
কী করে বুঝবেন আপনি কাউকে ভালোবাসেন
ডা. অপূর্ব চৌধুরীপ্রকাশিত : মে ০৭, ২০২১
ভালোবাসা দুরন্ত একটি ঘোড়া। কখন ঘোড়াটি চলতে শুরু করে, বোঝা যায় না। কোথায় যাচ্ছে, তাও বোঝা যায় না। তারপরেও মানুষ ভালোবাসার ফাঁদে পড়ে। একটু বেশি করে বললে মানুষ পড়তে চায়। ভালোবাসার শুরু পরিবারের বন্ধন থেকে। বড় হতে হতেই এটি পাওয়ার জন্যে মন-মস্তিষ্ক উম্মুক্ত হয়ে থাকে। চাইলেই এটি চাওয়া থেকে যেমন আমরা বের হতে পারি না, তেমনি এটির ফাঁদে পড়ে বেরিয়ে যেতে একই মন আবার ছুটতে থাকে বিপরীত মুখে।
এত কিছুর পরেও মানুষ ভালোবাসতে চায়, ভালোবাসা পেতে চায় । কিন্তু কী করে বুঝবেন, আপনি সত্যিই কাউকে ভালোবাসেন? একেকজনের পরিস্থিতির ধরন একেক রকম হলেও আপাতভাবে কিছু কমন বৈশিষ্ট্য থাকে, যা দেখে বুঝতে পারবেন আপনি ভালোবাসার জালে পড়ে গেছেন নাকি ভালবাসা আপনাকে জালে ফেলেছে!
১. ভালোবাসার কোনো কারণ নেই, ভালোবাসার কোনো কারণ থাকতে নেই। ভালোবাসার কারণ খুঁজতে নেই। ভালোবাসেন, এটাই প্রধান এবং একমাত্র কারণ। কেন ভালোবাসেন, কারণ জেনে গেলে গেলে ওটা ভালোবাসা নয়। কারণ জেনে গেলে হয় মানুষটিকে পছন্দ করেন অথবা মানুষটির সাথে সময়টি সাময়িক ভোগ করেন।
২. ভালোবাসার মানুষের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগে। সেই দেখায় মানুষটির ভালো মন্দ কিছু খোঁজা হয় না। সে চোখে নিজেকে দেখা হয় বারবার। ভালোবাসার মানুষটির চোখের ভেতর নিজেকে বসিয়ে দেখতে ভালো লাগে তখন। এমনকি মানুষটি না তাকালেও তাকে দেখতে ইচ্ছে করে মন।
৩. ভালোবাসা একধরনের অ্যাডভেঞ্চার। অ্যাডভেঞ্চার মনে দুটো জিনিস দেয়, কৌতূহল ও থ্রিল। কাউকে ভালোবাসলে মনে হয় এমন থ্রিলের মধ্যে দিয়ে যাওয়া। একটা অনিশ্চয়তার দোলাচল থাকে।
৪. কাউকে ভালোবাসলে মানুষটির দৈনন্দিন রুটিন বদলে যায়। যে কাজ আগে বোরিং লাগতো, সে কাজও সে অনায়াসে করে তখন। বরং মানুষটির সান্নিধ্য এবং সান্নিধ্যের অপেক্ষা, দুটোই তাকে আনন্দ দেয়। বিনিময়ে নিজের রুটিন বদলে গেলেও কেয়ার করে না। কারণ মস্তিষ্ক তাকে সিগন্যাল দেয়, তুমি অনেক ভালো আছো।
৫. ভালোবাসলে মানুষটিকে বাইরে কোনো বিচার না করলেও মনে মনে তার সম্পর্কে আরও বেশি জানতে কৌতূহল হয়ে ওঠে।
৬. ভালোবাসার মানুষটির সবকিছু ভালো লাগতে থাকে। তার সবকিছু আকর্ষণীয় মনে হয়। ময়লা কাপড় পরা যাকে দেখলে মুখে ভেংচি কাটতো, ভালোবাসার মানুষের সেই ময়লা কাপড়টাও তখন সুন্দর মনে হয়। এক সপ্তাহ সেইভ করে না এলে আগে বলতো দেবদাস, ভালোবাসায় পড়লে বলে, তোমাকে রাজকুমার লাগছে। যা আগে ছিল বিরূপ, ভালোবাসায় সেটা রূপের মনে হয়।
৭. ভালোবাসলে মানুষটির কষ্ট নিজেকেও কষ্ট দেয়, মানুষটির ভালো থাকা মনে মনে সর্বদা কামনা করে। তার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, জেলাস, ইনফেরিওরিটি কোনোটাই আসে না মনে। তার ভালো থাকায় মন আত্মসমর্পণ করে।
৮. ভালোবাসায় পড়লে কারো সান্নিধ্যের এক মাস মনে হয় এক ঘণ্টা। সময় দ্রুত চলে যায়।
৯. ভালেবাসায় পড়লে মানুষটির সাথে দীর্ঘ সময় কাটানোর প্ল্যানের চেয়ে সামনে কোনদিন দেখা হবে, সেদিন কি করবে, কি পরবে, কি খাবে এমন সব ইমিডিয়েট পরিকল্পনা মাথায় ঘোরে। বেশি দূরের পরিকল্পনা ভালোবাসা করে না। ভালোবাসা মুহূর্তকে ধরে, মুহূর্তকে উপভোগ করতে চায়।
১০. ভালোবাসার কোনো ভুল নেই। ভালোবাসার মানুষের সবকিছুই সঠিক মনে হয়। ভালোবাসায় রেশনাল বা কগনিটিভ ব্রেইন পার্ট থেমে যায়। ইমোশনাল ব্রেইনের বিশাল অংশ তখন মস্তিষ্ককে চালায়।
১১. ভালোবাসায় পড়লে নিজের এবং আশেপাশের মানুষের প্রতি নজর এবং যত্ন কমে যায়। অন্যদের আশেপাশে থেকেও নিজে আড়াল হয়ে যায়।
১২. ভালোবাসায় পড়লে ভালোবাসার মানুষকে স্পর্শ করতে ইচ্ছে করে, প্রবল ভাবে আদর করতে ইচ্ছে করে। আদরের ভাবনাটুকুও তাকে সারাদিনের আনন্দে ডুবিয়ে রাখে। কেন আদর করতে ইচ্ছে করছে, সে জানে না। ইচ্ছেটা থেমে থেমে আসে।
১৩. ভালোবাসায় মুড সবসময় বুস্ট আপ থাকে। চিন্তায় নেগেটিভিটি কমে যায়। সবকিছুর মধ্যে পজিটিভিটি দেখতে পায়, কিন্তু মস্তিষ্ক সে পসিটিভিটি এনালাইসিস করতে চায় না।
১৪. ভালোবাসা মানুষটিকে সিঙ্গেল মাইন্ডেড করে সত্য। সাথে কাউকে ভালবাসলে চারপাশের অন্যদের প্রতি মায়া দরদ বেড়ে যায়।
ভালোবাসায় পড়লে হঠাৎ মনে হয়, জীবনের কোথাও যেন একটি অর্থবহ বিন্দু খুঁজে পায়, যদিও জানে না বিন্দুটি কি। একটি পূর্ণতা আঁকড়ে ধরে। একটি বিন্দুতে নিজেকে দেখতে পায়। আর এই বিন্দুটির নাম ভালোবাসা। এবং আপনি কাউকে ভালোবাসেন।