ডা. অপূর্ব চৌধুরীর কলাম ‘ভালোবাসার রসায়ন’

প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২১

ভালোবাসা একটি অনুভব। ভালোবাসা হতে পারে দুটো মানুষে, ভালোবাসা হতে পারে একটি বস্তুকে, ভালোবাসা হতে পারে অদৃশ্য স্রষ্টাকে, ভালোবাসা হতে পারে নিজের একটি কাজকে। এই যে কোনো কিছুর সাথে একটি মানসিক সংযোগ, এটাই ভালোবাসা।

জগতে ভালোবাসা বলতে দুটো মানুষের ভালোবাসাকেই বেশিরভাগ মানুষ বুঝে থাকে। ভালোবাসা মানে দুটো মানুষের সম্পর্ক। একটি অনুভবের সম্পর্ক। কিন্তু শরীর-মন কি করে বোঝে এই ভালোবাসা? অনুভব মানেই শরীরের রসায়ন। আর এই রসায়ন নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্ক। মস্তিষ্কের এই কাজকেই চিরকাল বলে মন। ভালোবাসা যদি দুটো মনের অনুভবের খেলা হয়, তারমানে ভালোবাসা আসলে দুটো মস্তিকের খেলা।

মস্তিষ্ক মানে নিউরনের রসায়ন। ভালোবাসা তাহলে রসায়নের আকর্ষণ। ভালোবাসায় কাজ করে এমন দশটি রাসায়নিক উপাদান হলো— এড্রেনালিন, নর এড্রেনালিন, ডোপামিন, টেস্টোস্টেরোন, ইস্ট্রোজেন, অক্সিটোসিন, এন্ডোরফিন, ভেসোপ্রেসিন, ফিনাইলেথাইলামিন ও সেরেটোনিন। সবগুলোই মস্তিষ্কে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে কাজ করে। এদের যেমন অন্য অনেক কাজ আছে, তার সাথে ভালোবাসার অনুভবটি তৈরিতেও প্রতিটি উপাদানের একটি প্রভাব আছে। কারণ হলো, ভালোবাসা একটি ককটেল। ভালোবাসা একটি মিশ্র রসায়ন।

ভালোবাসা হলো দুটো মানুষের আকর্ষণ। এই আকর্ষণের কাজ ঘটে এই রাসায়নিক উপাদানগুলোতে। এগুলোর কিছুকে বলে নিউরোট্রান্সমিটার সাবস্টেন্স। মানে হলো, আমাদের অনুভবটিকে যেসব রাসায়নিক পদার্থ ধারণ ও বহন করে। এই উপাদানগুলোর কমবেশির উপর নির্ভর করে আমাদের অনুভবগুলো।

ভালোবাসা একটি উত্তেজনা। কিসের উত্তেজনা? এই কেমিক্যালগুলোর উত্তেজনা। ভালোবাসা মানে অজানা উল্লাস, মনের পুলক, অনিশ্চিত শংকা। কখনো ভয়, কখনো উত্তেজনা, কখনো শিহরণ, আবার কখনো জেগে জেগে স্বপ্ন দ্যাখা।

ভালোবাসা একটি সাবকনশাস ফিলিংস। এটি পুরোপুরি কনসাস নয়, আবার পুরো আনকনসাসও নয়। এটি মাঝামাঝি একটি উত্তাপ। ভালোবাসা একটা সংযোগ, ভালোবাসা একটি এটাচমেন্ট। আমরা যখন ছোট থেকে বড় হতে থাকি, আমাদের শরীর শুরুতে ভয় এবং অনিশ্চয়তায় বাড়তে থাকে। অজানা কৌতূহল আর প্রশ্ন। জীবনের প্রথম ভালোবাসাটি গড়ে ওঠে বাবা-মা ও পরিবারকেজি খানেক গরুর দুধ দিয়ে ছায়াবীথির নানাকে পাঠিয়ে দে। ছায়াবীথিকে নিয়ে যাক— এই চক্রে। তৈরি হয় উত্তর ও আস্থা। ধীরে ধীরে এই ভালোবাসা আমাদের রসায়নকে স্থিতি দেয়। আমাদের ভয় ও অনিশ্চয়তা কমায়।

সময়ে শরীর বড় হয়। আমাদের রসায়নে অনেক পরিবর্তন হয়। সে রসায়ন আমাদের মধ্যে ভিন্ন রকম ভালোবাসা তৈরি করে। চেনা পরিবারের গণ্ডি ছেড়ে আমরা ভিন্ন একটি মানুষের মাঝে খুঁজি ভালোবাসা। সে ভালোবাসা দিয়ে কেউ আমরা আরেকটি ঘর বাঁধি, কেউ বাঁধি না।

ভালোবাসার তিনটি স্টেজ— যৌনতা, আকর্ষণ ও সংযোগ। যৌনতাটি শুরুতে কাজ করে আড়ালে। আকর্ষণটি যৌনতাকে পেছনে রেখে সময়টিতে উত্তেজনা আনে। যৌনতা ও আকর্ষণের সংযোগে তৈরি হয় বন্ধন। বন্ধনে যা স্থিতি পায়, সেটাই ভালোবাসা।

লেখক: চিকিৎসক ও প্রাবন্ধিক