ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

করোনা ভাইরাস এসেছে মানুষকে শিক্ষা দিতে: প্রধানমন্ত্রী

ছাড়পত্র ডেস্ক

প্রকাশিত : নভেম্বর ২০, ২০২০

করোনা ভাইরাস মানুষকে শিক্ষা দিতে এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, “সরকার এক হাজার কোটি টাকা দিয়ে আগাম করোনার ভ্যাকসিন অর্ডার করেছে। যখনি এটা কার্যকর হবে, তখনি এটা যেন বাংলাদেশের মানুষ পায় আমরা সেই ব্যবস্থা নিয়েছি। একটা সময় দেখা যেত, একটু হাঁচি দিলেও চিকিৎসার জন্য বিদেশ চলে যেত। কিন্তু করোনা বুঝিয়ে দিয়ে গেল, টাকা-পয়সা ও ধন-সম্পদের কোনো মূল্য নেই। মনে হয়, করোনা ভাইরাস এসেছে মানুষকে শিক্ষা দিতে। আর এ ভাইরাস আমাদেরকে শিখিয়েছে, দেশেই চিকিৎসা সেবা নেয়া সম্ভব।”

তিনি আরো বলেন, “করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। লোকজন সামনে এলেই মাস্ক পরতে হবে। করোনা ভাইরাস পরবর্তী সময়ে যেন খাদ্যসংকট তৈরি না হয়, এজন্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। করোনার ভ্যাকসিনটা এখন আবিষ্কার হচ্ছে। সেটা নিয়ে পরীক্ষা হচ্ছে, গবেষণাও হচ্ছে। আমরা কিন্তু আগাম প্রায় এক হাজার কোটি টাকা দিয়ে ভ্যাকসিন নিতে বুক্‌ড করে ফেলেছি। যখনি এটা কার্যকর হবে, তখনি এটা বাংলাদেশের মানুষ যেন পায়, আমরা সেই ব্যবস্থা নিয়েছি এবং সেটা চলমান থাকবে।”

শেখ হাসিনা বলেন, “বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ যেখানে করোনা সামলাতে হিমশিম খেয়েছে, সেখানে আমরা আমাদের অর্থনৈতিক কার্যক্রম একদিনের জন্যও থাকতে দেইনি। অনেক উন্নত দেশের প্রবৃদ্ধি যেখানে মাইনাস গ্রেডে, সেখানে আমরা প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য হয়তো ধরে রাখতে পারিনি। কিন্তু পাঁচের ওপরে আমাদের প্রবৃদ্ধি থাকবে বলে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “সমালোচনা হলে ভালো, এতে সরকারের কার্যক্রমের ভালোমন্দ আমরা বুঝতে পারি। কিন্তু অপপ্রচার কেন? সমালোচনায় আমাদের আপত্তি নেই, ভালো কাজ করলে সেটা একটু স্বীকার করা উচিত। মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে শুধু দেশে নয়, বিদেশেও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে বিএনপি। বিভিন্ন উপ-নির্বাচনে তারা প্রার্থী দেয়। নির্বাচনের আগে খুব হৈ-চৈ করে। কিন্তু নির্বাচনের দিন দুপুরে পরাজয়ের ভয়ে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয়। মূলত নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই পরিকল্পনা অনুযায়ী বিএনপি এ রকম করে।”

শেখ হাসিনা বলেন, “অনেকে যা ইচ্ছা লিখতে পারেন, এতে হয়তো পত্রিকার কাটতি বাড়বে। নিজেদের একটু আঁতেল হিসাবে ভালো স্মার্ট হবেন, অথবা আমাদের বিরুদ্ধে কিছু বলে সংগঠনের জন্য ভালো ফান্ড আনতে পারবেন। হয়তো এনজিও’র জন্য বিদেশি ফান্ড আসবে। কিন্তু এই ফান্ড কোথায় যায়? ভবিষ্যতে এটার হিসাব নেয়া শুরু করবো। আর যারা বলেন, দেশে গণতন্ত্র নেই, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, জিয়াউর রহমান যখন হত্যা-ক্যু করে ক্ষমতা দখল করেছিল, ’৯৬ সালে দ্বিতীয়বার যখন খালেদা জিয়া ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এলো, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট মা-বোনদের ওপর অমানবিক নির্যাতন করলো, তখন কি গণতন্ত্র ছিল?”

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, “একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটে। তাই তৃণমূল থেকে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। তৃণমূল পর্যন্ত কমিটি করে ফেলতে হবে। সবাইকে মনে রাখতে হবে, তাৎক্ষণিকভাবে কিছু পাওয়াটাই বড় নয়, বরং জনগণকে কি দিতে পারলাম সেটাই বড়। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের এ বিষয়টি অনুধাবন করতে হবে।”

তিনি বলেন, “চিরদিন কেউ বেঁচে থাকে না, আমিও থাকবো না। কারণ আমারও তো বয়স হয়ে গেছে। ৭৪ বছর পার হয়ে গেছে। এটা মনে রাখতে হবে। এই বয়স অনেক বেশি। যদিও বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু আমরা বাড়িয়ে ৭২ বছরে এনেছি। তারপরও তার থেকে বেশিই আছে। কিন্তু তারপরও সব ধরনের পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। কারণ জন্মালে তো মরতেই হবে, এটা ঠিক।”

দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ একটা আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করে। সংগঠনগুলোকেও এটা চিন্তা করতে হবে, আমাদের একটা দায়িত্ব আছে এদেশের মানুষের প্রতি। আমাদের আওয়ামী লীগ যেমন বাংলাদেশের জনগণের জন্য দায়িত্বশীল তেমনি আমাদের ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগসহ সবাইকে আমি বলবো, সকলেরই কিন্তু নিজ নিজ জায়গায় নিজ নিজ এলাকাকেন্দ্রিক দেখভালের দায়িত্ব আছে। সেই দায়িত্বটাও পালন করতে হবে এবং সংগঠন আর জাতির পিতার আদর্শ ও চেতনাটাকে ধারণ করতে হবে।”

শেখ হাসিনা আরো বলেন, “পিতা-মাতা ও ভাইসহ সব হারানোর শোকব্যথা নিয়েও আমরা কাজ করে যাচ্ছি বাংলাদেশের মানুষের জন্য। নিজের কিছু না, বাংলাদেশের মানুষের জন্য। মানুষকে আমার বাবা ভালোবেসে জীবন দিয়ে গেছেন। সেই মানুষগুলো যেন ভালো থাকে, আমরা সেটাই চাই। জাতির পিতার স্বপ্নটা পূরণ করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। কাজেই সবাইকে সেই আদর্শ নিয়েই চলতে হবে। সবাইকে সেই আকাঙ্ক্ষাটাই পূরণ করতে হবে। সেজন্য সংগঠনকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে।”

বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় উপস্থিত ছিলেন, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মির্জা আজম, এসএম কামাল হোসেন, প্রচার সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া,  ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, অর্থ সম্পাদক ওয়াসিকা আয়েশা খান, আইন বিষয়ক সম্পাদক নজিবুল্লাহ হীরু, স্বাস্থ্য সম্পাদক রোকেয়া সুলতানা, আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ।