বাংলাদেশে এমন করা যায় না?

জান্নাতুল ফেরদৌস সারা

প্রকাশিত : জুন ০৭, ২০২১

ইউরোপের একটি দেশ যেখানে এই দৃশ্য অহরহ দেখতে পাবেন। একটি রেস্তোরাঁ। রেস্তোরাঁর ক্যাশ কাউন্টারে এক ভদ্রমহিলা এলেন আর বললেন, পাঁচটা কফি আর একটা সাসপেনশন। এরপর উনি পাঁচটি কফির বিল মেটালেন আর চার কাপ কফি নিয়ে চলে গেলেন।

কিছুক্ষণ পরে এক ভদ্রলোক এলেন আর অর্ডার করলেন দুটো লাঞ্চ প্যাক করুন আর দুটো সাসপেনশন রাখুন। উনি চারটে লাঞ্চের বিল মেটালেন আর দুটো লাঞ্চ প্যাকেট নিয়ে চলে গেলেন। এর কিছুক্ষণ পর আরো একজন এলেন। অর্ডার করলেন দশটা কফি. ছটা সাসপেনশন। উনি দশটা কফির পেমেন্ট করলেন আর চারটে কফি নিয়ে গেলেন।

এভাবেই একের পর এক চলতে লাগলো। বেশ কিছুক্ষণ পরে একজন বৃদ্ধ ব্যক্তি জর্জর অবস্থায় কাউন্টারে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, কোনো সাসপেনশন কফি আছে? কাউন্টার থেকে জানানো হলো, অবশ্যই আছে এবং এক কাপ গরম কফি ওনাকে দেওয়া হলো।

তারও অল্প কিছুক্ষণ পরে এক দাড়িঅলা ভদ্রলোক ভিতরে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, আজ কি কোনো লাঞ্চ সাসপেনশনে রাখা আছে? কাউন্টার থেকে যথারীতি সম্মতি জানিয়ে তাকে গরম খাবারের একটি পার্সেল আর এক বোতল জল দেওয়া হলো।

এই ব্যাপারটা সারাদিন চলছে তো চলছেই। কিছু মানুষ নিজেদের পকেট থেকে নিজেদের অর্জিত রোজগার থেকে কিছু অজানা মানুষের খাওয়ার জন্যে পেমেন্ট করছে, আর কিছু গরিব দুস্থ মানুষ বিনা পেমেন্টে নিশ্চিন্তে খাওয়া দাওয়া করছে। দিনভর চলছে এই কাণ্ড। অথচ কেউ জানে না কারোরই পরিচয়। না দাতা জানে গ্রহীতার পরিচয়, না গ্রহীতা জানে দাতার পরিচয়।

প্রয়োজন নেই পরিচয় জানার, প্রয়োজন নেই নিজের নাম জাহির করার। কিন্ত প্রয়োজন আছে কিছু অভুক্ত মানুষের মুখে অন্ন তুলে দেবার এবং সেটা একেবারেই গোপনে। মানবিকতার এই চরম শিখরে পৌঁছনো দেশটির নাম নরওয়ে। নরওয়ের দেখাদেখি এই পরম্পরা ছড়িয়ে পড়ছে ইউরোপের অন্যান্য দেশেও।

মহান আল্লাহ্ তা`য়ালা পবিত্র কুরআনুল কারীমে ঘোষণা দিয়েছেন, মুমিনরা পরস্পর ভাই-ভাই। অতএব, তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করবে এবং আল্লাহকে ভয় করবে, যাতে তোমরা অনুগ্রহ পেতে পারো। (সূরা হুজরাত ১০)

তিনি আরও বলেছেন, তাদের (বিত্তশালী) ধনসম্পদে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে। (সূরা জারিয়াত ১৯)। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনে অন্যত্র এরশাদ করেন, তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি তথা তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে দরিদ্র, এতিম ও বন্দিদের খাদ্য দান করে। (সূরা দাহর ৮)

মহানবি (সা.) বলেন, যে মুসলমান অপর কোনো মুসলমানকে বস্ত্রহীন অবস্থায় বস্ত্র দান করবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে সবুজ বর্ণের পোশাক পরাবেন, খাদ্য দান করলে তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন, পানি পান করালে জান্নাতের শরবত পান করাবেন। (আবু দাউদ ১৭৫২)

মহানবি (সা.) আরও বলেছেন, তোমরা ক্ষুধার্তকে খাদ্য দাও, অসুস্থ ব্যক্তির খোঁজ-খবর নাও, বস্ত্রহীন লোকদের বস্ত্র দাও এবং বন্দিকে মুক্ত করে দাও। (বোখারি ২৪১৭)

মহান আল্লাহ্ তা`য়ালা সূরা বাকারার ২৬১ নং আয়াতে বলেছেন, যারা আল্লাহর রাস্তায় স্বীয় ধন সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উদাহরণ একটি বীজের মতো, যা থেকে সাতটি শীষ জন্মায়। প্রত্যেকটি শীষে একশো করে দানা থাকে। আল্লাহ অতি দানশীল, সর্বজ্ঞ।

এরপর ২৬২ ও ২৬৩ নম্বর আয়াতে বলেছেন, যারা আল্লাহর পথে নিজের ধনসম্পদ ব্যয় করে এবং যা ব্যয় করে, তার কথা বলে বেড়ায় না এবং (ঐ দানের বদলে কাউকে) কষ্ট দেয় না, তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের কাছে পুরস্কার আছে এবং তাদের জন্য কোন আশঙ্কা নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না। যে দানের ফলে মানুষকে কষ্ট দেয়া হয়, সেই দানের চেয়ে মিষ্টি কথা বলা এবং ক্ষমা শ্রেয়। আল্লাহ তা`লা সম্পদশালী, সহিঞ্চু।

মহান আল্লাহ্ তা`য়ালা সবাইকে গোপনে দান করার তৌফিক দিক।