ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরের একটি খুতবা
প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২১
মানবিক ভালোবাসা বনাম জৈবিক ভালোবাসা
যে ভালোবাসা প্রমোট করার দরকার নেই, বরং কন্ট্রোল করা দরকার— যেমন: নদীর পানি যদি আপনি কন্ট্রোল করেন, এটা বিদ্যুৎ দিতে পারে, এটা লক্ষ লক্ষ একর জমি সেচের ব্যবস্থা করতে পারে। কিন্তু এটা যদি আপনি অনিয়ন্ত্রিতভাবে ছেড়ে দেন, তাহলে লক্ষ লক্ষ একর জমি ডুবে যাবে, বন্যা হবে, মানুষের লাভ হবে না।
ঠিক মানুষের ভিতরে যে নারী-পুরুষের আকর্ষণের ভালবাসা, এই ভালোবাসা প্রমোট করা লাগে না, বরং গাইড করা লাগে, যে তুমি এইভাবে এটাকে ব্যবহার করে মানবতাকে এগিয়ে নাও। যে ভালোবাসাগুলো প্রমোট করা দরকার, মায়ের ভালোবাসা, সন্তানের ভালোবাসা, দেশের প্রতি ভালোবাসা, দরিদ্রদের প্রতি ভালোবাসা— এগুলো কিন্তু আমরা প্রমোট করছি না। এটাও একটা বড় ধরনের অপরাধ।
ভালোবাসা দিবসের নামে অশ্লীলতাকে প্রমোট করা হচ্ছে। অথচ দেখেন, আরও অনেক ভালোবাসা আছে, মায়ের ভালোবাসা, বাবার ভালোবাসা, কন্যাশিশুর ভালোবাসা, দেশ ভালোবাসা। এইগুলো কিন্তু আমাদের মিডিয়া ১৪ ফেব্রুয়ারিতে তেমন একটা প্রমোট করে না।
আমার অনুরোধ হলো, এই ভালোবাসা দিবসের নামে যে একটা অশালীন সংস্কৃতি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক সাম্রাজ্যবাদ আমাদের উপরে চাপিয়ে দিয়েছে বাণিজ্যের জন্য, সেগুলোকে অবশ্যই পরিহার করতে হবে। তাদের দৃষ্টিভঙ্গি হলো, ‘কেনো, কেনো, খাও, ফূর্তি করো, মেতে ওঠো।’ এখানে কোনো ত্যাগ নেই, আছে শুধু ভোগের কথা। আছে মানুষকে পশু বানানোর কথা, মানুষ বানানোর কোনো কথা নেই।
তবে দূঃখজনক ব্যাপার হলো, এই সংস্কৃতি সারা পৃথিবীতে প্রভাব বিস্তার করে আছে, আমরা এটা গোড়া থেকে উল্টাতে পারবো না। কারণ, টাকা, শক্তি, স্যাটেলাইট, সব তাদের হাতে। কিন্তু আমাদের ঈমান, আমাদের সন্তানেরা তো আমাদের হাতে। কাজেই আমরা এগুলোকে বর্জন করবো, আমাদের সন্তানদেরকে এগুলো থেকে দুরে রাখবো। সন্তানদেরকে নিজেরা সাথে রাখব, সময় দেব। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে অন্তত আমাদের পরিবার, পরিজন সন্তানদেরকে এই অশালীনতার ঢেউ থেকে রক্ষা করুন। আমীন।
মানবীয় মূল্যবোধ বনাম ব্যক্তি স্বাধীনতা
অশ্লীলতা পাপ কেন? তরুণদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, ‘একটু ফূর্তি করলে সমস্যাটা কি?’ নাস্তিক্যবাদী ও বস্তুবাদী সভ্যতার কথিত ব্যক্তিস্বাধীনতায় প্রভাবিত হয়ে অনেক তরুণের মন থেকে পাপের ধারণাটাই মুছে গেছে।
মূলত অশ্লীলতা হলো, মাদকতা কিংবা মানুষ খুন করার চেয়েও গুরুতর পাপ। কারণ, একজন মানুষ মদ খাচ্ছে, একজন লোক মাদকাসক্ত, সে তার নিজের ক্ষতি করে। আর যে অশ্লীলতার মাঝে ডুবে আছে, সে শুধু নিজের বা নিজের পরিবারেরই ক্ষতি করে না, বরং পুরো সমাজ ও জাতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
একজন লোক ট্রেন লাইনের উপর বসে আছে, বুদ্ধিমান মানুষ। সবাই দেখছে, ট্রেন আসছে। কেউ কি ভাববে যে, সে একটা শিক্ষিত মানুষ, বয়সও হয়েছে, সে নিজের স্বাধীন ইচ্ছায় ট্রেনের নিচে পড়ার জন্য বসে আছে, আমি ওকে নিষেধ করবো কেন? আমার মনে হয়, এটা কেউ করবে না। বরং অনেকেই তাকে টান দিয়ে নিয়ে আসবে। কারণ, সে নিজের ক্ষতি করছে। আর কারোর ক্ষতি করুক বা না করুক।
একজন মদ খায়, একজন হিরোইন খায়, আমরা তাকে কিছুই বলবো না! এটা হতে পারে না। কিছুদিন ধরে আমাদের বাংলাদেশে মাদকবিরোধী সপ্তাহ চলছে, সারা বাংলাদেশে পুলিশ বিভাগ থেকে অনেক বিজ্ঞাপন দেখছি আমরা। তবে কোনো বিজ্ঞাপনে ধর্মের কথা নেই। মদ খাবেন না, ক্ষতি হবে। কিন্তু আমরা যদি একটু প্রমোট করতাম, মদ খেলে শুধু শরীরের ক্ষতিই নয়, একই সাথে আখেরাতেও শাস্তি পেতে হবে, আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। আমার তো মনে হয়, এটা বেশি ফলপ্রসূ হতো।
এই যে যৌতুকের বিরুদ্ধে আমরা প্রচারণা করি, ‘যৌতুক নেবেন না, (এটা মানুষের অধিকার হরণ), যৌতুক নিলে কেস হবে।’ এতে যৌতুক কমে না। কিন্তু আপনি যদি বুঝান, যৌতুক নিলে কোনো কেস না হলেও আল্লাহর বিচারে ধরা পড়বেন, দুনিয়ায় বরকত নষ্ট হবে, আখেরাতে শাস্তি পেতে হবে। তাহলে তুলনামূলক বেশি ফলপ্রসূ হয়।
১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬
























