মাওলানা মুহিউদ্দীন খান

মাওলানা মুহিউদ্দীন খান

ইসলামি সাহিত্যে মাসিক মদীনার অবদান

মুহাম্মাদ রাশেদ আহমাদ

প্রকাশিত : জুন ০২, ২০২১

১৯৬১ সালের প্রতিষ্ঠিত ইসলামি সাহিত্য ম্যাগাজিন ‘মাসিক মদীনা’র দুর্দান্ত প্রতাপে আজও সুনামের সাথে টিকে আছে। তার কারণ হলো, এর পেছনে ছিল একজন মুখলিস ও ইলমের সত্যিকারের ধারকের কঠোর পরিশ্রম। তিনি সর্বমহলের শ্রদ্ধেয় এবং ভালোবাসার মানুষ মাওলানা মুহিউদ্দীন খান। তিনি ছিলেন মাসিক মদীনার প্রতিষ্ঠাতা, প্রকাশক ও সম্পাদক। প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে নব্বই দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত মাসিক মদীনা ছিল বাংলাদেশের প্রধানতম ইসলামি মাসিক পত্রিকা। ইসলামের সকল বিষয়ের পাশাপাশি এখানে থাকতো বিজ্ঞান-সাহিত্য-আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সকল বিষয়ের তাত্ত্বিকপূর্ণ লেখা। থাকতো আরবিব-উর্দু ও ফারসি থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিতাবাদীর অনুবাদ।

সারাবছর থাকতো রাসূলে আরাবির জীবনাদর্শের আলোচনা এবং কুরআন ও হাদিসের ব্যাখ্যা। আল্লামা বদরে আলম মিরেঠী (রহ.) কর্তৃক লিখিত হাদিস সংকলন ‘তরজুমানুসসুন্নাহ’র অনুবাদ ও মুসলিম শরিফ থেকে সংকলিত উর্দু হাদিস সংকলনের নির্বাচিত হাদিসের বঙ্গানুবাদ প্রথমে মাসিক মদীনায় ধারাবাহিকভাবে ছাপা হয়।

এই তথ্য খুবই মশহুর যে, ১৯৭১ সালের মুক্তিযোদ্ধার পর পত্রিকাটি বেশকিছু কারণে বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু নিজে মাওলানাকে ডাকেন এবং পুনরায় তা চালু করার নির্দেশ দেন। এর কারণ হলো, বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফর রহমান সাহেব এই পত্রিকার নিয়মিত পাঠক ছিলেন। যুদ্ধের পরে পত্রিকা না পাওয়ায় তিনি তার ছেলেকে অবহিত করেন এবং খোঁজ-খবর নিতে আদেশ করেন। মাসিক মদিনা বাংলাদেশের সাহিত্যের একটি অন্যতম শক্তিশালী ঘাঁটি। কোথাও যেন পড়েছিলাম, কলমজাদুকর খ্যাত হুমায়ূন আহমেদও মাওলানা মুহিউদ্দীন খানের লিখনির খুব ভক্ত ছিলেন। আপাতত তথ্যসূত্রটি আমার মনে পড়ছে না।

শুধু বৃদ্ধ বা যুবক নয়, মাসিক মদীনার জন্য অপেক্ষায় থাকতো মুসলিম মা-বোনরাও। আমি ২০১২ বা ২০১৩ থেকে পড়া শুরু করেছি। ধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম পরবর্তী সংখ্যার জন্য। পুরনো সংখ্যাগুলো আমি পুরনো পল্টনের বইয়ের দোকান থেকে সংগ্রহ করি। মাসিক মদীনার সাথে জুড়ে আছে আমাদের কিশোর জীবনের আবেগ ও স্মৃতি। মাসিক মদীনার নিকট আমরা ঋণী। ইসলাম ও মুসলিম সমাজকে সাহিত্যরূপে পেশ করা এবং একদল সংগ্রামী লেখক ও অনুবাদক তৈরির অন্যতম কারিগর ছিল মাসিক মদীনা। যার পরিচালনায় ছিলেন আমাদের গর্ব মাওলানা মুহিউদ্দীন খান।

এখন শত শত পত্রিকা বের হচ্ছে, অথচ আজও মাসিক মদীনা স্বমহিমায় টিকে আছে। ইসলামি মাসিক পত্রিকা বলতে এখনও অনেকে মাসিক মদীনাকেই চেনে।