বাঙালি চাঁদের হিশেবটাই ঠিকমতো জানে না

আবু তাহের সরফরাজ

প্রকাশিত : এপ্রিল ১৩, ২০২১

সৌদি আরবের সাথে বাংলাদেশের সময়ের ব্যবধান মাত্র তিন ঘণ্টা। বাংলাদেশ ইউটিসি+৬ আর সৌদি আরব ইউটিসি+৩ টাইম জোনে অবস্থিত। দ্রাঘিমাংশের ব্যবধানও মোটামুটি ১৫×৩=৪৫ ডিগ্রির মধ্যে। তাহলে বাংলাদেশে সৌদির একদিন পরে রোজা কিম্বা ঈদ উৎসব হয় কেন? এছাড়া বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সময়ের পার্থক্য সাড়ে ১১ ঘণ্টার ওপরে নয়। দেখা যাচ্ছে, বিশ্বের আরসব মুসলিম দেশে সৌদি আরবের চাঁদের হিশেবটাই গণনা করা হয়। সহজেই বোঝা যাচ্ছে, জাতি হিশেবে আমরা কতটা মূর্খ! আমরা এটাও জানি না যে, পৃথিবীতে চাঁদ দুটো নয়, একটা।

সৌদি আরবে যেদিন জুম্মার নামাজ পড়া হয়, সেদিন বাংলাদেশেও আমরা জুম্মার নামাজ পড়ি। অথচ রমজান ও ঈদের ক্ষেত্রেই ব্যতিক্রম ভূমিকা পালন করি। বাংলাদেশে মহাকাশ গবেষণা বিষয়ক একটা সংস্থা আছে, এস্ট্রোনমিক্যাল এসোসিয়েশন। জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি কি কখনো এই সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে রমজান কিম্বা ঈদের চাঁদ বিষয়ে আলাপ করেছে? করলে হয়তো এই মূর্খতার একটা সমাধান পাওয়া যেত।

হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, হযরত মুহাম্মদের (স.) কাছে এক বেদুঈন এসে বললো, আমি রমজানের নতুন চাঁদ দেখেছি। নবি তাকে জিগেশ করলেন, তুমি কি এই সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই? লোকটি বলল, জি, দিই। নবি এবার জিগেশ করলেন, তুমি কি সাক্ষ্য দাও যে, মুহাম্মদ আল্লাহর রসূল? লোকটি জবাব দিল, জি, অবশ্যই। নবিজি এবার বেলালকে (রা.) বললেন, শোনো বেলাল, তুমি মানুষের মধ্যে ঘোষণা করে দাও, তারা যেন আগামীকাল থেকে রোজা রাখে। (আবু দাউদ ও তিরমিজি)

মহানবি আরও বলেন, “আমরা উম্মি সম্প্রদায়। লিখতে জানি না, হিশেব-নিকেশও করতেও জানি না। তবে মাস এতদিনে, এতদিনে এবং এতদিনে হয়ে যাবে।” তৃতীয়বার হাত দিয়ে ইঙ্গিতের সময় তিনি তাঁর দু`হাতের একটা বুড়ো আঙুল গুটিয়ে নিলেন। এরপর বললেন, “মাস এতদিনে, এতদিনে এবং এতদিনে হয়।” মানে, তিরিশ দিনে মাস হয়। (বুখারি ও মুসলিম)

পৃথিবী নামক গ্রহে চাঁদ একটাই। আমরা বাঙালিগণ যতই তাকে দুটো বানাতে চেষ্টা করি না কেন, প্রকৃতির তাতে কিছুই এসে যাবে না। ঈমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেছেন, পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত থেকে চাঁদ দেখে মাত্র একজন মুসলমানও যদি সাক্ষ্য দ্যায়, তাহলে রোজা বা ঈদ পালন করা যাবে। ফতোয়ায়ে আলমগীরিতে আছে, চাঁদ কোন দিকে উঠছে, এটা বিবেচনার বিষয় নয়। চাঁদ যে উঠেছে, এটাই বিবেচ্য।

পবিত্র কোরআনের কোথাও চাঁদ দেখার কথা বলা হয়নি। সূরা বাকারার ১৮৯ আয়াতে রয়েছে, (হে রসূল,) লোকেরা আপনার কাছে নতুন চাঁদ সম্পর্কে জানতে চায়। বলে দিন, এটা মানুষের ও হজ্জের জন্য সময় নির্ধারক। সূরা আর রহমানের পাঁচ আয়াতে আছে, সূর্য ও চাঁদ হিশেবমতো চলে।

বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ। কোরআন বিজ্ঞানময় একটি পবিত্র গ্রন্থ। যা বিজ্ঞানসিদ্ধ নয়, কোরআনেও তা নেই। অথচ অবৈজ্ঞানিকভাবে আমরা চাঁদের হিশেবটাও গুলিয়ে ফেলেছি। বিরোধিতা করছি ইসলামি বিধানেরও। বিশ্বের আরসব দেশের মুসলমানরা যখন পবিত্র ঈদুল ফিতর পালন করছে, আমরা সেদিনও রোজা রাখছি। অথচ ঈদের দিন রোজা রাখা হারাম। আমরা সেই হারাম কাজটিই ইসলামের বিধান হিশেবে পালন করে চলেছি... আমাদের মূর্খতার কি কোনো শেষ নেই?

সৌদি ও বাংলাদেশের চাঁদ দেখা নিয়ে এই যে বিতর্ক, এ বিষয়ে অবশ্যি আমাদের দেশের কিছু আলিম দেশের প্রচলিত সিস্টেমের পক্ষেই নানা যুক্তিতর্ক উপস্থান করবেন। যদিও এসব যুক্তির বেশিরভাগই অযুক্তি। মজা হচ্ছে, এসব ডিগ্রিধারী আলিম আসলে প্রচলিত স্রোতের বিপরীতে গিয়ে কোনো কথা বলতে চান না। এর কারণ, ইসলামকে বেচে যে জীবিকা সে চালাচ্ছে, তাতে টান পড়তে পারে।

লেখক: কবি ও কথাসাহিত্যিক