প্রাণকে রূপান্তর করা হচ্ছে টাকায়

রিফাত বিন সালাম

প্রকাশিত : জুন ০৩, ২০২২

নর্স পুরাণ অর্থাৎ ভাইকিং যোদ্ধা হিসেবে বিখ্যাত স্ক্যান্ডিনেভীয় নর্স অধিবাসীদের পৌরাণিক উপকথার দেবতাদের মধ্যে বজ্রের দেবতা থর (Thor) এ অঞ্চরে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি পরিচিত। হলিউডের কারণে থরের গল্প বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষের মুখে মুখে। যদিও নর্সদের কাছে থরের চেয়ে দেবতা ওডিন বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

দেবরাজ ওডিন ও তার ভাই একদিন একটা সমুদ্রের তীর ধরে হাঁটছিলেন। হাঁটতে হাঁটতে তারা দুটো গাছের গুড়ির সামনে এসে থামলেন। এরপর দুই গুড়ির একটা থেকে তারা সৃষ্টি করলেন বিশ্বের প্রথম মানব। নাম দিলেন, আস্ক। এবং অন্য গুড়িটি থেক সৃষ্টি করলেন প্রথম মানবী। এর নাম দিলেন, অ্যাম্বলা। প্রথম মানব ও প্রথম মানবীর দেহ তৈরি করার পর তাদের মাঝে প্রাণের সঞ্চার করলেন। নর্সদের বিশ্বাস অনুসারে, এভাবেই গাছ থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে সমগ্র মানবজাতি।

যদিও আধুনিক কট্টর পুঁজিবাদী বিজ্ঞান এসব পুরাণকে স্রেফ উড়িয়ে দেয় `কৌতুক` বলে। কিন্তু এসব পুরাণের সামাজিক গুরুত্বের কথা ব্যাখ্যা তারা করে না। ফলে দীর্ঘ স্লো-পয়জন প্রক্রিয়ায় মানুষ প্রাণের চেয়ে উন্নয়নের মোহে বেশি আক্রান্ত। আর উন্নয়নের নমুনা তো আমাদের চারদিকে হরহামেশায় আমরা দেখছি। এ সমাজ ব্যবস্থায় মানুষের অবস্থান ক্রেতা ছাড়া আর কিছুই নয়। ভোগের নানা মোহে তার চিন্তা-চেতনা আচ্ছন্ন করে ফেলা হয়েছে।

পুঁজিবাদী অর্থনীতি উন্নয়নের নামে গাছ কেটে দুনিয়ার যা অবস্থা করছে, তাতে প্রাণ হত্যার প্রতি মানুষের আর বিন্দুমাত্র আবেগ কাজ করে না। আমরা সবাই পণ্য! মনে পড়ছে আবু তাহের সরফরাজের একটি ছড়া:

পণ্যযুগে মানুষ কোথায়?
মানুষ নিজেই পণ্য
পুঁজির দালাল কিনছে মানুষ
বাজার ধরার জন্য।

এই মৃত রাষ্ট্র ব্যবস্থার যুক্তি দিয়েই প্রমাণ করা যায়, উন্নয়নের নামে গাছ-বন-জঙ্গল উজাড় করে স্রেফ পয়সায় রূপান্তর করা হচ্ছে প্রাণকে। দেশে ডেভেলপমেন্ট প্রোজেক্টের নামে চালানো কার্যক্রমের পেছনে কাজ করছে কিছু মানুষের লাভ। আর বাকি মানুষগুলোর জন্যে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যু।

বুকভরে যেখানে নিশ্বাস নেয়া যায় না, সেটা আবার কীসের উন্নয়ন?
সুন্দরবন থেকে শান্তিনিকেতন, সবখানে গাছ কেটে নরক তৈরি হচ্ছে।

লেখক: কলামিস্ট ও কার্টুনিস্ট