আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহর গদ্য ‘ইবলিসের মন’

প্রকাশিত : এপ্রিল ১০, ২০২২

কোরআনে উল্লেখিত হওয়ার আগে ইবলিস নামটা আরবের লিটেরেরি ডিস্কোর্সে ছিল না। ইবলিস আরাবিক লেটারস বা, লাম ও সিন থেইকা আসছে। এইটার অর্থ  হইল, যে নিরাশায় পতিত হয় সে-ই ইবলিস। ইবলিসের রুট লেটারস বা, লা, সা মানে যে গুনাহ কইরা তাওবা করার আশা হারায়া ফেলছে। সুতরাং বোঝা যাইতেছে যে, নামটার মধ্যেই নেগেটিভ তথা নিরাশার বীজ লুকাইয়া আছে।

এইটা সত্য, ইবলিস আল্লাহর সমকক্ষ হইতে চায় নাই। ইবলিসের অপরাধ, আল্লাহর হুকুমকে অগ্রায্য করা। মানে আল্লাহর অবাধ্য হওয়া। সুতরাং আল্লাহর হুকুমের অবাধ্যতা ইবলিসি কাজ। আল্লাহ যখন ইবলিসকে বললেন আদমকে সম্মানসূচক সিজদা করতে, তখন ইবলিস তা অমান্য করে। আল্লাহ ইবলিসকে কারণ জিজ্ঞেস করলে ইবলিস জানাইল যে, সে আগুনের তৈরি, অপরদিকে আদম কাদা-মাটির তৈরি।

তার মতে, মাটি খুবই সাধারণ ও নিচু স্তরের জিনিস। আগুন ওপরের, তাই খুব দামি জিনিস। সুতরাং সে আদমের চেয়ে অনেক ভালো ও বড়। তাই সে সিজদা করে নাই। ইবলিস এখানে এরোগেন্ট, অহংকারী। প্রচণ্ড ইগোয়িস্টিক। সে নিজের অহংকে বড় কইরা দেখলো এবং তুলনার মাধ্যমে নিজের শ্রেষ্ঠত্বের প্রকাশ করল। ‘আমি’ ‘তুমি’ ‘সে’ এবং আমি বড়, সে ছোট ইত্যাদি প্রতিতুলনা ও শ্রেণিকরণের মাধ্যমে ‘ওয়ান আইড’ বা এক চক্ষু নীতি নিয়া আদমকে ‘নাথিং’ বানানোর চেষ্টা করছে।

আদমের ওপর জাজমেন্ট দেয়ার সময় ইবলিস আরেকটা বিরাট ভুল করছে। সেইটা হইল, আদমের আর্থলি ফর্ম বা আকার বিচার। সত্য মাটির তৈরি আদমের ফর্ম তার ভেতরের কিছুই প্রকাশ করে না। ফর্মের ভেতরে থাকা আদমের যে শোকর গুজারকারী একটা রুহ আছে, সেইটা ইবলিস তার এরোগেন্সের জন্য দেখতে পারে নাই। আল্লাহর দেয়া ‘রুহ’ হইল আদমের সাথে তার মালিক ও খালিকের স্প্রিচ্যুয়াল যোগাযোগের অবস্থা। সেই দিক থেইকা দেখলে বোঝা যায় যে, আদমের মধ্যে আছে ম্যাটার আর স্প্রিটের সহবস্থান।


ফর্ম বা ম্যাটার বিজয়ী হইলে বস্তুবাদিতা, লোভ, লালসা ও কাম ক্রোধকেন্দ্রিক দুনিয়াপ্রীতির বিজয় ঘটে। আর রুহর বিজয় ঘটলে আল্লাহর হুকুমের বাধ্যতাকেন্দ্রিক ইবাদত, ক্ষমা, দয়া, সামাজিক ন্যায়বিচার ও দায়িত্ববোধের বিজয় ঘটে। শুধু ফর্ম দেইখা সাদা-কালা, ধনী-গরিব, জাতপাত, বংশ-পদবী ইত্যাদি সূচকে মানুষের বিচার একটা ইবলিসি কাজ। ইবলিসের মন দিয়া মানুষ এভাবে বিচার করে।

আদমকে সিজদা দেয়ার বিষয়টা ছিল ইবলিসের জন্য একটা মহাপরীক্ষা। সেই পরীক্ষায় ইবলিস ফেইল করছে। কারণ সে আল্লাহর হুকুমের ওপর প্রশ্ন রাখছে আর পরীক্ষার সময় যে সবর আর শোকর লাগে সেইটা প্রকাশ করতে পারে নাই। অবশ্য এই দুইটা গুণ তার না। এইটা মানবিক। আদমের এই গুণ ছিল। তাই ফল খাওয়ার পরপরই আদম আল্লাহর কাছে তার গুনাহর মাফ চাইলেন। গুনাহ করা মানবিক, কিন্তু এই গুনাহ থেকে তাওবা করা আরো বেশি মানবিক।

মানুষ ইবলিসি চরিত্র পাইয়া গেলে সে এরোগেন্ট, জেলাস ও কাণ্ডজ্ঞানহীন হয়া পড়ে। হিউমিলিটি, নম্রতা ও ভদ্রতা সে হারায়া ফেলে। সে নিজের ফিতরা, পরিচয় থেইকা দূরে সইরা যায়। আল্লাহতাআলা তওবা করার যে মানসিকতা অনুগ্রহ করে আমাদেরকে দিছেন, সেইটাও সে হারায়া ফেলে। আল্লাহর তরফ থেইকা এইটা একটা বিরাট শাস্তি।

লেখক: কবি