বিজ্ঞান নয়, ভণ্ড হলো কিছু বিজ্ঞানী

জিয়া উল হক

প্রকাশিত : আগস্ট ০৮, ২০২১

জনৈক আমেরিকান মনোবিজ্ঞানী ধর্মকে অস্বীকার করে বলেছেন, বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে ধর্ম হলো ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ও নিকৃষ্ঠতম ভণ্ডামি। Science and Christian belief, C. A. Coulson, পৃষ্ঠা ৪)

ডিম অনেকের প্রিয় খাবার। আমারও। ডিম দিয়ে তৈরি নানা পদের মুখরোচক পুষ্ঠিকর খাবার আমাদের শরীর ও মন উভয়ই তাজা রাখে। ডিম খেতে খেতে কতই না আড্ডা দিয়েছি আমরা। কিন্তু একটা কাজ আমরা খুব কমই করেছি আর তা হচ্ছে, ডিম খেতে খেতে বা ডিম হাতে এর গঠন নিয়ে চিন্তা করা। এ কাজটা সম্ভবত আমরা কেউই করিনি। যদি করতাম তাহলে আমাদের চিন্তার জগৎটা অন্যরকম হতে পারতো।

একটা ডিম, সবচেয়ে সহজলভ্য ডিমটার কথাই ধরুন, মুরগির ডিম। প্রায় ৪০ ধরনের বিভিন্ন প্রোটিনসহ মিনারেলস, ভিটামিন এ ও ডি, ফসফরাস, ক্যালসিয়ামসহ নানারকম ভিটামিন যেমন আমাদের পুষ্ঠি ও শক্তি জোগায় তেমনই তা হতে মুরগির বাচ্চাও জন্ম নেয়। নরম তুলতুলে মুরগির বাচ্চাকে আমরা অনেরকেই হাত দিয়ে ধরতে পছন্দ করি। কারণ তার কোমলতা, গায়ে হাল্কা পশমের মসৃণতা আমাদেরকে আকৃষ্ট করে।

দীর্ঘ একুশ দিন তা দেয়ার পর ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। মানুষসহ অন্যান্য প্রাণির গর্ভাশয়ে বাচ্চা বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে তারা মায়ের শরীর থেকেই প্রয়োজনীয় পুষ্টির সরবরাহ পেয়ে পরিপুষ্ট হতে থাকে। কিন্তু মুরগিসহ এ রকম অন্যান্য প্রাণীর ক্ষেত্রে তা হয় না। মায়ের শরীরের সাথে তার কোনও সংযোগ না থাকায় বেড়ে ওঠার জন্য সেখান থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও রসদ পাবার তার আর কোনও সুযোগ নেই।

কিন্তু তারপরেও তা বেড়ে ওঠে, একটা পরিপূর্ণ প্রাণের রূপ লাভ করে। আরও অবাক ব্যাপার হলো, এই সেই তরল কুসুম আর এলবুমিন (ডিমের ভেতরে সাদা তরল অংশটুকু); তার ভেতর থেকেই একটি প্রাণ তৈরি হচ্ছে আমাদের চোখের সামনে! কোথায় যেন একটা পর্দা রয়েছে, ফলে আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না! কোরআন মাজিদে আল্লাহ বলেন, যারা কুফরি করে তারা কি ভেবে দেখে না, আকাশমণ্ডলি ও পৃথিবী মিশে ছিল ওৎপ্রোতভাবে, এরপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম এবং প্রাণবান সমস্ত কিছু সৃষ্টি করলাম পানি হতে। তবু কি তারা ইমান আনবে না! (সুরা আম্বিয়া ৩০)

আল্লাহ ডিমের মধ্যে সেই পানি মওজুদ রেখেছেন। আর সকল প্রাণের মৌল হচ্ছে যে প্রোটিন, সেই প্রোটিনও ডিমের মধ্যে রেখেছেন। ক্যালশিয়াম কার্বোনেটের তৈরি ডিমের খোলসের গায়ে প্রায় ১৭ হাজার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র রয়েছে, খালি চোখে দেখতে না পাওয়া এইসব ছিদ্রগুলো দিয়ে ডিমের মধ্যে আলো ও আর্দ্রতা ঢুকলেও কোনো ধুলোবালি ও রোগজীবাণু যেন না ঢুকে পড়ে সেজন্য দুইস্তর বিশিষ্ট এই খোলসের মধ্যে রয়েছে আরও একটা সূক্ষ্ম পর্দা; ব্লুম Bloom, যা ডিমের ভেতর প্রাণের মৌল উপাদান পানি ও প্রোটিনকে যে কোনো জীবাণুর আগ্রাসন হতে রক্ষা করে।

একুশ দিন তা দেবার ধারাবাহিকতায় এর ভেতরে আমাদের অলক্ষ্যেই একটা প্রাণ; মুরগির বাচ্চা, জন্ম নেয়। নরম ও দুর্বল বাচ্চাটা এক সময় ভেতরেই নড়াচড়া করতে থাকে। মানুষের হাতে, তার শক্তির কাছে ডিমের বাইরের খোলসটা যতই দুর্বল ও ভঙ্গুর বলে মনে হোক না কেন, ভেতরের ঐ বাচ্চাটার কাছে তা এক দূর্ভেদ্য দূর্গ বটে! প্রশ্ন হলো, অতি দুর্বল এই সত্তার কাছে ডিমের খোলস ভেঙে বাইরে বেরিয়ে আসার তাগাদা দেয় কে? খোলস ভাঙার মতো শক্তিইবা তাকে কে জোগায়? তাও আবার এই একুশতম দিনেই!

আগে ভাবা হতো, ডিমের ভেতর থেকে বাচ্চা বেড়ে উঠায় ক্রমবর্ধিষ্ণু চাপে খোলসটা ভেঙে যায়। কিন্তু আধুনিক এক্স-রে ও মাইক্রোস্কোপিক পরিক্ষায় তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। বায়োলোজিস্ট ও বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, একুশতম দিনে ডিমের ভেতরে মুরগির বাচ্চার ঠোঁটে এক ধরনের শক্ত সুঁচালু শুড় Beak গজায়। এই সুঁড় গজানোর সাথে সাথে বাচ্চাটা ভেতর থেকেই ডিমের খোলসটাতে আঘাত করতে থাকে।

প্রশ্ন হলো, আঘাত করে ভেতর থেকে খোলস ভেঙে বেরুনোর তাড়া সে কোথা থেকে পায়? কে তাকে ইলহাম করে জানায় যে, এখান থেকে বেরুলেই সে বিশাল ও বিস্তৃত এক বিশ্বের সন্ধান পাবে! আর সেই বিশাল, বিস্তৃত ও বৈচিত্র্যময় পৃথিবী দেখা, সেখানে বিচরণ করা, তার সৌন্দর্য উপভোগ করতে নিজের দুর্বল শরিরের সকল শক্তিটুকু কাজে লাগিয়ে খোলস ভেঙে গলাটা বাড়িয়ে, মাথাটা উঁচু করে কিচির মিচির আওয়াজ তুলে চারদিকে আগ্রহী দৃষ্টিতে চেয়ে চেয়ে দেখে আর এক সময় লাফিয়ে বেরিয়ে আসে, চিরদিনের মতো!

বিজ্ঞানীরা প্রশ্নটির উত্তর দিতে অপরাগ। তারা একটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে আরও দশটা প্রশ্নের মুখোমুখি হন। তারা খুঁজতে গিয়েছিল ডিমের ভেতর থেকে বাচ্চাটা কিভাবে বেরিয়ে আসছে। মাইক্রোস্কাপ আর এক্সরে মেশিন প্রশ্নটির জবাব দিতে গিয়ে আরও একটা কঠিন প্রশ্ন তুলে ধরেছে, মুরগির বাচ্চার মুখে একুশতম দিনে সুঁড় তৈরি করেন কে? বিজ্ঞানীরা লাজওয়াব! কেউ একজন আছেন নিশ্চয়ই। তাদের ভণ্ডামি ধরা পড়ে যায়। বিজ্ঞান নয়, ভণ্ড হলো বিজ্ঞানের ধারক কিছু বিজ্ঞানী। তারা একটা মেকি খোলস তৈরি করে নিজেদের ভণ্ডামি টিকিয়ে রেখেছে।