময় আবিষ্কার করলাম, শাকিল-সেঁজুতি দুজন দুজনার প্রেমে পড়েছে।

প্রেমে পড়ায় বারণ নেই। দুটি তরুণ-তরুণী প্রেমে পড়তেই পারে। কিন্তু ঝামেলা বাধালো এক উঠতি কবি। এই কবির সঙ্গে আরও তিন বছর আগে থেকে প্রেমের সম্পর্ক ছিল সেঁজুতির। সেঁজুতি অবশ্য স্বীকার করতে নারাজ। সে বলে, জাস্ট ফ্রেন্ড জাস্ট ফ্রেন্ড!

মানুষের চরিত্রের এই এক বিস্ময়কর ধাঁধা। সে নিজেই নিজেকে চেনে না ঠিকমতো। চিনতে পারে না অপরকেও। তাই একজনের বন্ধুত্বকে অন্যজন মনে করে, প্রেম। অন্য জনের নিবিড় প্রেমকে আরেক জন মনে করে, নিছক ভালোবাসা। সেঁজুতির ভালোবাসা কি সত্যিই নিছক বন্ধুত্বের ভালোবাসা ছিল? সেঁজুতি নিজেও জানে না।

আমরা দেখলাম, সেঁজুতির বাড়ির সামনে কবি নামধারী ব্যর্থ প্রেমিক মাঝে-মাঝেই দাঁড়িয়ে থাকে। তার এই দাঁড়িয়ে থাকা নিয়ে রসিয়ে রসিয়ে গল্প করে সেঁজুতি-শাকিল। এই গল্পের ভেতর তারা একধরনের পৈশাচিক আনন্দ খুঁজে পায়।

এও এক ধাঁধাময় চরিত্রেরই বহিঃপ্রকাশ, নয় কি? কবি যদি পুরনো প্রেমিকার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থেকেই সুখ লাভ করে, তাতে সেঁজুতির আনন্দিত হওয়ার হেতু কী? মানুষের চরিত্রের এই বিস্ময়কর ধাঁধা আমরা বুঝে উঠতে পারি না। আর বুঝে উঠতে পারি না বলেই একদিন খবর পাই, শাকিল তার বন্ধু-বান্ধবকে সঙ্গে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে সেঁজুতির উপর।

এখানেই বিস্ময়ের শেষ নয়। আমরা পরে আরও জানতে পারি, সেঁজুতিকে একটু শিক্ষা দেবার জন্য ব্যর্থ প্রেমিক কবিই নাকি ভাড়া করেছিল শাকিলকে!

শাকিল কেন রাজি হলো এমন প্রস্তাবে? শাকিল না ভালোবাস তো সেঁজুতিকে? আমরা অন্তত তা-ই জানতাম। তবে কী সেই ভালোবাসার অন্তরালে ছিল অন্যকিছু, যা আমরা জানি না?

আমরা আসলে সাদা চোখে যা দেখি, তা-ই সব নয়। সবটুকু নয়। আমাদের দেখার মাঝে ফাঁকি থাকে। বোঝার মাঝে তফাৎ থাকে। আমাদের জীবগুলো ধাঁধাময়, রহস্যময়। আলো-আঁধারিময়। আমাদের জীবন এখানে এমন।