শিশুসাহিত্যিক সুকুমার রায়ের আজ মৃত্যুদিন

ছাড়পত্র ডেস্ক

প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৫

আধুনিক বাংলা শিশুসাহিত্যের শ্রেষ্ঠ রূপকার সুকুমার রায়ের আজ মৃত্যুদিন। ১৯২৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর কালাজ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৩৭ বছর বয়সে তিনি মারা যান। ১৮৮৭ সালের ৩০ অক্টোবর কলকাতায় তার জন্ম। আদিবাস বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার মসুয়া গ্রামে।

শৈশবে সুকুমার রায় ছবি আঁকা, আবৃত্তি, অভিনয় ইত্যাদি বিষয়ে পিতা উপেন্দ্রকিশোর দ্বারা অনুপ্রাণিত হন। অল্প বয়সেই তার সাহিত্যপ্রতিভার বিকাশ ঘটে। ১৩০২ বঙ্গাব্দে ৮ বছর বয়সে শিবনাথ শাস্ত্রী সম্পাদিত ‘মুকুল’ পত্রিকায় ‘নদী’ নামে তার একটি দীর্ঘ কবিতা প্রকাশিত হয়।

পরে ১৩২০ বঙ্গাব্দে পিতা উপেন্দ্রকিশোর ‘সন্দেশ’ পত্রিকা প্রকাশ শুরু করলে তিনি এর নিয়মিত লেখক হয়ে ওঠেন। এখানে নিরবচ্ছিন্নভাবে ছড়া, কবিতা, ছোটগল্প, নাটক, নিবন্ধ ইত্যাদি লিখে তিনি খ্যাতি অর্জন করেন। তার লেখা কবিতার বই ‘আবোল তাবোল’, গল্প ‘হযবরল’, গল্প সংকলন ‘পাগলা দাশু’ এবং নাটক ‘চলচ্চিত্তচঞ্চরী’ বিশ্বসাহিত্যে সর্বযুগের সেরা ‘ননসেন্স’ ব্যঙ্গাত্মক শিশুসাহিত্যের অন্যতম বলে মনে করা হয়।

কেবল অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড (Alice in Wonderland) ইত্যাদি কয়েকটি মুষ্টিমেয় ক্লাসিকই যাদের সমকক্ষ। মৃত্যুর বহু বছর পরেও তিনি বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয়তম শিশুসাহিত্যিকদের একজন।

সুকুমার রায় জন্মেছিলেন বাঙালি নবজাগরণের স্বর্ণযুগে। তার পারিবারিক পরিবেশ ছিল সাহিত্যনুরাগী, যা তার মধ্যকার সাহিত্যিক প্রতিভা বিকাশে সহায়ক হয়। পিতা উপেন্দ্রকিশোর ছিলেন শিশুতোষ গল্প ও জনপ্রিয়-বিজ্ঞান লেখক, চিত্রশিল্পী, সুরকার ও শৌখিন জ্যোতির্বিদ। উপেন্দ্রকিশোরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যিনি সুকুমারকে সরাসরি প্রভাবিত করেছিলেন। এছাড়া রায় পরিবারের সাথে জগদীশ চন্দ্র বসু ও আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় প্রমুখের সম্পর্ক ছিল।

কলকাতার সিটি স্কুল থেকে সুকুমার এন্ট্রাস পাশ করেন। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৯০৬ সালে রসায়ন ও পদার্থবিদ্যায় বিএসসি (অনার্স) করার পর সুকুমার মুদ্রণবিদ্যায় উচ্চতর শিক্ষার জন্য ১৯১১ সালে বিলেতে যান। সেখানে তিনি আলোকচিত্র ও মুদ্রণ প্রযুক্তির ওপর পড়াশোনা করেন এবং কালক্রমে তিনি ভারতের অগ্রগামী আলোকচিত্রী ও লিথোগ্রাফার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯১৩ সালে সুকুমার কলকাতাতে ফিরে আসেন।

সুকুমারের বিলেত থেকে ফেরার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই উপেন্দ্রকিশোরের মৃত্যু হয়। উপেন্দ্রকিশোরের মৃত্যুর পর তার প্রকাশনার ছোটদের একটি মাসিক পত্রিকা ‘সন্দেশ’ সম্পাদনার দায়িত্ব সুকুমার নিজের কাঁধে তুলে নেন। শুরু হয় বাংলা শিশুসাহিত্যের এক নতুন অধ্যায়।

সুকুমার রায়ের স্বল্পস্থায়ী জীবনে তার প্রতিভার শ্রেষ্ঠ বিকাশ লক্ষ্য করা যায়। সন্দেশের সম্পাদক থাকাকালীন তার লেখা ছড়া, গল্প ও প্রবন্ধ আজও বাংলা শিশুসাহিত্যে মাইলফলক হয়ে আছে। তার বহুমুখী প্রতিভার অনন্য প্রকাশ তার অসাধারণ ননসেন্স ছড়াগুলোতে। তার প্রথম ও একমাত্র ননসেন্স ছড়ার বই ‘আবোল তাবোল’ শুধু বাংলা সাহিত্যে নয়, বিশ্বসাহিত্যের অঙ্গনে নিজস্ব জায়গার দাবিদার।

সুকুমার প্রচ্ছদশিল্পী হিসেবেও সুনাম অর্জন করেছিলেন। তার প্রযুক্তিবিদের পরিচয় মেলে, নতুন পদ্ধতিতে হাফটোন ব্লক তৈরি আর ইংল্যান্ডের কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশিত তার প্রযুক্তি বিষয়ক রচনাগুলো থেকে।

সাংস্কৃতিক ও সৃজনশীল কার্য ছাড়াও সুকুমার ছিলেন ব্রাহ্মসমাজের সংস্কারপন্থী গোষ্ঠির এক তরুণ নেতা। সুকুমার রায় ‘অতীতের কথা’ নামক একটি কাব্য রচনা করেছিলেন, যা ব্রাহ্ম সমাজের ইতিহাসকে সরল ভাষায় ব্যক্ত করে– ছোটদের মধ্যে ব্রাহ্ম সমাজের মতাদর্শের উপস্থপনা করার লক্ষ্যে এই কাব্যটি একটি পুস্তিকার আকারে প্রকাশ করা হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যিনি ওই সময়ের সবথেকে প্রসিদ্ধ ব্রাহ্ম ছিলেন, তার ব্রাহ্মসমাজের সভাপতিত্বের প্রস্তাবের পৃষ্ঠপোষকতা সুকুমার করেছিলেন।