প্রাচ্য তাহেরের গদ্য ‘সময় গেলে সাধন হবে না’

প্রকাশিত : মার্চ ০৩, ২০২১

ইসলাম গ্রহণ করার উদ্দেশ্যে আ`শা ইবন কায়স রাসূলুল্লাহর (সা.) সাথে সাক্ষাতের জন্য যাত্রা শুরু করলেন। মাঝপথে আবু জাহেলের সঙ্গে দ্যাখা। সে আ`শা ইবন কায়সকে জিগেশ করল, কোথায় যাচ্ছেন?

চলেছি মুহাম্মাদের (সা.) কাছে। ইসলাম গ্রহণ করবো।
আবু জাহেল জানতো, এই লোকটা নারীপ্রেমী আর চরম মদখোর। তাই সে ফন্দি আটলো কিভাবে একে ইসলাম থেকে দূরে রাখা যায়। আবু জাহেল বললো, কিন্তু আপনি কি জানেন, মুহাম্মদ তো ব্যভিচার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

আল্লাহর কসম, আমার তো ব্যভিচারের আদৌ কোনও দরকার নেই।
আবু জাহেল ভাবলো, না! এ টোপে কাজ তো হলো না। তাই সে দ্বিতীয় টোপ ছাড়ল, কিন্তু সে তো মদ পান করাকেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

এবার আ’শা ইবন কায়স একটু হাসলো, ওহ হো, আল্লাহর কসম, মদের প্রতি যে আমার চরম দুর্বলতা রয়েছে। এবার তিনি চিন্তায় পড়ে গেলেন। ইসলাম গ্রহণ করলে তো আর মদ খেতে পারবেন না। আবার মদ খাওয়া ছেড়ে দেয়াও তার পক্ষে খুবই কঠিন।

তাহলে কী করা যায়? অবশেষে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, আচ্ছা ঠিক আছে, তাহলে এবারকার মতো আমি ফিরে যাব। একবছর পূর্ণ তৃপ্তি নিয়ে মদ পান করে নেব। এরপর মুহাম্মদের কাছে এসে ইসলাম গ্রহণ করবো। তাহলে মদ পান করাও হলো, ইসলাম গ্রহণ করাও হলো।

যেই বলা সেই কাজ। ফিরে গেলেন তিনি ইসলামের অমিয় সুধা পান না করেই। কিন্তু মৃত্যু এক অমোঘ সত্য। কখন যে ছোবল দিয়ে প্রাণ বের করে নেবে, তা কেউ জানে না। আ`শা ইবন কায়েস মৃত্যুমুখে ঢলে পড়লেন বছর শেষ হওয়ার আগেই। মুশরিক হয়েই। বেঈমান হয়েই। সূত্র: বিদায়াহ তৃতীয় খণ্ড

সময় চলে যাচ্ছে। আর আমরা একটু একটু করে এগিয়ে চলেছি মৃত্যুর দিকে। ‘মৃত্যু এসে হঠাৎ করেই ধরবে তোমার ঘাড়/মৃত্যু থেকে বাঁচতে পারে সাধ্য আছে কার!’ না হে ভ্রাত, কারোরই সাধ্য নেই সেই অমোঘ মৃত্যু থেকে নিজেকে বাঁচানোর।

অথচ শুধু খেয়ালের ভুলে আমরা পার করে দিচ্ছি জীবনের প্রতিটি মূল্যবান সময়। যারা তরুণ, ভাবছি, আরে, কেবল ভার্সিটিতে চান্স পাইলাম। মজা করা, নোংরা ফান করার সময় তো এখনই। একটু আধটু মেয়ে বন্ধুদের সাথে দুষ্টামি করলে কিচ্ছু হবে না। একটু বয়েস হলে ভালো হয়ে যাব।

এমন অনেক মানুষই আছে, নামাজের ব্যাপারে তাদের ভাবনা হচ্ছে, সে নাহয় পড়ব আগামী শুক্রবার থেকে। কিন্তু হে মোহতারাম, সে সময় যদি আপনার জীবনে না আসে? প্রতিদিন কত কত মানুষ পৃথিবী থেকে বিদায় নিচ্ছে। আপনার আশপাশেই ঘটছে কত কত মৃত্যু। আপনি নিজেও কয়েকটি জানাজায় অংশ নিচ্ছেন। নিজের আত্মার ভেতর ডুব দিয়ে একটু ভাবুন তো, এভাবে জীবন কাটিয়ে দেয়া কোনো কাজের কথা কি?

আমাদের সবসময়েই স্মরণে রাখতে হবে মৃত্যুর কথা। আর বুকের ভেতর গেথে রাখতে হবে লালনের সেই বাণী, সময় গেলে সাধন হবে না।