হাসান আজারকাত

হাসান আজারকাত

এই জেনারেশন বাবাখোর ও টিকটকার হবে না কেন?

হাসান আজারকাত

প্রকাশিত : জুন ০৯, ২০২১

এই জেনারেশন বাবাখোর ও টিকটকার হবে না কেন? ঢাকা শহরে সকলের জন্য উন্মুক্ত খেলার মাঠ বলতে আদৌ কোনো জিনিস আছে? পোলাপান খেলতে চাইলে টাকা দিয়া ক্লাবে ভর্তি হওয়া ছাড়া কোনো উপায় নাই। আগে আমরা খেলার মাঠ ফাঁকা না পাইলে মাঠের কাজ রাস্তায় চালায়া দিতাম৷ ক্রিকেট, ফুটবল দুইটাই কংক্রিটের রাস্তায় খেলছি। খেলতে গিয়া কত বাড়ির জানালার কাঁচ ভাঙছি, তার হিসাব নাই। এখন ঢাকা শহরের কয়টা গলি আছে যেখানে আরামসে খেলা যায়?

মাঠ আর গলি বাদ দিলাম। ঢাকা শহরে কয়টা খোলা জায়গা আছে যেখানে মানুষ শান্তিমতো ঘুরতে পারে? একটা দেশের রাজধানীর নাগরিকদের সবচেয়ে প্যাথেটিক ব্যাপার হইলো হাতিরঝিল, ডিয়াবাড়ি ও ৩০০ ফিটের মতো জায়গা যেগুলা কিনা রাস্তা সেগুলারে বিনোদন স্পট হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ডিয়াবাড়ি অলরেডি গোণ কেস। দালান ওঠায় যে যার ব্যক্তিগত জায়গায় বাউন্ডারি উঠায় রাখছে। ৩০০ ফিটও মোটামুটি সেই অবস্থায় চলে আসবে অতি শীঘ্রই।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানরে উন্মুক্ত স্থান ভাবলেও সেই উন্মুক্ততা অনেকাংশেই সংকুচিত হয়ে পড়ছে। সন্ধ্যার পর সিকিউরিটির বাহানা দিয়া মানুষজন বের করে দেয়া হয়। যেখানে গাছ কাইটা রেস্তোরাঁ বানানোর কথা সেগুলা হয়ে গেলে জনসাধারণের বিচরণও অনেকাংশে ওই খোয়াড়কেন্দ্রিক হয়ে যাবে। অলরেডি মাঠের আড্ডাগুলা চা দোকানকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। এখনকার দিনে বাসাবাড়িগুলার ছাদেও উঠা যায় না। আগে ছাদে নেট টানায়ে ক্রিকেট খেলতো নাইলে ঘুড়ি উড়াইতো৷ সেসব সিনারিও এখনকার দিনে অমাবস্যার চাঁদ৷

উপরে আলোচ্য সিচুয়েশনের ভিত্তিতে এই জেনারেশনের একটা ছেলে বা মেয়ের কি করার স্কোপ আছে রেস্টুরেন্ট কেন্দ্রিক আড্ডা, টিকটককেন্দ্রিক পুলপার্টি আর বাবা, কিটামিন, এলএসডিকেন্দ্রিক পিনিক পার্টি করা ব্যতীত? অথচ ছাদে আড্ডা দিতে না দেয়া, মাঠ ধ্বংস করা এ সমস্তকিছুই প্রশাসন নিশ্চিত করছে একটা মাত্র বাহানা শো কইরা। মাঠেঘাটে মাদকাসক্তের আড্ডা হয়, ছেলেপেলে গাঞ্জা টানে তাই মাঠ বন্ধ করো। ছাদে উঠলেও ছেলেপেলে মদ-গাঞ্জা খায় তাই ছাদে উঠাও বন্ধ করো।

এভাবেই তারা বিভিন্ন নিয়ম জারি কইরা ছেলেপেলেরে বদ্ধরুমের দিকে ঠেলে দিসে৷ এই মাঠ কমায়া, ছাদে উঠা বন্ধ কইরা ছেলেপেলেরে আরো মরণঘাতী নেশা ধরায়া দিছে। এসব কইরা পরিস্থিতি যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে তখন ইয়াবার সব দোষ মায়ানমার আর রোহিঙ্গাদের ঘাড়ে চাপায় দেয়, যেমনটা ফেন্সিডিলের দোষ ভারতের ঘাড়ে এককালে চাপানো হইতো। শতকোটি টাকায় ঢেলে সাজানো বিজিবি বর্ডারে কোনো বালটাও ফালায় না, বরং ফায়দা লুটে৷ পুলিশের ক্ষেত্রেও একই কেস। এই যে এসএসডি পাওয়া গেছে বইলা কয়েকটা ছেলেরে থানায় গ্রেফতার করলো এরাই কি এই ড্রাগসের মূল সাপ্লায়ার/ইম্পোর্টার? এর সাথে সরকারদলীয় কোনো বড় নেতার ধান্দা আছে কি নাই সেটা তলিয়ে দেখার মতো কোনো পেশাজীবীও এদেশে নাই।

কারণ আওয়ামী সরকারের সিস্টেমটা এম্নেই চলে। এই সিস্টেমে মাদক ব্যবসায়ী মুচলেকার বিনিময়ে পুলিশ প্রটেকশনে ব্যবসা করে আর কট খায় মাদক কিনে বাড়ি ফিরতে নেয়া সেবনকারী। মাদক ব্যবসা বাঙ্গুল্যান্ডের একমাত্র ব্যবসা যেখানে সেবনকারী বাদে সকলের জন্যই উইন-উইন সিচুয়েশন থাকে। একটা জেনারেশনরে সফলভাবে কামরাবন্দী করায় এই ব্যবসাটার বুমিং পিরিয়ড চলতেছে। সরকারের খেলার মাঠ ও উন্মুক্ত স্থান নাই করে ফেলার দ্বিতীয় বেনিফিশিয়ারি হইলো রেস্টুরেন্ট ও ফিটনেস সেন্টারের মালিকগণ৷ মরণঘাতী মাদকের সাথে আনহাইজেনিক ফুড কালচার ও ক্ষতিকারক সাপ্লিমেন্ট।

একটা দেশের ডায়গনোস্টিক সেন্টার ও চিকিৎসা ব্যবসা জমজমাট হইতে আর কি লাগে? অথচ আপনারে বাজেটের আগে সাংবাদিক ও আচোদা নাগরিকসমাজ সিগারেটের ক্ষতি বিষয়ক জ্ঞান দিয়া দফায় দফায় সরকারকে ট্যাক্সের নামে আপনার টাকা লুটে নেয়ার সুযোগ তৈরি করে দিবে। ধর্মের কারণ দর্শায়ে এখানে মদ লিগ্যাল করবে না। এক্ষেত্রে কারণটা যতটুকু ধর্মীয় তার চাইতেও বেশি অর্থনৈতিক। মদ লিগ্যাল করলে এত টাকার রাজস্ব পাবে না সরকার। গাঞ্জা খাওয়াটাও এখানে গুরুতর অপরাধ। দামে সস্তা হওয়ায় এইটার উপর ডিপেন্ডেন্সি বাড়লে ড্রাগসের সেল ডিক্লাইন করবে।

এই জায়গায় আমার আলাপটা অনেকের কাছে কন্ট্রাড্যাক্টরি লাগতে পারে। মদকে আমি ড্রাগ হিসেবে দেখি না আর গাঁজাকে তো নাই। মানবজাতির ইতিহাসে দুইটা জিনিসই হাজার বছরের উপ্রে সাস্টেইন করছে। সেটা সম্ভব হইছে এর সাইড এফেক্ট অতটা ক্ষতিকারক না বিধায়। আমি এই দুইটা জিনিস নেয়ার পক্ষেও না, বিপক্ষেও না। ব্যাপারটা পুরাটাই নির্ভর করে ব্যক্তির কন্ডিশনের উপর। বরং এই দুইটার ব্যাপারে আইন সিথিল করলে ইয়াবা, হিরোইন, ফেন্সিডিল, কিটামিন, এলএসডি এসব ড্রাগসের ব্যবহার কমিয়ে আনার একটা সম্ভাবনা থাকে। জাতিকে একদিনে, এক সপ্তায়, এক মাসে কিংবা একবছরে সম্পূর্ণ মাদকমুক্ত করা সম্ভব না।

বর্তমান রাষ্ট্রীয়, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থায় বহু মানুষ এসবের মাঝে দুদণ্ড শান্তি খোঁজে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীন এক জনপদে আইন জারি করে মানুষের রিল্যাক্স হওয়ার ঔষধ বন্ধ করে আদতে লাভের চাইতে ক্ষতিই বেশি। একটা বন্ধ করতে করতে আরেকটি অল্টারনেটিভ দাঁড়ায় যাবে যা হয়তো আগেরটার চাইতেও বেশি ক্ষতিকারক। পর্যাপ্ত উন্মুক্ত বিনোদন কেন্দ্র, খেলার মাঠ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা এসব নিশ্চিত না করা পর্যন্ত টিকটকার আর মাদক সেবনকারীদের নিয়ে ঠাট্টা টিটকারি কতটা সমীচীন তা ভেবে দেখা উচিত সকলের।