ডলারের বিপরীতে টাকার দাম কমছে কেন

মোহাইমিন পাটোয়ারী

প্রকাশিত : মে ১৮, ২০২২

বাংলাদেশে বর্তমানে যা হচ্ছে তা হলো, ব্যালেন্স অফ পেমেন্ট সংকট। একটি দেশের আমদানির তুলনায় রপ্তানি কম হলে আমরা বলি দেশটিতে বাণিজ্য ঘাটতি চলছে। কিন্তু বাণিজ্য ঘাটতিই সব কিছু নয়। রেমিট্যান্স, ঋণ, অর্থ পাচার, বৈদেশিক বিনিয়োগসহ যত প্রকার আন্তর্জাতিক লেনদেন আছে তাদের সকলকে একত্রে বলে ব্যালেন্স অফ পেমেন্ট।

ব্যালেন্স শব্দটির অর্থ দাঁড়িপাল্লা। আর পেমেন্ট শব্দটির অর্থ প্রদান। একটি দাঁড়িপাল্লার উভয় পাশ যেমন সমান হয়, তেমনি বৈদেশিক মুদ্রার আদান প্রদানের উভয় পাশও সমান হতে হয়। কোনো কারণে অর্জন বেশি হলে তা রিজার্ভ হিসেবে সঞ্চিত থাকে আর ব্যয় বেশি হলে কী হয় তা ব্যখ্যা করতে একটি প্রশ্ন করি। আপনার পরিবারের আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি হলে আপনি কি করেন? সঞ্চয় ভেঙে খরচ করেন, নয়তো ঋণ নেন।

ঠিক তেমনি করে বর্তমান বিশ্বের কোনো দেশের অর্জন করা বৈদেশিক মুদ্রা অপেক্ষা ব্যয় বেশি হলে দেশটি বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় (ফোরেক্স রিজার্ভ) থেকে খরচ করে অথবা বৈদেশিক ঋণ নেয় (আইএমএফ বা বিদেশি রাষ্ট্র থেকে)। কিন্তু যদি কোনো দেশের রিজার্ভ না থাকে বা ইচ্ছা করেই রিজার্ভ খরচ না করে? সেক্ষেত্রে ঋণ নিতে হবে অথবা মুদ্রার মান পড়ে যাবে। ঠিক এই ঘটনাই ঘটছে বাংলাদেশে।

বর্তমানে কেবল বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এমন সমস্যা শুরু হয়েছে। তার একটি কারণ হচ্ছে, জ্বালানি তেল, গ্যাস, ভোজ্য তেল, লোহা, কপার ও এলুমিনিয়ামসহ বিভিন্ন প্রকার আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া। এদিকে খনিজ সম্পদ বিক্রি করা দেশ যেমন সৌদি আরব, ইরান, রাশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার লালে লাল অবস্থা।

সবশেষে প্রশ্ন আসে, এই মুহূর্তে করণীয় কী? আমার মতে, খুব দ্রুত তিনটি জিনিস করা যায়। এক. আমদানি পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করে দেওয়া। দুই. বিদেশে টাকা পাঠানোর ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা। তিন. অর্থ পাচারের ওপর নজরদারি বাড়ানো। আমদানি পণ্যের বিশেষ করে তেল ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করলে গণ অসন্তোষ ও মূল্যস্ফীতি দেখা দেবে ঠিকই, কিন্তু এই মুহূর্তে বেশি ভালো থাকতে গিয়ে ভবিষ্যতে আরও খারাপ পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক তা বাঞ্ছনীয় নয়। এর একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হচ্ছে লেবানন।

সরকার বর্তমানে যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছে তা হচ্ছে, ৭৫ ভাগ এলসি (যার কারণে ডলারের চাহিদা বেড়ে গেছে) এবং সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ গমনের ওপর কড়াকড়ি। এগুলো কিছুটা উপকার করবে। আশা করি, সামনে আরও পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। যেমন শিক্ষা খাতের উন্নয়ন, বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ তৈরি ইত্যাদি।

সবশেষে, ব্যক্তিপর্যায়ে কী করা উচিত? টাকা বিক্রি করে ডলার কিনে ফেলা? উত্তরে আমি বলব, এই কাজ করলে দেশের অনেক ক্ষতি হবে। কারণ এর ফলে ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন ত্বরান্বিত হবে। এগুলো না করে ব্যক্তিপর্যায়ে এই মুহূর্তে আমাদের উচিত যথাসম্ভব বিদেশি পণ্য ব্যবহার কমানো। তেল, গ্যাস ও বিদ্যুৎ হিসেব করে খরচ করা। বিদেশে বিনিয়োগ স্তমিত করা। যারা বিদেশে আছে তাদের উচিত হবে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করা। কারণ, দেশ ভালো থাকলে আমরা সবাই ভালো থাকবো। ১৮ কোটি মানুষকে পৃথিবীর কোনো দেশ আদর করে নেবে না। দেশের ভালো করেই নিজেকে ভালো থাকতে হবে।