নিজেরে কোত্থাও খুঁইজা পাইতেছি না
মারুফ ইসলামপ্রকাশিত : নভেম্বর ১০, ২০২০
ঘাড় গুজে অফিসের চেয়ারে বসে কাজ করছিলাম। সকাল যাই যাই করা এ মুহূর্তে হঠাৎ একটা ছায়া পড়ল টেবিলের ওপর। মুখ তুলে দেখি শীর্ণ, লিকলিকে উদোম শরীরের এক যুবক মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে ডেস্কের সামনে। মাথাভর্তি রুক্ষ এলোমেলো চুল, নাকের তলায় সূক্ষ্ম গোঁফের রেখা, গালের দুপাশ ও থুতনিতে হালকা খোঁচা খোঁচা দাড়ি। রোদে পুড়ে মুখটা তামার মতো কড়া বাদামি হয়ে গেছে। সামনের দাঁত দুটো ঈষৎ উঁচু, তা আবার বিশ্রিভাবে ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে উঁকিঝুঁকি মারছে। কী অদ্ভূত! ছেলেটা শরীর থেকে শার্ট খুলে কোমরে বেঁধে রেখেছে কেন?
ভাই, আমি নূর হোসেন। খালি গায়ের যুবকটা মৃদুকণ্ঠে কথা বলে ওঠে।
আমি বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে থাকি। এই হোসেন মিয়া আবার কোত্থেকে এলো? এমনিতেই দিনকাল ভালো না। কে কোন ধান্দা নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, কে জানে!
আমি গলা উঁচু করে আশপাশে তাকাই সিকিউরিটি গার্ডের খোঁজে। আহম্মকদের বেতন দিয়ে পোষা হয় কী কারণে? একটা যদি কাজের কাজ করতে পারত এরা! রাস্তার লোকজন খালি গায়ে দিব্যি ঢুকে পড়ছে অফিসের ভেতরে অথচ দেখার কেউ নেই!
যুবক মৃদুস্বরে বলেই যাচ্ছে, আমি কোত্থাও নাই। নিজেরে কোত্থাও খুঁইজা পাইতেছি না। ফেসবুকে ঢুকছিলাম, সেখানেও আমি নাই!
কাম সারছে! এর তো কথাবার্তার ঠিক নাই। বদ্ধ উন্মাদ! এরে এখন অফিস থেকে বের করব কেমনে! মনে মনে একটা বড় দীর্ঘশ্বাস চাপলাম আমি। ঘাড় উঁচু করে আবারও ডানে বায়ে তাকালাম, সিকিউরিটি গার্ড কেউ আসছে কি না দেখার জন্য।
এই ফাঁকে ‘আমি কোথাও নেই, আমি কোথাও নেই’ বিড়বিড় করে বলতে বলতে খালি গায়ের যুবকটি দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেল।
হঠাৎ আমার চোখ পড়ল ডেস্কের ক্যালেন্ডারের ওপর। বুকের ভেতরটায় ছ্যাৎ করে উঠল। দ্রুত দৌড়ে যাই বাইরে। বাস, রিকশা, প্রাইভেট কার, মোটর বাইক-সব মিলেমিশে ছুটে যাচ্ছে একের পর এক। নাহ! কোথাও খালি গায়ের যুবকটি নেই।
মন খারাপ করে ডেস্কে এসে বসি। ফের চোখ যায় ক্যালেন্ডারে। আজ ১০ নভেম্বর। শহীদ নূর হোসেন দিবস।
লেখক: কথাসাহিত্যিক
























