নতুন জাহিলিয়াত `স্ট্রিট দাওয়াহ`

আরিফ হক

প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২১

রাস্তাঘাট ও সমুদ্র সৈকতসহ বিভিন্ন স্পটে ক্যামেরা নিয়ে যাওয়া হয় আর ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে মানুষকে প্রশ্ন করা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে উত্তর দিতে না পেরে বেশিরভাগ মানুষ বিব্রত হয়। সেই বিব্রতকর অবস্থার ভিডিও ধারণ করা হয়। সেটি আবার ইন্টারনেটে প্রচারও করা হয়। বাদ যায় না নারীরাও। উদ্দেশ্য যতই ভালো হোক, এরা কি ভেবে দেখেছে কাজটা ইসলাম সমর্থন করে কিনা?
মানুষকে লজ্জায় ফেলে, জাতির সামনে সেটা প্রকাশ করা জঘন্য পাপ। কেননা মানুষকে উপহাস ও বিদ্রূপ করা খুবই কুৎসিত কাজ এবং বড় গুনাহ। এর মাধ্যমে মুমিন ব্যক্তিকে অসম্মান করা হয়ে থাকে। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন, সম্মান কেবল আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মুমিনদের জন্য। (সূরা মুনাফিকুন ৮)

আর তাই মুমিনদের প্রতি যে কোনো অসম্মানজনক কাজ থেকে বিরত থাকা ইসলামের নির্দেশ। অন্যদিকে পবিত্র কুরআনের আরেকটি আয়াতে বলা হয়েছে, হে বিশ্বাসীগণ, কোনো ব্যক্তি যেন অপর কোনো ব্যক্তিকে উপহাস না করে। হয়তো তারা তাদের অপেক্ষা উত্তম এবং নারীদেরও একদল যেন অন্য দলকে উপহাস না করে। হয়তো তারা তাদের অপেক্ষা উত্তম। তোমরা নিজেদের (মধ্যে একে অপরের) ত্রুটি খুঁজবে না, এবং কাউকে কদর্য নামে সম্বোধন করবে না। কারণ, বিশ্বাস স্থাপনের পর (কাউকে) কদর্য নামে ডাকা গর্হিত কর্ম। যারা এ কর্ম হতে নিবৃত্ত না হয় প্রকৃতপক্ষে তারাই অবিচারক। (সূরা হুজুরাত ১১)

মহানবি (সা.) উপহাসকারীদের সম্পর্কে বলেছেন, একজন উপহাসকারীর জন্য বেহেশতের দরজা খুলে দেয়া হবে এবং তাকে বলা হবে, ‘এসো।’ সে তার দুঃখ ও অসহায়ত্ব নিয়ে সামনে অগ্রসর হবে এবং যখন সে ভেতরে ঢুকতে চাইবে তখনই তার সামনে বেহেশতের দরজা বন্ধ হয়ে যাবে। (কানজুল উম্মাল, হাদিস ৮৩২৮)

স্ট্রিট দাওয়াহ নিঃসন্দেহে ভালো কাজ। যা ইসলামের দায়ীরা যুগ যুগ ধরে করে আসছে। তবে বর্তমান প্রচলিত স্ট্রিট দাওয়াহর নামে ক্যামেরার সামনে একজন মুসলিম ব্যক্তিকে প্রশ্ন করে বিব্রতকর অবস্থায় লজ্জায় ফেলে দেয়া এবং সেটা ইন্টারনেটে ভাইরাল করে দেয়া কখনোই ইসলাম সমর্থন করে না। আবার একজন নারীর ছবি প্রকাশ করা আরও জঘন্য অপরাধ। কেননা কারো সম্মানহানি করা, অপমান অপদস্থ করা জুলমের অন্তর্ভুক্ত। আর জুলম অত্যাচার একটি জঘন্য শাস্তিযোগ্য পাপ। দুনিয়াতে কেউ কারো ইজ্জত নষ্ট করলে আল্লাহ তাকে কঠিন বিপদের দিনে অপদস্থ করবেন।

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল (স.) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি তার অপর ভাইয়ের ইজ্জত-সম্মান বিনষ্ট করে কিংবা কোনো বিষয়ে জুলুম করে, সে যেন আজই তার কাছে কৃত জুলুমের জন্য ক্ষমা চেয়ে নেয় সে দিন আসার আগে, যে দিন তার কোনো অর্থসম্পদ থাকবে না। সে দিন তার কোনো নেক আমল থাকলে তা থেকে জুলুমের দায় পরিমাণ নেক আমল কেটে নেয়া হবে। আর যদি তার কোনো নেক আমল না থাকে তাহলে তার প্রতিপক্ষের পাপ থেকে সমপরিমাণ পাপ তার ওপর চাপিয়ে দেয়া হবে। (সহিহ বুখারি)