প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

মহাকালে রেখাপাত

পর্ব ৪৬

স্বকৃত নোমান

প্রকাশিত : এপ্রিল ১৭, ২০২১

মুহম্মদ মহসিনের `জাদুবাস্তবতা` বইটি পড়তে পড়তে চোখে তন্দ্রা নেমেছিল। তন্দ্রা থেকে এসেছিল ঘুম। ঘুম ভেঙে গেল চিৎকারে। কার চিৎকার? একদল মানুষের চিৎকার। প্রতি রোজার মাসে রাত দুটা বাজার সঙ্গে সঙ্গে তারা চিৎকার শুরু করে, উঠুন উঠুন।

চিৎকার করে আরও কীসব বলে, স্পষ্ট বোঝা যায় না। আগে মুখে চিৎকার করতো, এ বছর থেকে হাতমাইক যুক্ত করেছে। প্রতিদিন তাদের চিৎকারে ঘুম ভেঙে যায়। আবার ঘুমিয়ে পড়ি। আজ ঘুম এলো না। জেগে আছি। জেগে আছি অতন্দ্র ডাহুকের মতো।

প্রযুক্তি এখন উৎকর্ষের চূড়ান্ত মাত্রায়। সেহরির ঘুম ভাঙানোর জন্য এখন এলার্ম ঘড়ি আছে, মোবাইল ফোনে এলার্ম সিস্টেম আছে। আপনি যখনই ঘুম থেকে জাগতে চান, আপনাকে প্রযুক্তি জাগিয়ে দেবে। কাউকে জাগিয়ে দিতে হবে না। তবু কেন প্রতি রোজার মাসে চিৎকার করে জাগিয়ে দেয়া?

কারণ আছে। কারণ হচ্ছে, ঈদের আগে চিৎকারকারী দল বাসায় বাসায় যাবে। চিৎকার করে `উপকার` করার জন্য টাকা চাইবে। প্রথম বছর আমার বাসায় এসেছিল তারা, আমি টাকা দিইনি। দ্বিতীয় বছর এসেছিল তারা, আমি দিইনি। তৃতীয় বছর থেকে আর আসে না। হয়তো তারা ধরে নিয়েছে, আমি দেব না। হয়তো তারা ধরে নিয়েছে, আমি হিন্দু কিংবা বৌদ্ধ-খ্রিস্টান।

এই ঢাকা শহরে কেবল মুসলমান থাকে না, অন্য ধর্মাবলম্বী মানুষেরাও থাকে। চিৎকারে তাদের ঘুম ভেঙে যায়। এই শহরে এমন বয়স্করাও আছে, যারা রোজা রাখতে পারেন না। অসংখ্য শিশু আছে, যারা রোজা রাখে না। কেন চিৎকার করে তাদের ঘুম ভাঙিয়ে দেয়া? অন্যকে কষ্ট দেয়া কি ইসলামের শিক্ষা? হে মুসলমান, কোরান কী বলে শোনো। কোরান বলে, `তোমরা স্বীয় প্রতিপালককে ডাকো কাকুতি-মিনতি করে, অত্যন্ত সংগোপনে। তিনি সীমা লংঘনকারীদের ভালোবাসেন না। (সূরা আরাফ: আয়াত ৫৫)

এই যে লোক দেখানো চিৎকার, এটা ইবাদত নয়। চিৎকার করে মানুষের ঘুম ভাঙিয়ে টাকা আদায়ের নাম ইবাদত নয়। এটা অসভ্যতা। যতদিন তোমরা সভ্য না হবে ততদিন মানুষকে কষ্ট দিতে থাকবে। মানুষকে কষ্ট দিয়ে কোনো ধর্ম প্রতিষ্ঠা করা যায় না। মানুষকে কষ্ট দিলে ধর্মের দুর্নাম হয়। তোমরা দিনের পর দিন সেই দুর্নাম করেই যাচ্ছ। তোমাদের কি মুক্তি নাই? চলবে

১৭ এপ্রিল ২০২১