আবু তাহের সরফরাজের র ফলার ছড়া

প্রকাশিত : অক্টোবর ২২, ২০১৯

বাংলা বর্ণমালায় যতগুলো বর্ণে য ফলা দিয়ে শব্দ আছে, তাদেরকে একসঙ্গে করা হয়েছে। এরপর তাদেরকে নিয়ে ছন্দের দোলায় দুলেছি, আর লিখে গেছি কী কীসব যেন। ছবির মতো। শব্দকে কীভাবে ছবি করে তুলতে হয়, তা আমি জানি না। তবে এই খেলাটা ভালো লাগে। ভাষার গুরুত্বপূর্ণ একটি বর্ণ ও তার ব্যবহার সহজভাবে শিশুরা শিখতে পারে, এরচে বড় আনন্দ আর কী আছে!

ক্র   ক্রেতা, ক্রীতদাস, বিক্রয়, ক্রিকেট, ক্রোধ, ক্রিমি, ক্রোক, ক্রীড়া, ক্রমাগত, ক্রয়।
ক্রেতা পেলে ক্রীতদাস হবে না তো বিক্রয়
ক্রিকেটের মাঠে তার ক্রোধ নাকি ঠিক হয়।
ক্রিমি হলে পেটে তার ক্রোক হয় ক্রীড়া
ক্রমাগত ক্রয় করে সাগরের হীরা।

খ্র  খ্রিস্ট, খ্রিস্টান।
খ্রিস্ট হলেন খ্রিস্টান
দেন না তিনি পিছটান।

গ্র  গ্রাম, অগ্রিম, গ্রহীতা, গ্রীবা, গ্রীকদেবি, গ্রাস, গ্রহ, গ্রেফতার, গ্রহণীয়, অগ্র।
গ্রাম থেকে অগ্রিম সুদ নিল গ্রহীতা
গ্রীবা তুলে গ্রীকদেবি দেখলেন সবই তা।
গ্রাস কোরে গ্রহটাকে করলেন গ্রেফতার
গ্রহণীয় নয় কিছু, তার ভাই ডাকতার।

ঘ্র    ঘ্রাণ, অঘ্রাণ, আঘ্রাণ, ব্যাঘ্র, শীঘ্র।
ঘ্রাণ পেয়ে অঘ্রাণ
খেতে চায় আঘ্রাণ।
বন থেকে ব্যাঘ্র
এলো তাই শীঘ্র।

জ্র  বজ্র, বজ্রপাত, বজ্রাঘাত
বজ্রপাতে কাঁপল দেশ
বজ্রাঘাতে মরল মেষ।
বজ্র গেল শ্বশুরবাড়ি
পড়তে বসো তাড়াতাড়ি।
ছড়ার ছবি বইয়ের পড়া
ধরব তোমায় নতুন ছড়া।
লিখতে হবে ছড়ার ছবি
বুঝব তবে, তুমিই কবি।

ট্র     ট্রাক, ট্রাম।  ড্র   ড্রয়ার, ড্রেন, ড্রাগুন।
ট্রাক এলো ড্রেন দিয়ে
ট্রাম এলো ড্রয়ারে
ড্রাগনের বই রাখা
বালিশের ওয়ারে।

ত্র   ত্রয়োদশ, মিত্র, ত্রাস, ত্রুটি, গাত্র, কৃত্রিম।
ত্রয়োদশ মিত্র ত্রাস ছিল শহরে
ত্রুটি পেলে গাত্র দেগে দিত বহরে!
কৃত্রিম হাসি তার মুখ ঢাকা মুখোশে
জনগণ তার দিকে চেয়ে থাকে উপোসে।

দ্র   দ্রোপদী, দ্রাঘিমা, মুদ্রিত, নিদ্রিত, দ্রোহ, দ্রুত, বিদ্রোহ, রৌদ্র, হরিদ্রা।   ধ্র  ধ্রুব।
দ্রোপদীর ডাক শুনে ছুটে এলো দ্রাঘিমা
ধ্রুব হাতে লিখল সে, জগতের কী সীমা!
মুুদ্রিত ছিল যত নিদ্রিত দ্রোহ
দ্রুতবেগে ছোটে আর করে বিদ্রোহ।

প্র  প্রতিদিন, প্ররোচনা, প্রকাশক, প্রবচন, প্রশাসন, প্রশাসক, প্রজা, প্রতিভা, প্রাথমিক, প্রচারক, প্রগতি, প্রয়োজন, প্রাসাদ, প্রতিনিধি, প্রসাধন, প্রবাসী, প্রতিদান, প্রতিকার, প্রতিবেশি, প্রতারণা, প্রভাত, প্রতিবাদ, প্রাণ, প্রাণী, প্রীতি, প্রতিশোধ, প্রতীক, প্রেরণ, প্রহার, প্রচার, প্রথম, প্রহর, প্রতীক, প্রশংসা।

প্রতিদিন প্ররোচনা দেন প্রকাশক
প্রবচনগুলো কেন করে ছোঁক ছোঁক!
প্রশাসন থেকে এলো প্রশাসক প্রজা
কাজ তার প্রতিভার লোকগুলো খোঁজা।
প্রাথমিক দরজায় প্রচারক আছে
প্রগতির প্রয়োজনে মই তোলে গাছে।
প্রাসাদের প্রতিনিধি মুখে প্রসাধন
প্রবাসীর প্রতিদান করে মূলধন।
প্রতিকার চেয়ে চিঠি লেখে প্রতিবেশী,
আর নয় প্রতারণা, প্রেম হবে বেশি।
জগতের ঘাসপাতা আর ধুলোবালি
প্রভাতের রাঙারোদ প্রেম দেবে ঢালি।
প্রতিবাদ তাই বাদ জগতের মানুষে
এই প্রাণ আসে আর ওই যায় ফানুসে।
প্রাণীসব করে রব প্রীতি আর সোহাগে
প্রতিশোধ নিতে ওঠ প্রতীকের পোশাকে।

ফ্র  ফ্রক, ফ্রিজ, ফ্রেম। ব্র  ব্রণ, তীব্র, ব্রত, ব্রীড়া, ব্রিজ, তীব্র, ব্রিটিশ, ব্রাত্য।

ফ্রক পরেছে ছোটটো খুকি
ছবির ফ্রেমে দিচ্ছে উঁকি।
ফ্রিজ খুলেছে দাদুভাই,
আয় রে খুকি বরফ খাই।
খুকুর মুখে ব্রণের দাগ
তাই তো খুকুর তীব্র রাগ।
ব্রিজ পেরিয়ে শরষে ক্ষেত
ব্রিটিশ এলো, হাতে বেত।

ভ্র  ভ্রমর, শুভ্র, শুভ্রতা, ভ্রাতা, ভ্রুকুটি।

ভ্রমর এলো গুনগুনিয়ে শুভ্র সকালে
তাই তো ভ্রাতা ভ্রুকুটি দ্যায় ঘুরলে বিকালে।
শুভ্রতা যার শাড়ির আঁচল সেই মেয়েটি কে?
বইয়ের ছবি থেকে তোরা তাকে এনে দে।
ছোটটো কুঁড়ে তার পেছনে কলার পাতা দোলে
সেই মেয়েটি শ্যামলিমা ছবির খাতা খোলে।
ছবির খাতায় পাখির ঝাঁক
এই ছবিটা পারলে আঁক।

ম্র   সম্রাট, তাম্র, আম্র, নম্র।
সম্রাট বসে আছে তাম্রর আসনে
আম্র নিয়ে আসো নম্র বাসনে।

শ্র  বিশ্রাম, শ্রোতা, আশ্রয়, আশ্রিত, শ্রমিক, সাশ্রয়, শ্রেণি, শ্রম, শ্রীমান, শ্রাবণ।
বিশ্রাম চেয়ে শ্রোতা চেয়ে বসে আশ্রয়
আশ্রিত শ্রমিকের হলো কিছু সাশ্রয়।
শ্রেণিহীন সমাজের শ্রম হয় চুরি
দিনে দিনে শ্রীমানের বেড়ে ওঠে ভুঁড়ি।

স্র   স্রোত, সংস্রব, সহস্র।     হ্র  হ্রদ, হ্রাস।
হ্রদটাকে এড়াতে
স্রোত গেল বেড়াতে।
সংস্রব এড়িয়ে
পৃথিবীটা বেড়িয়ে
হ্রাস পেল জীবনের আয়ু তার
কেউ নেই জীবনের ভাগিদার।

 

কবির অনুমতি ছড়া বাণিজ্যিক ধান্দায় এই ছড়া ব্যবহার করলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।