শঙ্খ ঘোষের মৃত্যুতে লেখকদের শোকবার্তা

ছাড়পত্র ডেস্ক

প্রকাশিত : এপ্রিল ২১, ২০২১

প্রাণঘাতী কোভিড ১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চলে গেলেন কবি শঙ্খ ঘোষ। আজ বুধবার সকালে বাড়িতেই তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। বাংলা কবিতায় তিনি ছিলেন শিল্প মেধায় উজ্বলতম এক কবি। কবিতার পাশাপাশি শঙ্খ ঘোষ গদ্যও লিখেছেন। শিশুদের জন্য তার লেখাগুলো এতটাই ঝরঝরে যে, শিশুমনে প্রতিটি বাক্য ছবি এঁকে দ্যায়। শঙ্খ ঘোষের মৃত্যুতে ফেসবুকে তাৎক্ষণিক শোকবার্তা জানাচ্ছেন কবি-সাহিত্যিকরা। সেখান থেকে কয়েকটি সংগ্রহ করে ছাড়পত্রের পাঠকেদের জন্য—

আহমাদ মোস্তফা কামাল, কথাসাহিত্যিক
শঙ্খ ঘোষ।
তাঁকে আমি বলতাম সন্তকবি। কোনোদিন দেখা হয় নি তাঁর সঙ্গে, তবু তাঁর শব্দ-বাক‍্যগুলো কথা বলতো আমার সঙ্গে।  বারবার তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার কথা জানিয়েছি আপনাদেরকে। বলেছি, তাঁর প্রস্থানের জন্য নিজেকে কোনোভাবেই প্রস্তুত করতে পারছি না। আমার দগ্ধ-বিপন্ন জীবনে তিনি ছিলেন ছায়া হয়ে, একের পর এক স্বজন হারিয়ে বারবার ফিরে গেছি তাঁর লেখার কাছে। আশ্রয় পেয়েছি, সান্ত্বনা পেয়েছি, সাহস পেয়েছি। রবীন্দ্রনাথের পর এত বেশি আশ্রয় আর কোথাও পাইনি আমি।
আজ আমার মাথার ওপর থেকে সেই দীর্ঘ ছায়াটি সরে গেল। রৌদ্রদগ্ধ প্রান্তরে চিরকাল দাঁড়িয়ে থেকে পুড়ে যেতে থাকবো আমি।

হামীম কামরুল হক, কথাসাহিত্যিক
অমরবৃন্দের জগতে তিনি যুক্ত হলেন। চিরজীবী মৃত্যুঞ্জয়ী শঙ্খ ঘোষ।

মাহবুব মোর্শেদ, কথাসাহিত্যিক
প্রিয় কবি শঙ্খ ঘোষকে একবারই দেখেছিলাম একটা অনুষ্ঠানে। আজিজ মার্কেটের দোতালার বারান্দায়। বৈঠক মতো আয়োজনে উপস্থিত লোকদের নানা কথার উত্তর দিচ্ছিলেন। অনেক কথাই শুনেছিলাম সেদিন, কিন্তু একটি কথা এখনো আমার কানে লেগে আছে। দেশভাগের সময় ঔপন্যাসিক আনোয়ার পাশা পূর্ববঙ্গে আসছিলেন। তখন তার সঙ্গে শঙ্খ ঘোষের দেখা হয়।   আনোয়ার পাশা তাকে বলেছিলেন, আমাদের দেশটাকে দেখে রেখো, আমরা তোমাদের দেশটায় চলে যাচ্ছি।
শঙ্খ ঘোষের পৈতৃক বাড়ি ছিল বরিশালের বানারীপাড়ায়। বাংলাদেশের প্রতি স্বাভাবিক টান ছিল। কলকাতার তার প্রজন্মের মানুষগুলো একে একে চলে গেছেন। যারা আছেন তারা অল্প। বাংলাদেশের সঙ্গে এ প্রজন্মের একটা প্রত্যক্ষ সংযোগ ছিল। মান-অভিমান যাই থাকুক একটা টান ছিল। যোগাযোগটা তাদের লেখা বুঝতে আমাদের সাহায্য করত। এরপরের কলকাতার সাহিত্য বাংলা সাহিত্য বটে কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংযোগ তাতে বোধ করা যায় না।
শঙ্খ ঘোষ কলকাতায় কী ছিলেন তা বাংলাদেশ থেকে বোঝা খুব কঠিন। বাংলাদেশে তার মতো সাহিত্যিক খুব কমই এসেছেন। সামাজিক সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রচণ্ড সক্রিয় ছিলেন তিনি। উপযুক্ত সাহসী বক্তব্য দিতেন। ক্ষমতাসীনদের তোয়াজ করে চলতেন না। অবস্থানে অটল থাকতেন। আর এসব কারণেই পশ্চিমবঙ্গের কিংবা ভারতের বিভিন্ন বিষয়ে শঙ্খ ঘোষ কী বলছেন কোন অবস্থান নিচ্ছেন বড় গুরুত্ব বহন করত। সাদামাটা জীবন, জীবনযাপনের জৌলুস নেই, ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে মাখামাখি নেই তবু তার গুরুত্ব অনেক। এমন উদাহরণ বাংলাদেশ এখন নেই। শঙ্খ ঘোষের মৃত্যুতে কলকাতা অভিভাবকহীন হয়ে গেল। কবি শঙ্খ ঘোষ বাংলা কবিতার অনেক বড় অর্জন।

স্বকৃত নোমান, কথাসাহিত্যিক
একে একে চলে যাচ্ছেন মহীরুহগণ। কবে থামবে এই মৃত্যুর মিছিল! বিদায় কবি শঙ্খ ঘোষ। বিদায় হে ঋষি। অন্তিম প্রণতি।

শ্রেয়া চক্রবর্তী, কবি
চলে গেলেন কবি শঙ্খ ঘোষ। নক্ষত্র পতন...

শিমুল সালাহ্‌উদ্দিন, কবি
আহা! নিভন্ত এই চুল্লীতে মা একটু আগুন দে...
বিদায় কবিবর শঙ্খ ঘোষ, প্রিয়জনেষু...