চীনে পোকার বাংলাদেশ ভ্রমণ

তানজিনা আক্তার দিপা

প্রকাশিত : মে ১৬, ২০২১

জন্মদিনের সব গিফট খোলা শেষ। তারপরও মন খারাপ নুরার। গত বছরের মতো এবারের জন্মদিনেও কেউ আসতে পারেনি। কীভাবে আসবে? আবার যে লকডাউন। করোনা, লকডাউন, স্বাস্থ্যবিধি এগুলো আর ভালো লাগে না তার। সবাই আসবে, হইহুল্লোর করবে, কেক কাটবে, উপহার দিবে তবেই তো জন্মদিনের মজা। নুরার পরিচিত বন্ধু আর আত্মীয়রা সবাই উপহার পাঠিয়েছে, বাবাও খুব সুন্দর কেক এনেছে, কিন্তু তারপরও সব পানসে লাগছে নুরার।

গত বছরও তার জন্মদিন ছিল লকডাউনে। এবার জন্মদিন নিয়ে কত স্বপ্ন দেখেছিল নুরা। শুধু কি জন্মদিন, সে শুনেছিল স্কুলও খুলে দিবে। স্কুল চত্বরে বন্ধুদের হাত ধরে ঘুরে বেড়ানো, ছুটোছুটি, টিফিন ভাগ করে খাওয়া, শ্রেণিকক্ষ, শিক্ষক, দারওয়ান চাচা, দপ্তরী চাচা, ক্যান্টিন সব, সব মিস করে নুরা।

ইদানীং প্রায়ই নুরার খুব মন খারাপ থাকে। এতো এতো খেলনাও তার ভালো লাগে না। বারান্দা দিয়ে আকাশ দেখে সে। মাঝে মঝে তার খুব কান্না পায়। কবে দেশের অসুখ সারবে? হঠাৎ টেবিলের উপর একটা নীল মোড়কের গিফট চোখে পড়ল নুরার। গিফটা হাতে নিয়ে দেখলো তাতে লেখা “পিনু খালা”। আনন্দে নুরার চোখ ঝকঝক করতে থাকলো। এ যে তার প্রিয় পাগলী খালামনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলায় বিভাগে পড়ে খালামনি। নুরাকে প্রায়ই খুব সুন্দর সুন্দর উপহার এনে দেয়।

প্রতিবারই জন্মদিনে পিনু খালামনি গিফট দেয় এমনটা নয়। কারণ খালামনি খুব মন ভোলা। তবে যখনই কিছু দেয় সেটা নুরার খুব ভালো লাগে। সে জানতো নিশ্চয়ই খালামনি প্রতিবারের মতো এবারও সুন্দর কিছু পাঠিয়েছে। অধীর আগ্রহ নিয়ে মোড়ক খুললো নুরা। দেখলো এটা একটা সুন্দর রঙিন বই। বইটা দেখতে যত সুন্দর তার চেয়ে সুন্দর বইটার নাম। “চীনে পোকার বাংলাদেশ ভ্রমণ”। কোন বইয়ের নাম কি এতো সুন্দর হতে পারে? নামটা শুনেই পড়তে ইচ্ছে করে। অপেক্ষা করতে পারবে না নুরা। পড়তে শুরু করে দিল।

চীন দেশে এক ধরনের পোকা আছে। নাম চীনে পোকা। চীনে পোকা দেখতে অনেকটা কেঁচোর মতো। তবে ওদের চার জোড়া পা আছে। চীন দেশের ফসলের মাঠেই এ পোকা বেশি পাওয়া যায়। কেঁচোর মতো চীনে পোকা মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। এমনই একটা বাচ্চা চীনে পোকা একদিন তার পরিবারের সকলের সাথে ফসলের মাঠে খাবারের সন্ধানে গিয়েছিল। সে আনন্দে হুটুপুটি লুটুপুটি খাচ্ছিল।

এমন সময় জমির মালিক তার কিছু কর্মচারী নিয়ে মাঠে এলো। মালিকটি চিৎকার করে হুকুম দিল,“তাড়াতাড়ি হাত চালাও। আজকের মধ্যে সকল ফসল প্যাকেটিং হওয়া চাই।”

চীনে পোকার পরিবারটি তাড়তিাড়ি পালাতে লাগলো। কিন্তু বাচ্চা চীনে পোকাটি পিছনে পরে গেল। ফসলের সাথেপ্যাকেট হয়ে গেল চীনে পোকা। প্যাকেটের ভিতর সে মা-বাবা, ভাই-বোনদের জন্য কাঁদতে লাগলো। আর তাকে খুঁজে না পেয়ে তার পরিবারের সবাই তাকে চারিদিকে খুঁজতে লাগলো।

চীনে পোকার প্যাকেট শুধু কয়েকবার উঠানো নামানো হলো। আর কিছুই বুঝা গেল না। তারপর একসময় প্যাকেট খোলা হলো। চীনে পোকা খুব ধীরে ধীরে প্যাকেট থেকে নামলো। এটা কোন দেশ? এখানের সবই তার অচেনা। সে খুব কাঁদতে থাকলো। কাঁদতে কাঁদতে এক সময় সে এক গাছ তলায় ঘুমিয়ে পড়লো।

চীনে পোকা জানে না সে প্যাকেটে করে জাহাজে চড়ে চলে এসেছে বাংলাদেশে। তারপর একটা পণ্যবাহী ট্রাকে চড়ে চলে এসেছে চট্টগ্রামে, সেখান থেকে তার প্যাকেট কোন লরীতে করে কর্ণফুলী নদীতে চলে এসেছে। এগুলো সবই তার অজানা। সে স্বপ্নে দেখলো, সাদা পোশাকের একটা পরী তাকে বলছে,
তুমি মায়ের কাছে যেতে চাও?
হ্যাঁ, খুব চাই। নিয়ে যাও না আমাকে মায়ের কাছে।
ঠিক আছে। গাছের পেছনে যে নদী আছে সেখানে চলে আসো। তোমাকে মায়ের কাছে নিয়ে যাব।

চীনে পোকার ঘুম ভেঙে গেল। সে এদিক সেদিক পরীকে খুঁজতে লাগলো। মাকে খুঁজতে লাগলো। তারপর ছোট ছোট পায়ে সত্যি চলে এলো একটা নদীর ধারে। ইস্ কী সুন্দর এ নদী! এরকম নদী তো আমার দেশে নেই। মুগ্ধ চোখে সে চারপাশ দেখতে লাগলো। তার চোখ জুরিয়ে গেল। এতো সুন্দর নদী দেখে সে তার পরিবারের কথা কখন যে ভুলে গেল সে নিজেও জানে না। চীনে পোকা এবার একটা নৌকাতে গিয়ে বসলো। নৌকায় একটি বাচ্চার হাত থেকে এক টুকরো রুটি পড়ে গেলে সেটাই সে খেয়ে নিল। নৌকা থেকে এই শান্ত নদীর চারপাশের গাছপালা আর উপরে নীল আকাশ দেখতে লাগলো সে। কি সুন্দর এ দেশ!

তারপর চীনে পোকা কিছু ছেলেমেয়েকে খেয়াল করলো। কত মজাই করছে ওরা। সে তাদেরই একজনের ব্যাগে চেপে বসলো। এই ছেলেমেয়েগুলো বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে চীনে পোকাকে নিয়ে এলো কাপ্তাই হ্রদে। চারপাশ সবুজ গাছপালায় ঘেরা তার মাঝে এই হ্রদ। এতো সুন্দর কিছু চীনে পোকা কোনদিন দেখেনি। তারপর ছেলেমেয়ে গুলো গেল কাপ্তাই ফরেস্টে। গাছগাছালির ছায়ায় ঘেরা এ বনে হরিণ, শূকর, বন মোরগ, বানর, হনুমান আর বুনো হাতি দেখে ছেলেমেয়ে গুলোর সাথে চীনে পোকাও পুলকিত হলো। ছেলেমেয়ে গুলো সুন্দর কিছু দেখেই একটা কথা বলছিল। তাদেও মতো চীনের পোকারও বলতে ইচ্ছে করছিল ওয়াও।

তারপর ব্যাগ থেকে নেমে চীনে পোকা তার ছোট ছোট পায়ে এগুতে লাগলো। এ দেশটিকে সে আরও দেখতে চায়। কি মায়া আছে এ দেশে! এ দেশের সৌন্দর্য চীনে পোকাকে বার বার টানছে। তারপর কখনও ট্রাকে করে, কখনও বাসে, কখনও ছেলেমেয়েদের দলে ভিড়ে, কখনও নৌকায় বাংলাদেশ ভ্রমণ করলো চীনে পোকা।

স্বচ্ছ বালুকণায় ঢাকা বিস্তৃত প্রান্তর, সামনে নীল জলরাশি, শামুক আর ঝিনুকের খোলস, লাল কাঁকড়া, সরু লম্বা সবুজ পাতার এক বিশেষ ধরনের লম্বা গাছ। চীনে পোকা জানে না সে চলে এসেছে বাংলাদেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে। যার আরেক নাম নারিকেলজিঞ্জিরা আর এই বিশেষ ধরনের গাছ হলো নারিকেল গাছ।

এত বড় সাগর সে কখনো দেখেনি। এত রকমের ঢেউ, ছোট বড় মাঝারি। এত সুন্দর তার সুর লহরী। আনন্দে প্রাণ নেচে উঠে। সামনের বালুরাশিতে বাধা সাম্পান। আর অনেক দূরে দেখা যায় ছোট বড় কতো জাহাজ। চীনে পোকা অবাক হয়ে কাঁকড়া গুলোর ছুটোছুটি আর মাটির গর্তে ঢুকে লুকানো দেখলো। দুলে দুলে উঠলো তার প্রাণ। এটাই হলো বাংলাদেশে অবস্থিত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার।

তারপর চলে এলো কুতুবদিয়া দ্বীপ। একে একে গেল বান্দরবন, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি। এসব অঞ্চলগুলোর পাহাড়ি সৌন্দর্য, গাছপালা, ঝোপঝাড়, বনবনালি, পাখির কলকাকলি, আঁকাবাঁকা সর্পিল পথ মন কেড়ে নেয়। এতো সুন্দর কোন দেশ হতে পারে!

স্বল্প উচু ঢাল। কোথাও উচু, কোথাও নিচু এ ঢাল গুলোতে ছোট সবুজ এক ধরনের গাছের গালিচা। যত দূর চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। তবে এ বিশেষ ধরনের গাছের মাঝে মাঝে ছড়ানো ছিটানো কিছু বড় গাছও আছে। তবে দেখতে সবচেয়ে ভালো লাগে কিছু মেয়েরা যখন ছোট গাছ গুলোর ডগার পাতা ছিড়ে মাথা থেকে পিঠে ঝুলিয়ে রাখা ঝুড়িতে রাখে। এটাই হলো সিলেটের মালনীছড়ার চা বাগান। উপজাতি মেয়েরা চা গাছের দুটি পাতা একটি কুড়ি তুলছে।

চীনে পোকা খুবই আশ্চর্য হলো একটা বনে গিয়ে। এটা আবার কি ধরনের বন? একটা নৌকায় ছিল কিছু ছেলেমেয়ে মাঝি আর চীনে পোকা। এ রকম কি কোন বন হতে পারে, যে বনে ঘুরতে হয় নৌকা দিয়ে? গাছ গুলো ডুবে আছে পানিতে। বনের মাঝে জলরাশিতে চলছে নৌকা। স্নিগ্ধ জলরাশিতে আলো-আঁধারির খেলা। নদীর পানিতে গাছের ছায়া। ডালপালা ছাতার মতো বিস্তার করে নদীকে ছায়া দিচ্ছে। এও কি হতে পারে?হ্যাঁ, এটাই হলো “সিলেটের সুন্দরবন” কিংবা “বাংলাদেশের আমাজান” খ্যাত রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট। রেইন ফরেস্ট নামে পরিচিত হলেও বিশ্বের স্বাদুপানির বড় সোয়াম্প ফরেস্ট কিন্তু এটাই।

ছোট বড় অসংখ্য পাথর ভিজিয়ে দিয়ে চলেছে ঠাণ্ডা স্বচ্ছ জলরাশি। দূরে পাহাড়ের সারি আকাশ ছুঁই ছুঁই। শুভ্র মেঘমালা ভেলার মতো ভেসে বেড়ায়। আর সবুজ দিগন্তে ভোরের কুয়াশা। সব মিলিয়ে অপরূপ সৌন্দর্য। হ্যাঁ, সিলেটের বিছানাকান্দিতেও গিয়েছিল চীনে পোকা। তারপর একে একে প্রকৃতি কন্যা জাফলং, শ্রীমঙ্গল,তামাবিল, ভোলাগঞ্জ, লোভাছড়া, সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা, পান্থুমাই ঝর্ণা দেখে এসেছে চীনে পোকা। সিলেটে ছোট বড় অনেক পাহাড়, প্রাকৃতিক ঝর্ণা,বন আররাস্তার দুপাশে সবুজের সমাহার।

জায়গাটা খুব সুন্দর। জলরাশি যেখান থেকে শুরু হয়েছে সেখানে পানির নিচে অসংখ্য জলজ উদ্ভিদ। নৌকাই হলো এ অঞ্চলের একমাত্র যান। নদীর দুপাশে হিজলবন, গ্রাম বাংলার অপরূপ সৌন্দর্য, জেলেদের মাছ ধরা, ছোট-বড় নৌকা, চড়ে বেড়ানো গরুর পাল, ঝাঁক ঝাঁক পাখি আর হাঁসের পাল। সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওড়ে মনোরম সৌন্দর্য দেখে নাচতে শুরু করলো চীনে পোকা।

সবুজ ধানখেত, ফুল, পাখির এক জলরাশি। রঙিন মাছরাঙা, সাদা বক, পানকৌড়ি, শালিক, ডাহুক, ফিঙে, দোয়েল আর কতো রকমের নাম না জানা পাখি। সুতিজাল, ভেশাল, খড়া জাল, দোয়ার, চাঁই, বড়শিসহ বিভিন্ন্ মাছ ধরার যন্ত্র নিয়ে মেতে আছে শিশু-কিশোর, বৃদ্ধসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ। কামিনী, কদম, শিউলি, হাসনাহেনা, শাপলা, পদ্ম, কচুরিপানা আরো নানা ধরনের বুনো ফুল আর জলজ উদ্ভিদ। ধানের আইলেও দেখা মিলবে হরেক রকম ফুল। হঠাৎ  মেঘ ডেকে শুরু হয়ে গেল ঝিরঝিরে বৃষ্টি, তারপর মুষুলধারে। চারপাশে জলরাশি আর মাঝখানেনৌকায় বসে বৃষ্টি দেখা।এতো রূপ এ দেশের। চাঁদনী রাতে জোনাই পোকা আর মাঝি মাল্লাদের গান। নাটোরের চলনবিল, অপরূপ তার রূপ।

রাতারগুলোর মতো আরেকটি জলরাশিতে গিয়েছিল চীনে পোকা। এঁকেবেঁকে সাপের মতো চলছে তো চলছে এই জলরাশি। যেন শেষ নেই তার! তবে রাতারগুলের সাথে এখানের পার্থক্য হলো, গাছ গুলোর গুড়ি পানিতে হলেও চাদোয়ার মতো ঢেকে রাখেনি পানিকে। স্বচ্ছ পানি নির্বিঘ্নে চলছে দুপাশে গাছের সারিকে ফেলে রেখে। মাঝে মাঝে দেখা যাচ্ছে হরিণ, বানর। দূর থেকে ভেসে আসছে পাখির ডাক। এটাই পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন। এখানেই রয়েছে পৃথিবীতে বিরল আশ্চর্য সুন্দর বাঘ “রয়েল বেঙ্গল টাইগার”।

আগেরবারের মতো এবারও চীনে পোকা বিশাল সাগর দেখলো। সে তো ভেসেই যাবে এর ঢেউয়ের সাথে। পড়ন্ত বিকেল শেষে একটা বড় লাল রক্তিম টিপ আকাশজুড়ে রক্তিমাভা ছড়িয়ে সাগরের ওপর ভাসতে থাকলো।আস্তে আস্তে সেই টিপ নিচে নেমে সাগরের সাথে বিলীন হয়ে গেল। পৃথিবী সবচেয়ে সুন্দর কিছু দেখলো চীনে পোকা। চারপাশ অন্ধকারে ছেয়ে গেল। কিন্তু টিপটার কোন দেখা নেই। টিপটা খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত হয়ে এক জায়গায় ঘুমিয়ে পড়লো চীনে পোকা। ভোরের দিকে আবার সে টিপটাকে দেখে অবাক হলো। আরে, এইতো সেই টিপ! যে টিপটা সাগরটা গিলে ফেলেছিল, সে টিপটাই সাগরের বুক চিরে আকাশ রঙিন করে দিয়ে বেরিয়ে আসছে। টিপটা খুঁজে পেয়ে আনন্দে নাচতে থাকলো চীনে পোকা। চীনে পোকা জানে না, সে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে সূর্যাস্ত আর সূর্যোদয় দেখেছে।

একদিন বড় একটা জাহাজে চেপে বসলো সে। চাঁদনী রাতে মুক্তার মতো লাগছে সাগরের ঢেউ। জাহাজের ডেকে দুপায়ে ভর দিয়ে খাড়া হয়ে দাড়াঁলো চীনে পোকা। যতটা দুঃখ নিয়ে এ দেশে এসেছিল চীনে পোকা তার চেয়ে হাজার গুণ বেশি আনন্দ নিয়ে সে যে ফিরে চলেছে, এটা চীনে পোকা জানে না। সে ভবলো, কি নেই এ দেশে! পাহাড়, ঝর্ণা, বনবনালি, ফুল, পাখির এদেশ। এতা সবুজ কি কোন দেশে থাকতে পারে, কতো নদী বয়ে চলে এদেশে, এতো সুন্দর বৃষ্টি কি কোন দেশে হয়! এতো নীশ আকাশ, শুভ্র মেঘমালা তো অন্য কোন দেশে নেই। এদেশের মানুষ গুলো দেখলে খুব মায়া হয়। ছোটছোট ছেলেমেয়েদের ঘুড়ি উড়ানো, মাছ ধরা সবই ভালো লাগে চীনে পোকার।

জাহাজ এসে থামলো অন্য এক দেশে। কিন্তু এদেশটি তার পরিচিত মনে হচ্ছে। তারপর বিভিন্ন গাড়িতে চড়ে কখন যেন চলে এলো তার পরিচিত ভুবনে। চীন দেশে তার পরিবার তাকে খুঁজে পেয়ে অনেক খুশী হলো। কিন্তু চীনে পোকা ভাবছে বাংলাদেশের কথা। সে মনে মনে ধন্যবাদ জানালো স্বপ্নে দেখা পরীকে। আসলেই বাংলাদেশ স্বপ্নপুরী, পরীদের রাজ্য, স্বর্গপুরী। চীনে পোকা আবার যেতে চায় এ রাজ্যে। তবে এবার সে একা নয়, নিয়ে যেতে চায় তার পরিবার আর বন্ধুদের।

গল্পটা পড়ে মন ভালো হয়ে গেল নুরার। সে মনে মনে অসংখ্য ধন্যবাদ জানালো পিনু খালামনিকে। সে আগে কয়েকবার বাবা-মার সাথে বিদেশে ঘুরতে গিয়েছে। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড দেখে এসেছে সে। কিন্তু কখনই বাংলাদেশ দেখতে যায়নি। বাংলাদেশ এতো সুন্দর সে তো আগে জানতো না। এবার যখন পৃথিবীর অসুখ ভালো হবে তখন সে বাংলাদেশ দেখতে যাবে। চীনে পোকার মতো নুরাও বাংলাদেশ ভ্রমণ করবে। বাংলাদেশ ছেড়ে নুরা কোথাও যেতে চায় না।