তাকি উসমানী ও জাকির নায়েকের আলাপচারিতা

মুহসিন জান মুহসিন

প্রকাশিত : মে ২৫, ২০২২

আমাদের দাওরা হাদিসের বছরের ঘটনা। উস্তাদে মুহতারাম তাকি উসমানী মালায়শিয়া থেকে ফিরলেন। ক্লাসের কিছু সহপাঠীর বারবার আবেদনের ফলে ড. জাকির নায়েকের সাথে উস্তাদে মুহতারাম তার সাক্ষাতের বিবরণ শোনাতে রাজি হলেন।

তিনি বলেন, যখন আমরা মালায়শিয়া পৌঁছলাম তখন জাকির নায়েক ফোন করে সাক্ষাতের ইচ্ছা ব্যক্ত করলেন। যেহেতু অনেক দিন ধরে আমারও তার সাথে সাক্ষাতের ইচ্ছা ছিল, কিন্তু সময় হচ্ছিলো না। এমনকি এবারও ব্যস্ততা বেশি থাকায় তার কাছে উপস্থিত হতে ওজর পেশ করলাম। অবশ্য এক বন্ধুর ঠিকানা তাকে পাঠিয়ে বললাম, তিনি চাইলে সেখানে উপস্থিত হতে পারেন। আমিও সেখানে উপস্থিত থাকবো।

নির্দিষ্ট সময়ে আমরা সেখানে একত্রিত হলাম। জাকির সাহেবও আগমন করলেন। প্রথম সাক্ষাতে আমি তার প্রতি সহমর্মিতা দেখালাম এবং ভারত সরকার তার নাগরিকত্ব বাতিল করে দেয়ায় আফসোস প্রকাশ করলাম। সেই কথার ফাঁকেই আমি তাকে বললাম, খাবারের পর আমি আপনার সাথে একান্তে কিছু কথা বলতে চাই।

খাবারের পর আমরা অপর কামরায় গেলাম। সেখানে আমি তার সাথে কথার শুরুতে বললাম, অনেক দিন থেকে আমার অন্তরে কিছু কথা আছে যেগুলো আমি আপনার কাছে পেশ করতে চাচ্ছি। আমি জানি, তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বে আপনি আমার চেয়ে বেশি জ্ঞান রাখেন। এইজন্য যদি কেউ আমাকে বলে খৃস্টবাদ নিয়ে আমার সাথে বিতর্ক করবে তখন আমি এটাই বলবো যে, এ বিষয়ে আপনি ড. জাকির নায়েকের সাথে বিতর্ক করেন। সে আমার চেয়ে এ বিষয়ে পারদর্শী। (অথচ উস্তাদের একটি বই ‘খৃস্টবাদ কী’ অত্যন্ত জনপ্রিয়, যা পড়ে অনেক খৃস্টন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন)।

এরপর আমি বললাম, আপনি এদিক থেকেও আমার চেয়ে অগ্রগামী যে, আপনার হাতে অনেক অমুসলিম ইসলাম গ্রহণ করেছে। এভাবে বিভিন্ন ধর্মের মাঝে দাওয়াতি কাজ করা আপনার অনেক বড় খেদমত।

(উস্তাদজি বললেন, যখন তুমি এমন ব্যক্তির সাথে আলাপ করবে যার কিছু বিষয় সঠিক এবং কিছু বিষয় ভুল; তখন সঠিক ও ঐকমত্য বিষয়গুলো প্রথমে উল্লেখ করবে। যাতে সে বুঝতে পারে, তার ব্যক্তিত্বের সাথে তোমার শত্রুতা নেই)। কিন্তু কিছু বিষয় এমন রয়েছে, যেগুলোর ক্ষেত্রে আমি আপনাকে ভুল মনে করি। সেগুলো নিয়ে আলোকপাত করতে চাই।

কিন্তু ওই আলোচনার আগে আপনি একথা স্বরণ রাখবেন যে, যখন কোনো ব্যক্তি তার সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্র থেকে বাইরে পা রাখে যে বিষয়ে তার দক্ষতা নেই বরং বিষয়টি তার পাণ্ডিত্য থেকে দূরে; তখন সেই ময়দানে পা রাখার ফলে ব্যক্তির পদস্খলন হয় এবং তার থেকে বিচ্যুতি প্রকাশ পেতে থাকে। যে কারণে সমসাময়িক উলামায়ে কেরাম তার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেন এবং তার ভুলগুলো চিহ্নিত করে মানুষের সামনে তুলে ধরেন। অবশেষে সে বিলীন হয়ে রূপকথার গল্পে পরিণত হয়ে যায়। এইজন্য চেষ্টা করবেন, এমন কোনো পদক্ষেপ না নিতে যার কারণে জমহুর উলামায়ে কেরাম আপনার বিরুদ্ধে চলে যায়। অন্যথায় আপনার প্রকৃত কর্মক্ষেত্র ও কাজও প্রভাবিত হয়ে বিলীন হয়ে যাবে।
(উস্তাদজি তখন উপমহাদেশের কয়েকজন বিকৃত চিন্তাধারা লালনকারী স্কলারের কথা উল্লেখ করে বললেন, তারা নিজেদের কর্মক্ষেত্র থেকে বেরিয়ে কী পরিমাণ ভুল করেছেন এবং তার পরিণাম কী হয়েছিল)। এরপর তিনি বলেন, আমি তাকে বললাম, ফিকহ আপনার প্রকৃত কর্মক্ষেত্র নয়। আপনি যখন ফিকহি বিষয়ে বিশ্লেষণ করলেন তখন আপনার থেকে অনেকগুলো ভুল প্রকাশ পেল। যার কারণে জমহুর উলামায়ে কেরাম আপনার ভুলগুলো চিহ্নিত করে আপনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিল। ফলাফল এই দাঁড়ালো যে, সাধারণ মানুষের দৃষ্টিতে আপনার অবস্থান বিতর্কিত হয়ে গেল। এইজন্য আমার পরামর্শ হলো, আপনি তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব বিষয়ে আপনার কাজ চালু রাখবেন। আর যে বিষয়ে আপনি পূর্ণ দক্ষতা অর্জন করেননি সে বিষয়কে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু বানাবেন না।

উস্তাদজি বললেন, আমি বিতর্কের ভঙ্গিতে তার সাথে আলোচনা করিনি। বরং কল্যাণকামিতার ভঙ্গিমায় কথা বলেছি। যার ফলে সেগুলো তার ওপর এতটাই প্রভাব ফেললো যে, তিনি আমার কাছে এই বলে রীতিমতো মাফ চাইতে লাগলেন যে, আমি তো আপনার সম্পর্কেও কিছু অসঙ্গতিপূর্ণ কথা বলে ফেলেছি।
আমি বললাম, আমি নিজের কারণে আপনার উপর অসন্তুষ্ট নই। (উস্তাদ বললেন, অথচ আমার কাছে তার সেই আলোচনা পৌঁছেছিলো। কিন্তু আমি সেগুলোর আলোচনা করাটা উপযুক্ত মনে করিনি। বরং সে নিজেই তা উল্লেখ করলো।)

সেখানে তিনি আমার কৃতজ্ঞতা আদায় করলেন এবং কন্ট্রাক্ট নাম্বার নিয়ে সময়ে সময়ে যোগযোগ করতেন। পরের দিন একটি মসজিদে আমি জুমা পড়িয়ে যখন বাইরে বের হলাম তখন দেখি, বাইরে জাকির সাহেব দাঁড়িয়ে আছেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনি এখানে কীভাবে পৌঁছলেন?
তিনি বললেন, যে কোনো এক মাধ্যমে। আপনার সাথে সাক্ষাতের ইচ্ছা হচ্ছিল, তাই চলে আসলাম।
উস্তাদজি বললেন, যখন আমি ফিরে আসবো তখন দেখলাম, এয়ার পোর্টে দাঁড়িয়ে জাকির নায়েক আমার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। আমাকে দেখে বললেন, মন চাচ্ছিল আপনার সাথে শেষ সাক্ষাৎটিও হয়ে যাক।
উস্তাদজি বললেন, এখনো তার বার্তা আসে।

সেই কথোপকথন এখানে এইজন্য শেয়ার করছি যাতে বর্তমান সময়ের ঘৃণ্য পরিবেশে উক্ত কথোপকথন দ্বারা কোনো ব্যক্তির মধ্যে ভালোবাসার সুবাস অনুভূত হয় এবং কথোপকথনের পদ্ধতি শিখে নেয়।

 

ভাষান্তর: মাসুম বিল্লাহ