ত্বলিবুল ইলমের গদ্য ‘স্পেস-টাইম ফেব্রিক ও কুরআন’

প্রকাশিত : নভেম্বর ০৪, ২০২১

ব্রার্টাণ্ড রাসেল জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে একটি মঞ্চে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। কথা বলা শেষে এক বৃদ্ধা দাঁড়িয়ে বললো‚ তুমি এতক্ষণ আমাদের যা বলেছো সবই বাজে কথা। আসলে পৃথিবী একটি কচ্ছপের উপর দাঁড়িয়ে আছে।
রাসেল জিগেশ করলেন, তাহলে কচ্ছপটা কিসের উপর দাঁড়িয়ে আছে?
বৃদ্ধা বললো‚ বাছা তুমি খুব চালাক। আসলে কচ্ছপটা দাঁড়িয়ে আছে আরেকটা কচ্ছপের ওপর। আর এর নিচেও শুধুই কচ্ছপ।

ভাবুন তো‚ আপনাকে এমন কথা কেউ বললে কি করতেন? রাতে আমরা যারা আকাশ দেখে অভ্যস্ত‚ আকাশে তারাদের ঝিকিমিকি দেখে মনে মাদকতা অনুভব করি, তারা কি এটা ভাবি, কেমন করে এই তারাগুলো শূন্যে ভাসমান? আমাদের সূর্য কিংবা আমাদের মায়ার পৃথিবীই কিভাবে শূন্যে ভেসে আছে?

পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় একটি কথা আছে, স্পেস টাইম ফেব্রিক বা স্থান-কালের চাঁদর। সহজ ভাষায় বললে‚ মহাকাশজুড়ে ছড়িয়ে আছে একটি চার মাত্রার চাঁদর। আর যেসব বস্তুর ভর আছে তারা এই চাঁদরে বক্রতা তৈরি করে। আর ঘর্ষণহীন এই চাঁদরে ভেসে আছে পুরো মহাবিশ্ব (অর্থাৎ সূর্য‚ চাঁদ‚ পৃথিবী)।

আইন্সটাইনের আগে সম্ভবত এ বিষয় নিয়ে কেউ মাথা ঘমায়নি। তিনিই প্রথম নিউটনের মহাকর্ষ সূত্রের সীমাবদ্ধতা নিয়ে চিন্তা করেন আর স্থান-কাল চাঁদরের ধারণা দেন।  এবার আসুন সম্পূর্ণ ১৮০º এঙ্গেলে বেঁকে যাই। বিজ্ঞানের সূর ছেড়ে আরবির সুরার কাছে আসি। আরবিতে السِّبَاحَةُ মানে সাঁতার কাটা‚ ভেসে-ভেসে পথ পারি দেয়া। অর্থাৎ আপনি সাঁতার কাটছেন এটা বুঝাতে আপনি বলবেন أسبح আর এই সিবাহাতুন এর জন্য পানি আবশ্যক জিনিস। অর্থাৎ কিছু একটা লাগবে যাতে আপনি ভাসমান থাকবেন।

এইবার সূরা আম্বিয়ার ৩৩ নম্বর আয়াত পাঠ করা যাক, তিনিই রাতদিন এবং সূর্য ও চাঁদ সৃষ্টি করেছেন। সবাই নিজ নিজ কক্ষপথে বিচরণ করে। আয়াতের শেষ ওয়ার্ডটি দেখুন يسبحون মানে তারা বিচরণ করে। অনুবাদ যদিও বিচরণ করে, কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায় কিসে বিচরণ করে? আমরা জানি يسبحون এর মাসদারের অর্থ ভেসে-ভেসে চলা। তাহলে কি এমন কিছু আছে যাতে চন্দ্র-সূর্য ভেসে আছে। উপরন্তু বিচরণ (স্থানও পরিবর্তন) করছে। কুরআনে একমাত্র চন্দ্র-সূর্য কিংবা এজাতীয় কিছু বুঝাতে ইয়াসবাহুন ব্যবহার করা হয়েছে। আর মানুষের বিচরণের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে سَارَ শব্দটি।

তাহলে মহাকাশে এমন কিছু থাকা আবশ্যক যাতে ভেসে ভেসে পৃথিবী পথ পারি দেবে। আর এই আবশ্যক জিনিসটাই স্পেস-টাইম ফেব্রিক। আমরা যেমন পানিতে সাঁতার কাটি। আর আমাদের ভাসমান রাখে পানি। ঠিক তেমন করে চন্দ্র‚ সূর্য ও গ্রহসমূহ ভেসে আছে স্থান-কালের চাঁদরে। দেখুন يسبحون শব্দটা কিন্তু এই দিকেই ইঙ্গিত করে। নয়তো বিচরণ বা পথ চলার ক্ষেত্রে سَارَ শব্দের ক্রিয়াগুলো ব্যবহার করা হতো। পুরো কুরআনে দুই জায়গায়ই يسبحون ব্যবহার করা হয়েছে। আর দুই জায়গায়ই চন্দ্র-সূর্য। মানে বুঝলেন?

না বুঝলেন কুরআন পড়ুন আর চিন্তা করুন। আল্লাহ তা’আলা আমাদের এই জিনিসটাই করতে বলেছেন‚ তবে কি তারা কুরআন নিয়ে গভীর চিন্তা-ভাবনা করে না? নাকি তাদের অন্তরসমূহ তালাবদ্ধ?