অলঙ্করণ: দীপাঞ্জন সরকার

অলঙ্করণ: দীপাঞ্জন সরকার

গাজী কামরুল হাসানের গল্প ‘ক্যাকটাসের কাঁটা’

পর্ব ১

প্রকাশিত : অক্টোবর ০৫, ২০২১

বিবিএ শেষ করার দুই মাসের মাঝে শাহানা একটা প্রাইভেট ব্যাংকে ঢুকে পড়েছিল। পাঁচ বছর হয়ে গেছে তার এই চাকরিটায়। প্রথম দুই বছর কাটে ধানমন্ডি ব্রাঞ্চে। আর পরের তিন বছর বাংলামটরে। দুই জায়গায়ই শাহানার অভিজ্ঞতা মোটামুটি একরকম। ওই প্রথম দুই-একটা দিন...। মানুষ এখন নিজের জীবন নিয়ে অনেক ব্যস্ত। অন্যদের কথা ভাবার সময় কারো তেমন একটা নেই! বাকি সবার কাছে শাহানার চাওয়াও এতটুকু।

এবার তার পোস্টিং উত্তরায়। রাজউক কলেজের উল্টাদিকে ব্যাঙ্কের নতুন ব্রাঞ্চে শাহানা সিনিয়র অফিসার হিসাবে এসেছে। কাজে যোগ দেয়ার আগে বাসা বদলের ঝামেলাও শেষ। বাসা না বলে আসলে হোস্টেলই বলা উচিত। হাতিরপুলের একটা সিঙ্গেল রুম থেকে উত্তরার আরেকটা সিঙ্গেল রুম। কুয়েত মৈত্রী হলের পর হাতিরপুলের একটা হোস্টেল। আর এখন উত্তরার আরেকটা হোস্টেল। জীবনের তিনভাগের একভাগ সময় তার এভাবে কেটে গেছে। দেখা যাক সামনে কী হয়! হয়তো আরেকটা হোস্টেল, নাহয় নিজের ছোট একটা ফ্লাট... অথবা নতুন কোনো একটা দেশ...

সাত নম্বর সেক্টরে ছয়তলা একটা বিল্ডিংয়ের পুরোটা নিয়ে তার নতুন হোস্টেল। নিচে ডাইনিং হল, অফিস আর গার্ডদের রুম ছাড়াও কয়েকটা গেস্টরুম আছে। আর ওপরের পনেরোটা আপার্টমেন্টে মেয়েরা থাকে। হোস্টেলের অল্প কয়েকজন বাদে বেশির ভাগ মেয়ে লেখাপড়া করে। শাহানার আপার্টমেন্টটায় সে ছাড়া আরও তিন মেয়ে থাকে। বয়সে শাহানার থেকে অনেকটা ছোট। এদের একজন মাত্র কয়েকমাস হলো চাকরিতে ঢুকেছে। তার মতো একটা প্রাইভেট ব্যাংকে। বাকি দুজন কাছের একটা মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারিতে পড়ছে।

নতুন হোস্টেলটায় থাকতে খারাপ লাগছে না শাহানার। ছুটির মাসে ফ্লাটের বাকি সবার সাথে খানিকটা কথাবার্তা হয়েছে। এর থেকে বেশি সখ্য তার কারও সাথে হয় না। চারদিকে একটা উঁচু দেয়াল তুলে নিজের মধ্যে থাকতে শাহানা বেশি স্বাছন্দ্য বোধ করে। বাঁধাধরা চাকরি আর অবসরে বইয়ের মধ্যে গুঁজে থাকা, এই তার জীবন। মানুষের প্রায়সব সম্পর্ককে শাহানার খুব হালকা মনে হয়। বাবা-মা, ভাইবোন, বন্ধু, সহকর্মী; সব সম্পর্ককে যেন খুব সহজে ছোট একটা জায়গার মাঝে বেঁধে ফেলা যায়। চলবে