বাক্য লেখার ক্ষমতা না রাখাদের দখলে সাহিত্যের বাজার

হারুন আল রশিদ

প্রকাশিত : মার্চ ২৩, ২০২৪

আঁখিতে আাঁখিতে মধুর মিলন নয়। সাহিত্যের কথা বলছি। বছর চারেক ধরে আমি বাংলা সাহিত্য পর্যবেক্ষণ করছি। যা কিছু সাহিত্য হিসেবে বিজ্ঞাপনের আওতায় আছে, তার ৯৯ ভাগ সাহিত্যের আওতায় পড়ে না। এগুলি সব ধরিয়ে ধরিয়ে দেখিয়ে দেয়া যায়, কার কোথায় ত্রুটি। এটা করা সহজ। তবে যাদের গায়ে গিয়ে এগুলি পড়বে, তারা  সরব ও জীবন্ত।

রেণুর আবির্ভাব লেখার আগে এই পাহাড়সম আবর্জনায় আমাকে মাথা ঢোকাতে হয় কিছু তথ্য সংগ্রহের জন্য। তারপর অনেক কিছু দেখলাম। মাঝে মাঝে দেখার চেষ্টা করি, কে কেমন অনুবাদ করছে। এ পর্যন্ত যে কয়টা দেখেছি, তার একটাতেও পরপর পাঁচটা বাক্য ঠিক করে লিখতে পারে, পরপর তিনটা বাক্যের অর্থ অনুবাদ করতে সক্ষম, এমন প্রমাণ পেলাম না।

এসব কথা বললে অনেকে রাগ করে। বাঙালিকে ছোট করা হচ্ছে, এমন মন্তব্যও আসে। অথচ যা প্রমাণসহ দেখানো হয়, তা নিয়ে যদি সাহস করে এগিয়ে এসে দুয়েকজনও কথা বলতো, তাহলেও কিছু সচেতনতা তৈরি হতো। কিন্তু তা কেউ করতে চায় না।

সর্বশেষ কাফকার একটা দুই লাইনের উপকথার অনুবাদ আমি দেখালাম। আর তাতে দেখা গেল কীভাবে একটা বাক্য লেখার ক্ষমতা না রাখা লোকজন বাজার দখল করে আছে। কুসাহিত্যিকীকরণের মাধ্যমে বাংলা ভাষ কী রকম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তা নিয়ে গবেষণা করার দরকার। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সবার চোখের সামনে। কিন্তু চোখে আলো নাই।

থাকলে দেখতো, অভ্র নামক যে কলম দিয়ে তারা লেখেন সেই কলমে অনেক বানান লেখা যায় না। অভ্রের নির্মাতাকে দোষ দিয়ে লাভ নাই। সেই বেচারা তার কাজ করেছে। তারপরতো কাউকে না কাউকে তাকে নিয়ে বসার দরকার ছিল। তা করা হয়নি। কম্পিউটারে বাংলা ভাষা টাইপ করার জন্য বিজয়ই এখনও আমার কাছে একমাত্র জুতসই কলম।

বর্তমান অবস্থা চলমান থাকলে বিশ বছরে বাংলা ভাষার যে দশা হবে, তা থেকে একে টেনে তোলা অসম্ভব হয়ে যেতে পারে। এই ক্ষতি চোখে দেখা যায় না। কিন্তু এর প্রভাব খুব খারাপ হবে। বিশেষ করে মূলধারার জন্য। আর দ্বিতীয় ধারাতো চায়ই না, বাংলা ভাষা থাকুক। বাংলা ভাষার লেখ্য রূপ বর্তমানে মুমূর্ষু। এই অবস্থায়ও সাহিত্যের (পড়ুন অসাহিত্যের) লোকজন বাংলা ভাষাকে ডান্ডা দিয়ে পেটাচ্ছে।

এগুলি দেখার জন্য কোথাও কেউ আছে বলে মনে হয় না। কেউ ভেতরে ঢুকতে চায় না, ঢোকার জন্য পথের কাঁটা সরানোর মতো অস্ত্র কারও হাতে আছে, এমন প্রমাণও পাওয়া যাচ্ছে না। এত না-থাকার মধ্যেও কিছু কিছু সম্ভাবনাময় নবীন সাহিত্যিক দেখা যাচ্ছে। আমি আশা করব, প্রচারের বাজার দখল করে থাকা পচা ও গলন্ত মাকালফলগুলির রস তাদের সতেজ ত্বকে যাতে না ঢুকতে পারে, তারা সেই খেয়াল রাখবে।

লেখক: কথাসাহি্ত্যিক ও অনুবাদক