
ফা হিয়েনের ভ্রমণ
পর্ব ১
অনুবাদ: সঙ্গীতা দাশপ্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ২২, ২০২০
প্রথম অধ্যায়
ফা হিয়েন আগে যখন চঙান প্রদেশে ছিলেন, বৌদ্ধ গ্রন্থের তিনটি ভাগের মধ্যে শৃঙ্খলা বিষয়টির অসম্পূর্ণ অবস্থা নিয়ে তিনি ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। এবং পরবর্তীতে হাঙ শির দ্বিতীয় বছর অর্থাৎ কিনা ৩৯৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে হুই সিঙ, টাও চেঙ, হুই জিঙ ও আরও কয়েকজন মিলে ভারতবর্ষ ভ্রমণ স্থির করলেন। উদ্দেশ্য, বাকি বৌদ্ধ শৃঙ্খলাগুলি সংগ্রহের চেষ্টা করা। চঙান থেকে যাত্রা শুরু করে পর্বত পেরিয়ে তারা এসে পৌঁছলেন সিয়েন কুই রাজার রাজ্যে।
এরই মধ্যে বর্ষা আগত, তাই বর্ষাকাল তারা এখানেই কাটালেন। বর্ষা শেষে আবার শুরু হলো পথচলা। এবার এসে থামলেন নু তান রাজার রাজ্যে। সেখান থেকে ইয়াং লু পর্বতশ্রেণি অতিক্রম করে সৈন্য কবলিত স্যাঙ ইয়ে শহরে এসে উঠলেন। স্যাঙ ইয়েতে তখন চলছে রাজদ্রোহ, এবং পথ দুর্লঙ্ঘ্য। ফলত তার বৌদ্ধ অতিথিদের বিষয়ে রাজা বেশ উদবিগ্ন হয়ে পড়লেন। তাদের পৃষ্টপোষক স্বরূপ তখন তিনি নিজস্ব ব্যয়ে তাদের সেখানেই রেখে দিলেন।
সেখানে দৈবক্রমে তাদের সাক্ষাৎ হলো পথ চলতে চলতে আগে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া চি ইয়েন, হুই চেন, সেং শাও, পাও উন, সেং চিঙ এবং অন্যদের সঙ্গে। এবারের বর্ষাকাল অতিবাহিত হলো এখানেই। তারপর বর্ষা অন্তে আবার চলতে থাকা। এবার এসে পৌঁছানো গেল তুন হুয়াং। এখানে রয়েছে সংরক্ষিত শিবির; পূর্ব থেকে পশ্চিমে আশি ফুটের মতো, আর উত্তর থেকে দক্ষিণে চল্লিশ ফুটের কাছাকাছি এই শিবির।
মাসাধিক সময় এখানে অতিবাহিত করার পর ফা হিয়েনসহ পাঁচজন পরিব্রাজক এবার যাত্রা আরম্ভ করে সামনে অগ্রসর হতে লাগলেন। বাকিরা রইল সেখানেই। এভাবে পাও উন আর তার সাথীদের সঙ্গে আর একবার বিচ্ছেদ হলো ফা হিয়েনের। তুন হুয়াং শিবিরের অধ্যক্ষ গোবি মরুভূমি অতিক্রমের জন্য সমস্ত আবশ্যক সামগ্রী তাদেরকে দিলেন। মরুভূমিতে অশুভ আত্মার বাস আর হাওয়ায় উত্তাপ। এ হাওয়ার সম্মুখীন হওয়ার অর্থ ভয়ংকর মৃত্যু।
আকাশে নেই কোনো পাখির কলরব, মাটিতে নেই কোনো পশুপ্রাণী। একটি পথের চিহ্ন খুঁজে চেয়ে থাকো অনিমেষ। পথ মেলে না। যতদূর দৃষ্টি চলে কেবল মৃত মানুষের ক্ষয়াটে হাড়। এই যেন গন্তব্যের দিশা, এই যেন একমাত্র পথের সঙ্কেত। সতের দিন প্রাণপণে হেঁটে প্রায় পনেরশো লি পথ অতিক্রম করে অবশেষে এসে পড়া গেল মাখাই মরুভূমিতে। চলবে