শিমুল বাশারের গদ্য ‘ফ্যান্টাসি’

প্রকাশিত : আগস্ট ২৭, ২০২০

এ এক অদ্ভুত ফ্যান্টাসি!
গল্প করতে করতে হঠাৎ লোকটা ছিটকে দৌড়। সোজা ঘরের খাটের নিচে মিলিয়ে গেল। উঁকি দিয়ে দেখলাম, এক কোণে গিয়ে গুটিসুটি মেরে খুব কাঁপছে! জানতে চাইলাম, কি হয়েছে?

চোখ বড় বড় করে ফিসফিসিয়ে বলে, আরে মিয়া শব্দ পাও না!
অবাক হয়ে বললাম, কিসের শব্দ?
হেলিকপ্টার।
আমি কান পেতে মনোযোগ দেয়ার পর শব্দ পেলাম ঠিকই। জিগেশ করলাম, কিন্তু হেলিকপ্টার তো কি হয়েছে আপনার?
আরেহ মিয়া ওরা আমারে খুঁজতেছে। একারণেই তো এখানে এসে নিজেকে বন্দি করে রাখছি।
জিজ্ঞেস করলাম, ওরা আপনাকে খুঁজবে কেন?
তিনি খাটের তলা থেকে আমাকে হাতের ইশারায় ডাকে, এদিকে আহো তুমি।

আমি আবার জানতে চাইলাম, ভাই, আপনি কি পাগল! ওরা আপনাকে খুঁজতে হেলিকপ্টার নিবে কেন?
সে উত্তর দিলো, মিয়া কোনো খোঁজ তো রাখো না। এলাকায় গেলে বুঝবার পারতা, আমি কে!
আমি জানতে চাইলাম, আপনি কে?
সে উত্তরে আমার দিকে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি ছুড়ে দিয়ে বলল, তুমি মিয়া কোনো খোঁজ রাহো না দুইন্নার। তয় মিয়া তোমার মাথাডা ঠাণ্ডা আছে, যুক্তি বুদ্ধিও ভালো। তোমারে আমার তিন বাহিনীর সমন্বয়ক বানায়ে দিবো এইজাগা থিকা বেরইয়া, যোগাযোগ রাইখো।

রিহ্যাব সেন্টারের এক গাঞ্জাখোড় বড় ভাইয়ের গল্প এটি। প্রশ্ন হচ্ছে, তার এ ধরণের ফ্যান্টাসি তৈরি হবার পেছনের কারণটা কী? আমার নিজেরও নানারকম ফ্যান্টাসি আছে বেশিরভাগই সুপার পাওয়ার কিংবা নারী ও সেক্স কেন্দ্রিক। এ নিয়ে আমি নিজে লজ্জিত থাকি।

তবে মিডিয়াতে কাজ করতে এসে একটা বিষয় খেয়াল করছি, উঠতি বয়সী অনেকেই ভাবে, ওই সিনিয়র ভাইটা RAW এর এজেন্ট। আর ওই ভাইটার সাথে হয়তো ISIS এর যোগাযোগ আছে। মনে মনে তারা ওই ভাইয়ের গোপন সেই পাওয়ারের প্রতি দুর্বলও। পাওয়ারের ওপর এমন দুর্বলতা আমাদের একটা জাতিগত সমস্যা হয়ে থাকতে পারে। দীর্ঘদিন ঔপনিবেশিক শাসনে থাকায় মনোজগতে এই ত্রুটিটা হয়ে থাকতে পারে।

কোনো একটা দেশের এজেন্ট হবার ভয়ঙ্কর ফ্যান্টাসি তাদের! এই ফ্যান্টাসিতে ভুগতে থাকা মানসিক বৈকল্যগ্রস্ত পোলাপান আমাদের আশেপাশেই অনেক আছে। এরা যে নেশাগ্রস্তই হয় সবসময়, তা ঠিক নয়। হলি আর্টিজানের ঘটনার পর এদেশের অনেক মেয়েই নিবরাসের ওপর ক্রাশ খাইলেন, ভাবা যায় তাদের ভেতরের সাইকোলজিটা! সুস্থ স্বাভাবিক বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের মধ্যেও অনেককে দেখেছি এজেন্ট হবার তীব্র বাসনা নিয়ে লিঙ্ক খুঁজে বেড়ায়।

কখনো কখনো পরিচিতদের কাউকে এজেন্ট সন্দেহ করে তার পেছন পেছনও ঘোরে। আর তাদের সন্দেহগুলোকেই এদেশের কিছু বাটপার কাজে লাগায়। দেশের এমন কিছু বাটপার আমি চিনিও। ওইসব বাটপাড়দের খপ্পড়ে পরে সাধারণত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া কিছু সুযোগ বঞ্চিত ইনফেরিয়রিটি কমপ্লেক্সে ভোগা বলদ ছেলেমেয়ে। এই বলদেরা আরো নিশ্চিত হয় যখন ওই বাটপাড়দের এক ফোনে কাউকে ভারতের ভিসা মিলিয়ে দিতে দেখতে পায়। সাথে সাথে তাদের সন্দেহ ততোধিক নিশ্চিত প্রমাণ পেয়ে যায় এবং কগনিটিভ বায়াস কাজ করতে থাকে আর যদি বাংলাদেশের সাথে বিজনেস করা কলকাতার কোনো দাদার সাথে ওই বাটপাড়টার সম্পর্ক থাকে. তাহলে তো আর কথাই নাই!

ভাইরে/বোনরে, কোনো দেশের একজন এজেন্ট হবার স্বপ্নটা দেখার আগে না হয় নিজের দেশের এজেন্ট কিভাবে হতে পারেন সেই স্বপ্নটাই দেখেন এবং বিভিন্ন দেশের এজেন্টরা তাদের নিজেদের দেশের স্বার্থ হাসিলের জন্য কি ভাবে? কি প্রক্রিয়ায় অন্যদেশগুলোর অভ্যন্তরে কাজ করে, সেটার ইতিহাস ও বাস্তবতাটা জানুন। আপনিতো দেখছি মনে মনে বিরাট রাজাকার হয়ে আছেন!

লেখক: কবি, কথাসাহিত্যিক ও গণমাধ্যমকর্মী