ইসলামে একাধিক বিবাহ

শাইখ মুহাম্মদ আকরাম নদভি

প্রকাশিত : মে ২৪, ২০২২

একবার এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে খাবার টেবিলে একজন মালয়েশিয়ান ইসলামিক স্কলার বললেন, ইসলামে পুরুষদের জন্য একের বেশি বিবাহ কখনোই বৈধ নয়। আমি এটা প্রমাণ করে দেব। ভাবলাম, এটা কিভাবে তিনি করে দেবেন! তাকে বললাম, আপনি দৃঢ়ভাবে নিশ্চিত যে প্রমাণ করে দেবেন? সে বললো, আমি পুরোপুরি নিশ্চিত এবং কুরআন থেকে প্রমাণ করে দেব।

জিজ্ঞাসা করলাম, কিভাবে? তিনি বললেন, কুরআন একটি আয়াতে স্পষ্ট বলছে যে, পুরুষরা একাধিক বিয়ে করলে নারীদের সমান অধিকার দিতে পারবে না। ولن تستطيعوا أن تعدلوا আর আগেই স্পষ্ট বলা আছে যে, সমান অধিকার দিতে না পারলে কেবল একটি বিয়েই করতে পারবে, তো প্রমাণ হয়ে গেল।

কতটা বিকৃত তাদের মন, ভেবে অবাক হলাম। তারা যেটা বলছে সেটা যদি সত্যি হয় তাহলে সাহাবিরা কেউই কুরআনের আয়াত অনুসরণ করেননি। আবু বকর সিদ্দিকের একের বেশি স্ত্রী ছিল। উমরের একের বেশি স্ত্রী ছিল। উসমানেরও একাধিক স্ত্রী ছিল। আলীর অনেক স্ত্রী ছিল। তারা কেউই কুরআন মানেননি! আর হাসান রাদিআল্লাহু আনহু, তিনি তো সব মিলিয়ে এই পৃথিবীর সত্তরজন নারীকে বিবাহ করেছেন (একই সাথে তাদের (রা.) চারের অধিক ছিল না)। তো এই মানুষরা, তারা কখনোই কুরআন বুঝলো না? কুরআনের আয়াত মেনে চললো না! কিভাবে তারা তাহলে এত ভালো মুসলিম হিসেবে গন্য হলো?

আবার কুরআন বলছে, وأن تجمعوا بين الأختين আল্লাহ একই পরিবারের দুই বোনকে একত্রে বিয়ে করতে নিষেধ করছেন। একসাথে দুই বোনকে স্ত্রী হিসেবে রাখা যাবে না বলছেন। যদি ইসলামে দুটি স্ত্রীর বৈধতা না-ই থাকে তাহলে আল্লাহ তায়ালা এভাবে শুধু শুধু কেন উল্লেখ করছেন? এগুলো বলার তো মানেই হয় না। যেহেতু আপনাদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী একটাই বিয়ে করা যাবে। আসলে কথা হচ্ছে, আপনারা অন্য কোথাও থেকে জ্ঞানের রসদ জমা করছেন, আর কুরআনকে ব্যবহার করছেন আপনাদের সেই ধারণা প্রমাণ করতে। কুরআন থেকে আপনারা নিচ্ছেন না, বরং অন্য কোনো উৎস থেকে নিচ্ছেন।

আপনাদের ধারণা সংগ্রহিত হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস ল এর নির্দিষ্ট কিছু বুঝ থেকে। হিউম্যান রাইটসের এসব নিয়ম-কানুন পড়ে ও দেখে আপনারা নিজেদেরকেক আধুনিক ও প্রগতিশীল মনে করেন। আর ভাবেন, কুরআন কিভাবে হিউম্যান রাইটস বিরোধী হতে পারে! আর তারপর আপনি জোর করে কুরআনের ব্যাখ্যা যাতে হিউম্যান রাইটসের আইনকে সাপোর্ট করে, তা প্রমাণ করতে লেগে যান। কিন্তু কুরআন তো এই উদ্দেশ্যে আসেনি। কুরআন হচ্ছে গাইডেন্স, এটি হিউম্যান রাইটস থেকে তথ্য নিয়ে চলে না। কুরআনের উৎস সৃষ্টিকর্তা, মানুষ নয়।.

কুরআন পড়ুন। এটি কোনো রহস্য নয়। খুবই পরিষ্কারভাবে কুরআন সবকিছুর বর্ণনা করে। একেবারে স্পষ্ট। কুরআন রাসুলকে বলছে, قل لازواجك তোমার স্ত্রীদের বলো।  অর্থ্যাৎ রাসুলের অবশ্যই একের  বেশি স্ত্রী আছে। স্পষ্ট। এছাড়া কুরআন অন্য মানুষদের, নবিদের স্ত্রীদের ব্যাপারে সর্বত্র উল্লেখ করছে। এটা কোনো গোপন কিছু নয় যে, কুরআন পুরুষদের একের অধিক স্ত্রী রাখতে অনুমতি দেয়। বরং এটি তো সাহাবিদের সুস্পষ্ট ইতিহাস। আপনি এমন সাহাবি হয়তো পাবেন না যার কেবল একটি স্ত্রী ছিল।

আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু বলতেন, ‘এই উম্মতের সর্বোত্তম পুরুষ তারাই যাদের একের অধিক স্ত্রী ছিল। বলুন আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস থেকে কুরআনের অধিক বুঝ ছিল কয়জনের? তিনি এভাবেই বলতেন।

আপনি বলতে পারেন যে, একের অধিক বিবাহ, এই ধারণাটি আমার পছন্দ নয়। অবশ্যই বলতে পারেন, সমস্যা নেই। কিন্তু এভাবে বলবেন না যে, এটি কুরআনে নেই। এটি অবশ্যই কুরআনে আছে। দেখুন, হয় এই কুরআন ঠিক যেমনভাবে আছে গ্রহন করুন অথবা কুরআন ছেড়ে দিন। কোরআন তো কাউকে জোর করছে না।  বলে দিন যে, আমরা কুরআন পছন্দ করি না। কারণ এটি একাধিক বিবাহের পক্ষে বলে। আমরা হিউম্যান রাইটস ল অনুসরণ করি। কোনো সমস্যা নেই। মানুষ তার নিজের পছন্দে স্বাধীন। যা ইচ্ছা মেনে চলতে পারে। কিন্তু বলবেন না যে, কুরআনের শিক্ষাই এমন। দয়া করে কুরআন বিকৃত করবেন না।