অলঙ্করণ: ছায়াবীথি শ্যামলিমা
শিমুল বাশারের গদ্য ‘বৃত্তবন্দি পিঁপড়েজীবন’
প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২০
শালবনের ভেতর আর্তনাদের খালে ভাদ্রের বিষণ্ণ চাঁদ কাঁপে। প্রিয় সিরাস মেঘ উড়ে, আজ একটুও হাওয়া নাই! এইসব লোনলি লোনাটিক সন্ধ্যার আবছায়ায় হঠাৎ কোথা হতে উড়ে আসে একটা রাণী পিঁপড়া।
দাদি বলেছিল, পিঁপড়াদের নাকি দুইটা পেট। একটা নিজের, অন্যটা তবে কার? পুনর্ণভা লতায় কী দারুণ সংবেদ আহা! কাঠের পাটায় রাণী পিঁপড়াটাকে আলগোছে তুলে দিয়ে জিজ্ঞাসু চোখে নুরা আমার দিকে তাকায়। আমি পিঁপড়াটার দিকে মনযোগ রেখে সুইট সামার সোয়েট মেখে মুচমুচে মুড়ি খাই। পিঁপড়াটা আমার দিকে এগিয়ে আসে ধীরে। আমার নাইনটিসের আত্মহননকারী গল্পকার কায়েস আহমেদের কথা মনে পড়ে।
আঙুলের ডগায় জলের ফোঁটা নিয়ে পিঁপড়াটাকে ঘিরে আমি একটা বৃত্ত করে দেই। শশীর কাছ থেকে গলার মালা আর পায়েল নিয়ে নুরাকে দেই আর বলি, পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এসব দিয়েই নারীকে বাঁধা হয়। শালবনের গহীন থেকে একঝাঁক আর্তনাদের পাখি এসে খালের জলে ডুবে যায়।
মাথা নিচু করে আমি পিঁপড়াটার বৃত্ত ক্রমাগত ছোট করতে থাকি। পাশ থেকে নুরা জলের ওপর একটা মুড়ি ফেলে সাঁকো বানিয়ে দেয়। পিঁপড়াটা সেই সাঁকোর ওপর উঠে দাঁড়ায়। নুরা জানে না, মুড়িটা কিছু সময় পর ভিজে চুপসে যাবে, চুপসে যায়। পিঁপড়াটার বিপদ তখন আরো বাড়বে, চিরকাল বাড়ে। যেন এক নিঃসঙ্গ দ্বীপের একলা এক প্রাণ ওই রাণী পিঁপড়াটা। আমি মনযোগ দিয়ে দেখছি। খুব অস্থির হয়ে ছুটাছুটি করছে! মায়া হয়, আমার খুব মায়া হয়! আমি ওই মুড়িটার পাশে আরেকটা মুড়ি রেখে পিঁপড়াটার জন্য সাঁকোটাকে আরো একটু বড় আর নিরাপদ করে তুলি।
আমার খুব কান্না পায়। মাথা গুঁজে কাঁদবো বলে আবাছায়ার ভেতর আমি নুরার হাঁটু খুঁজি। শালবনের খালপাড়ে তখন চাঁদ কাঁপে। পাড়ে বসে আমি জলের দিকে চেয়ে থাকি। ক্রমাগত চাঁদটা ঝাপসা হতে থাকে। আমি আঁজলা ভরে চাঁদ মাখা জলে চোখটা ধুয়ে ফের শহরের রক্তের পথে ধুলির ভেতর নেমে আসি।
বুকের ওপর দিয়ে ট্রেন চলে যায়। কারা কারা যেন রেললাইনের ধারে বসে অবিরাম দুধচা খায়।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও গণমাধ্যমকর্মী
























