রাহাত খানের মৃত্যুতে সাহিত্যিকদের শোকগাথা

প্রকাশিত : আগস্ট ২৯, ২০২০

কথাসাহিত্যিক রাহাত খান চলে গেছেন না-ফেরার দেশে। রেখে গেলেন তার সাহিত্যকীর্তি। যা তাকে বাঁচিয়ে রাখবে পাঠকের হৃদয়ে। রাহাত খানের মৃত্যুতে শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েছে দেশের কবি ও কথাসাহিত্যিকরা। কেউ কেউ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিতয়া জানিয়েছে ফেসুবুকে। সেখান থেকে কয়েকজনের মন্তব্য নিয়ে এ আয়োজন:

অমিতাভ পাল

রাহাত খানের মৃত্যুর খবর শুনে

মৃত্যু ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে
প্রথমে ঠাকুরদা আর তার প্রজন্ম
আক্রান্ত হয় তার দাবানলে
এরপর সে ধরে বাবা আর তার বন্ধুদের হাত
তারপর আমাদের সিরিয়াল আসে
আর আমরা সেই ভয়াবহ আগুনে ছাই হতে হতে দেখি
সে আমাদের সন্তানদের দিকে যাচ্ছে
আর এইভাবেই মৃত্যুর আগুন
সবকিছু পোড়াতে পোড়াতে যায়
মৃত্যু এখন আমাদের দিকে এগোচ্ছে

আহমাদ মোস্তফা কামাল
বিদায় রাহাত খান। আপনার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না অনেকদিন, কিন্তু চমৎকার সব স্মৃতি ছিল আমাদের আড্ডা-কথকতার। সেসব স্মৃতি কখনো ম্লান হবে না।
লেখক: কথাসাহিত্যিক

রহিমা আক্তার কল্পনা
বরেণ্য কথাসাহিত্যিক রাহাত খান আর নেই। কিছুক্ষণ আগে তাঁর স্ত্রী অপর্ণা  খান ভাবী এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত নানান জটিল রোগে ভুগে আজ সন্ধ্যায় রাহাত খান মৃত্যুবরণ করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। রাহাত ভাই এবং তাঁর পরিবার আমার সুদীর্ঘকালের অন্তরঙ্গ স্বজন। তিনি ছিলেন আমার অগ্রজপ্রতিম। তিনি আমাকে তাঁর নিজের ছোট বোন বলে মানতেন। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছি ও তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।
লেখক: কবি ও কথাসাহিত্যিক

তারেক মাহমুদ
রবীন্দ্রনাথ ৮০ বছর বয়সে বিদায় নিয়েছিলেন। রাহাত খানও (১৯৪০-২০২০) বিদায় নিলেন ৮০ বছর বয়সে। অনেকদিন থেকেই অসুস্থ ছিলেন। আশা ছিল, হয়তো ফিরবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিদায় নিলেন।

রাহাত ভাইকে আমার কাছে রাজপুত্রের মতো লাগতো। তার কণ্ঠস্বর ছিল খুবই আকর্ষণীয়। শেষের দিকে দেখা হয়েছিলো রমনা পার্কে প্রাতঃভ্রমণে। সেখানেও রাজকীয় কায়দায় আড্ডা দিতেন। বিস্কুটের সাথে রং চা পান করতেন।

ইত্তেফাকের সম্পাদক থাকাকালীন অনেক যেতাম তার রুমে। দোতলায় বসতেন। কবি মহাদেব সাহা বসতেন তার পাশের রুমে। একই ফ্লোরে বসতেন রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই। পাঁচ তলায় বসতেন কবি আল মুজাহিদী। তিনি দেখতেন সাহিত্য।

১৯৯৮ সালে চলচ্চিত্রকার উদয়ন চৌধুরীর ৮০তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে আমার সম্পাদিক ‘পথিক’-এর একটি সংখ্যা প্রকাশিত হয়। রাহাত ভাইয়ের লেখা আনতে যাই তার অফিসে। কয়েকবার যেতে হয়েছিল। উনি অনেক ছোট ছোট অক্ষরে লিখতেন। নিউজপ্যাডের এক পৃষ্টার একটি লেখা দিয়েছিলেন উদয়ন দা’কে নিয়ে।

একবার তাকে দিয়ে আমরা অভিনয় করিয়েছিলাম। বন্ধু শাখাওয়াত আল মামুনের ধারাবাহিক ‘আজিজ মার্কেট. শাহবাগ, ঢাকা-১০০০’। এখানে অনেক কবি সাহিত্যিক-লেখক-সাংবাদিক অভিনয় করেছিলেন। আমিও করেছিলাম। আমি ছিলাম রাহাত ভাইয়ের কো-আর্টিস্ট। দৃশ্যটা এমন ছিল, এক তরুন কবির পকেটে কোনো টাকা নেই, সে যায় অগ্রজ লেখকের কাছে টাকার জন্য। অগ্রজ লেখক স্নেহপরবশ হয়ে তাকে ৫০০ টাকা দেন। অগ্রজ লেখক ছিলেন রাহাত ভাই আর সেই তরুন কবি ছিলাম আমি। রাহাত ভাই টাকা দেয়ার সময় বলেছিলেন হাসতে হাসতে, টাকাটা ফেরত পাব তো। সিন হয়ে গেলে টাকাটা ফেরত দেয়ার সময় বলেছিলেন আমাকে, ‘রেখে দাও’।

বাংলা ভাষার একজন শক্তিমান কথাসাহিত্যিক রাহাত খান। তার চিরপ্রস্থানে অনেক শোক আর শ্রদ্ধা।
লেখক: কবি, কথাসাহিত্যি ও অভিনেতা