রথো রাফির গদ্য ‘তিক্ত গল্প’
প্রকাশিত : অক্টোবর ০৪, ২০২০
রুক্ষ ও তিক্ত এ পৃথিবীতে সবাই রঙচঙে মিথ্যে গল্পই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। এত বেশি ভালোবাসে যে, ওই গল্পের ফাঁদে পড়ে কতজন একমাত্র প্রাণটাও বিলিয়ে দেয়। দিতে কার্পণ্যও করে না। আরও সত্য, তারা কখনও টের পায় না, এ আসলে আত্মহত্যা। আর, তবু কতজন, আত্মহত্যার আগে হয়ে ওঠে হত্যাকারী! মুক্তির, সুখের ও স্বপ্নের গল্প ছাড়া তাদের চলে না। কিন্তু কথা হলো, কার চলে!
এ যেন সেই গল্প। মরুভূমির ছবি তোলা, আর একে রঙতুলির ছোঁয়ায় ছায়াময়, মায়াময় এবং প্রশান্ত ও প্রগাঢ় এক সবুজ বনের ছবিতে পরিণত করা। আর মরুবাসীদের চোখের সামনে তুলে ধরে শত বছর ধরে বলা, এই স্বপ্নসমৃদ্ধ জায়গাটি মরুভূমির মধ্যেই আছে। শুধু খুঁজে বের করতে হবে।
তো, তারা এত বিশ্বাস করে সেই গল্প যে, মরুভুমি ছেড়ে যেখানেই যাক, আর যত বড় বনভূমিরই দেখা পাক, তারা ভাবে এটা সেই বিশ্বাস বিশ্রুত, অনাদিকাল ধরে কাঙ্ক্ষিত সেই সবুজ স্বর্গ নয়। কেন? তারা ভাবে, এর সবচেয়ে বড় কারণ, এটি মরুভূমির বাইরে। ইতিহাস অনুযায়ী, একে পেতে হবে মরুর জ্বলন্ত বালির নরকেই।
তো, তাদের সন্ধান চলতেই থাকে। কোনোদিন শেষ হয় না। তারা বলে, এ অনুসন্ধানই সুখের, মরুর মতো এই নরকে এই অনুসন্ধানই আসলে তাদের বাঁচিয়ে রেখেছে। এই জনবিশ্রুত বনভূমির সন্ধান চেয়ে চেয়ে যারা হারিয়ে গেছে, তাদের স্মরণ করে কখনও কখনও তারা আফসোস করে। রাতভর জেগে থেকে মরুজোছনাকে তরঙ্গিত করে কাঁদে।
কখনও কখনও তারা মরুর নগ্ন বুকে সূর্যের ধু ধু রোদের নিচে কারো ধবধবে সাদা কঙ্কাল পড়ে থাকতে দেখে ভাবে, সে কি আমারও ভবিষ্যৎ! না, তা হতে পারে না। কেননা, এ অসম্ভব! কেননা সেই প্রিয়তম বনভূমির অস্তিত্ব অবশ্যই আছে। তারা তখনও ভাবে, না হলে, কিভাবে আমরা এ কথা মেনে নেব, আমাদের পূর্বপুরুষরা হাজার হাজার বছর ধরে মিথ্যে বলে আসছে!
তারা তখনও দাবি কর চলে, মিথ্যের জগতে আর যাই হোক হাজার বছর ধরে বসবাস করা যায় না! একজনের পক্ষেতো নয়-ই, একটি জনপদের পক্ষে তা আরও অসম্ভব! হতাশাকে জয় করে তারা ফের পণ করে, তারা প্রাণ দেবে, তবু সন্ধান থামবে না। যারা হতাশ হয়ে শংসয় প্রকাশ করবে, তারা তো হতাশ, তারা আমাদের মরুর বুকে এ নরকেই থেকে যেতে বলবে। তারা প্রতারক, তাদের বেঁচে থাকারই অধিকার নেই। যে এ নরকে থাকার কথা বলে, সে মৃত, তাই তাকে হত্যায় কোনো অপরাধ নেই!
ক্রন্দনরত রাত্রির এমনই এক স্মরণ সমাবেশে অনেকের মাঝ থেকে একজন আত্মত্যাগের মহিমায় উজ্জ্বল হতে হতে একসময় দাঁড়িয়ে পড়ে। আর বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা দেয়, ভুলেও হতাশার গল্প বলে কেউ যদি মৃত্যু চায়, তবে তাকে মৃত্যুই উপহার দাও।
লেখক: কবি























