নামাজে মন ফেরানো

পর্ব ১০

শারিন সফি অদ্রিতা

প্রকাশিত : জুলাই ১৯, ২০২০

নামাজটা শেষ হলেই মনে হয়, এই মুহূর্তে জায়নামাজ গুটিয়েই দৌড় দিতে হবে! ইশ, দুনিয়ার কত কাজ পড়ে আছে! অথচ দুনিয়ার কোন কাজটা আল্লাহর থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ যে জায়নামাজে কিছুক্ষণ আল্লাহর সাথে একান্ত সময় কাটানোর মাঝপথে আমরা সেই কাজকে দাঁড় করিয়ে দেই? জায়নামাজে বসে অল্প কিছু সময় জিকির বাকি পুরোটা সময় অন্তরকে ঠাণ্ডা রাখে। এই প্রসেসে খুব মোলায়েমভাবে আল্লাহর সাথে কথোপকথন শেষ করে অন্তর দুনিয়াবি কাজে ফিরে যায়। ঠাসঠুস করে নামাজটা শেষ করেই দুনিয়ার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়লে পরবর্তীতে ঈমানে, অন্তরে আর শরীরে নামাজের মিষ্টতার আমেজ বজায় থাকে না।

নামাজ শেষ করে জায়নামাজে বসেই খুব অল্প সময়ে এমন কিছু আমল করে ফেলা যায়। আমি এখানে আমার প্রিয় কিছু আমলের উল্লেখ কইছ।

তিনবার আস্তাগফিরুল্লহ
রসূল (ﷺ) যখন নামাজ শেষে সালাম ফেরাতেন তখন তিনি তিনবার ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ বলতেন। এখানে প্রশ্ন হলো, আমরা এইমাত্র নামাজ পড়লাম। নেকির কাজ করলাম। তাহলে ভালো একটা কাজের শেষে কেন আস্তাগফিরুল্লাহ বলছি? এটার প্রজ্ঞা ও শিক্ষা হচ্ছে, ঈমানদাররা কখনোই কোনো ভালো কাজ করে অনেক কিছু করে ফেললাম এরকম মনোভাব রাখে না। আমরা ভালো কিছু করেই সেটা নিয়ে অহংকারী হয়ে যেতে পারি না। বরং যে কাজটা করেছি সেটার মধ্যেও যে নিজেদের অজস্র ভুল ত্রুটি রয়েছে—এটা স্বীকার করে নিয়ে সাথে সাথে আল্লাহর কাছে নিজেদের অপারগতার জন্যে ক্ষমা চাই। রসূলের (ﷺ) মতন শ্রেষ্ঠ মানুষ যেখানে নামাজ শেষ হতে না হতেই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতেন, সেখানে নামাজ শেষে সেই ক্ষমার আমাদের আরও বেশি প্রয়োজন, কি বলেন? অনেকের ব্যস্ততা এবং বাস্তবতার জন্যে অনেকের পক্ষে জায়নামাজে বেশিক্ষণ বসে থেকে জিকির করা সম্ভব হয়ে ওঠে না, বিশেষ করে ছোট বাচ্চাদের মায়েদের জন্যে। তবে তিন সেকেন্ডে তিনবার আস্তাগফিরুল্লাহ বলে এই সুন্নাহ পালন করাটা কম-বেশি সবার জন্যে প্রাকটিক্যাল।

শান্তির দুয়া
নামাজ শেষে তিনবার ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ বলে রসূল (ﷺ) বলতেন, আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম, তাবারকতা ইয়া যাল-জালা-লী ওয়াল ইকরাম। অর্থ, হে আল্লাহ্‌, আপনিই শান্তি, আপনার কাছ থেকেই শান্তি আসে। আপনি বরকতময়, পরাক্রমশালী এবং মর্যাদা প্রদানকারী। (মুসলিম ১/২১৮, আবু দাউদ ১/২২১, তিরমিযী ১/৬৬।)

আয়াতুল কুরসি
কেমন দারুণ হবে বলুন তো, যদি আপনার এবং জান্নাতের মাঝে একমাত্র `মৃত্যু` ছাড়া আর কোনো পর্দাই না থাকে? সুবহানআল্লাহ! এই অসম্ভব সাফল্য অর্জন সম্ভব প্রতি ফরয নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠের মাধ্যমে। রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ সালাতের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে তাকে জান্নাতে যাওয়া থেকে মৃত্যু ছাড়া কোনো কিছুই বাধা দিতে পারবে না। (মুসলিম ও নাসাঈ)

আয়াতুল কুরসির অর্থ—আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও জমিনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোনো কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও জমিনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান। (সূরা বাকারাহ ২৫৫) চলবে