বিশ্বজয়ী হও

পর্ব ৫

অমিত কুমার কুণ্ডু

প্রকাশিত : জুন ২৭, ২০২০

কেউ কাউকে উন্নত করতে পারে না, বিবেকযুক্ত মনের সাহায্যে মানুষ নিজেই নিজেকে উন্নত করে। সেই বিবেক ও বুদ্ধিকে জাগ্রত করতে হবে। আমি জানি তুমি পারবে। তুমিও বিশ্বাস করো তুমি পারবে, তাহলেই পারবে। কী হয়, এ জীবনটা যদি পরার্থে বিলিয়ে দিই! কী হয়, এ জীবনে যদি সব ভোগের আশা ত্যাগ করে দিই! কী হবে, ভালো কিছু করার জন্য, সকলকে ভালবাসার জন্য যদি নির্বাসনে যেতে হয়! ওরে, মরেতো একদিন যেতেই হবে, তা একটি ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে মরাই ভালো।

একবার ভেবে দেখো, তুমি কী হবে? পৃথিবীর বুকে অমর হয়ে যাওয়া কোনো মনীষীর ন্যায়, না কী প্রতি মুহূর্তে পশু-পাখির ন্যায় কামিনি-কাঞ্চনে আসক্ত, ভোগ-বিলাসে মত্ত ও নিজে মরে যাওয়ার সাথে সাথে নিজের সব অস্তিত্ব শেষ হয়ে যাওয়া কোনো অধম মানব সন্তানের ন্যায়। চয়েজ ইজ্ ইর্য়োস। তুমি ঠিক করো, তুমি অন্ধকার বেছে নিতে চাও, না আলো বেছে নিতে চাও। তুমি ঠিক করো, ক্ষণকালের মোহগ্রস্থ সুখ ও অসীম দুঃখ ভোগ করবে, না কী ক্ষণকালের পরিশ্রমের কষ্ট ও অসীম পবিত্র আনন্দ উপভোগ করবে।

‘পৃথিবীতে এসেছো যখন তখন একটি চিহ্ন রেখে যাও।’ ভালোবাসা পাওয়ার আশা করো না। ভালবাসা না পেয়ে দুঃখও করো না। তুমি ভালোবেসে যাও। ভালোবাসা পেয়ে যত শান্তি, তার থেকে অনেক শান্তি ভালবাসা দিয়ে। কার দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছ বলে, নিজেকে অপাঙক্তেয় ভেবো না। ভাবো তুমি নয়, বরং সে-ই তোমার যোগ্য নয়। জানো তো, একটা গল্প আছে এরকম, একজন একটা খাঁটি হীরে কুড়িয়ে পেয়ে বাজারে বেচতে নিয়ে যায়। সবজি বিক্রেতার কাছে গেলে সে হীরাটির মূল্য ৯০ টাকা দিতে চায়। কাপড় বিক্রেতা দিতে চায় ৯০০ টাকা। জহুরি দেখে একবারেই এক লাখ টাকা দাম দেয়।

বন্ধুরা, মনে রেখো, হীরের কদর শুধুমাত্র জহুরির কাছেই, কারণ সে হীরে চেনে, তার হীরে কেনার মতো পুঁজিও আছে। যে হীরে চেনে না, যার হীরে কেনার ক্ষমতা নেই, সে হীরের যথার্থ মূল্যায়ন করবে কীভাবে? তাই কেউ যদি তোমাকে অবমূল্যায়ন করেও থাকে, তুমি দুঃখ পেও না। অন্যের সংকীর্ণতা দেখে কেন নিজে মর্মাহত হবে? হতাশা থেকে বেড়িয়ে এসো। সকলের মাঝে বাঁচো। সকলকে আপনার করে নাও। হৃদয়কে প্রশস্ত করো। যে হৃদয়ে শুধুমাত্র তোমার পরিবারবর্গের জন্য জায়গা থাকবে না, যে হৃদয়ে সকলের জন্য জায়গা থাকবে।

তোমাকে সকলের জন্য বাঁচতে হবে। জগতের কল্যাণের জন্য বাঁচতে হবে। যে বলবে নিজের জন্য বাঁচতে হবে, নিজের পরিবারের জন্য বাঁচতে হবে, সে নির্বোধ। নির্বোধকে বোঝানোর মতো কিছু নেই, নির্বোধের কথায় আঘাত পাওয়ারও কিছু নেই। তুমি চারপাশের হাজারো পরিবর্তনে কর্ণপাত না করে, তোমার লক্ষ্যের দিকে সিংহবিক্রমে এগিয়ে যাও। তোমার জয় অবধারিত। আমি বলছি তুমি পারবে। তুমিও বিশ্বাস করো তুমি পারবে। তাহলেই পারবে।

স্বামীজির ভাষায়, "নীতিপরায়ণ ও সাহসী হও, হৃদয় যেন সম্পূর্ণ শুদ্ধ থাকে। সম্পূর্ণ নীতিপরায়ণ ও সাহসী হও, প্রাণের ভয় পর্যন্ত রেখো না। ধর্মের মতামত নিয়ে মাথা ঘামিও না। কাপুরুষেরাই পাপ করে থাকে, বীর কখনও পাপ করে না, মনে পর্যন্ত পাপচিন্তা আসতে দেয় না। সকলকেই ভালোবাসবার চেষ্টা করবে। নিজে মানুষ হও, আর যারা সাক্ষাৎ তোমার তত্ত্বাবধানে আছে, তাদেরকেও সাহসী, নীতিপরায়ণ ও সহানুভূতিসম্পন্ন করবার চেষ্টা করবে। হে বৎসগণ, তোমাদের জন্য নীতিপরায়ণতা ও সাহস ছাড়া আর কোনো ধর্ম নেই, এইটি ছাড়া ধর্মের আর কোনো মতামত তোমাদের জন্য নয়। যেন কাপুরুষতা পাপ, অসদাচরণ বা দুর্বলতা একদম না থাকে, বাকি আপনা-আপনি আসবে।

হে বীরহৃদয় বালকগণ, অধ্যবসায় করো। কাজ সবেমাত্র আরম্ভ হয়েছে। কখনও নিরাশ হয়ো না, কখনও বলো না, ‘আর না, যথেষ্ট হয়েছে।’ পবিত্রতা, অধ্যবসায় এবং উদ্যোম, এই তিনটি গুণ আমি একসঙ্গে চাই।

জগতের ইতিহাস হলো পবিত্র, গম্ভীর, চরিত্রবান এবং শ্রদ্ধাসম্পন্ন কয়েকটি মানুষের ইতিহাস। আমাদের তিনটি বস্তুর প্রয়োজন অনুভব করবার হৃদয়, ধারণা করবার মস্তিষ্ক এবং কাজ করবার হাত। সেই হাত ও মস্তিষ্কের সমন্বয়ে তোমরা প্ররিশ্রম করো। উন্নত হবার জন্য পরিশ্রম করো। ভালো হবার জন্য পরিশ্রম করো। কাজকে ভালবেসে পরিশ্রম করো। তবেই তুমি ভাল হবে। তবেই তুমি মহৎ হবে। তবেই তুমি অমর হবে। বিশ্বাস করো, হৃদয় ও মস্তিষ্কের সমন্বয়ে করা কোনো প্রচেষ্টাই বৃথা যায় না। চেষ্টা করলে তুমি যা চাও তাই পাবে, পাবেই পাবে। চলবে