মারিয়া সালামের মুভি রিভিউ ‘সামনে চলার মন্ত্র’

প্রকাশিত : জানুয়ারি ১৮, ২০২১

ত্রিভঙ্গ Tribhanga দেখলাম, সত্যিই আমাদের জীবন এমনই। নিজেদের জায়গায় দাঁড়িয়ে আমরা যে যার মতো সঠিক, কোনো ভুল ধরা পড়ে না। আবার অন্যকে দেখতে গেলেই তার ভুলগুলো চোখের সামনে এসে ধরা দেয়।

কাছের সম্পর্কগুলোর মধ্যে যে যোজন যোজন দূরত্ব তৈরি হয় একজন আরেকজনকে না বুঝতে পারা বা না চাওয়া থেকে, যে অভিমান থেকে, সেই গল্পই ‘ত্রিভঙ্গ’তে তুলে ধরেছেন পরিচালক রেণুকা সাহানি Renuka Shahane।

লেখিকা মা তার নিজের মতো জীবন বেছে নিতে গিয়ে সন্তানদের কষ্টের কারণ হয়েছেন, নিজেও কষ্ট পেয়েছেন। সন্তানরা তার বেদনা বুঝতে চায়নি। বরং মায়ের নিজের মতো জীবন বেছে নেয়া বা তাদের সময়মতো প্রোটেক্ট করতে না পারাকে অযত্ন মনে করে দূরে সরে গেছে।

তার অভিনেত্রী কন্যা নিজের সন্তানের জন্য সবরকমের সুবিধা নিশ্চিত করেও, সমাজের কৌতূহলের হাত থেকে তাকে বাঁচাতে পারেনি। মেয়েটা নিজের মধ্যে গুমরে মরেছে, এসব থেকে বাঁচতে মা আর নানির মতো স্বাধীন জীবন বেছে না নিয়ে পরিবারের চাপিয়ে দেয়া জীবন নিয়ে শান্তি আর সম্মান খুঁজেছে।

এখানে কাউকে ছোট বা বড় করা হয়নি, কাউকে ভুল বা সঠিক দেখানো হয়নি, সম্পর্কগুলো যেমন হয় তেমন করেই দেখান হয়েছে। এটাই সবচেয়ে ভালো লাগার বিষয়। অভিনয় বা মেকিং এসব নিয়ে বলার ধৃষ্টতা করি না।

দুইটা দর্শন খুব পছন্দ হয়েছে। এক. নিজের ইচ্ছার জীবনে অসম্মান বা কষ্ট আসতে পারে কিন্তু কারো সাথে আপোস করে চলার প্রয়োজন পড়ে না। আর সমাজের কাছে সম্মানের উঁচু আসনে বসতে চাইলে ব্যক্তি স্বাধীনতার সাথে আপোস করে চলতে হয়।

দুই. জীবনে যা ঘটে যায়, সেটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শুধরনো সম্ভব হয় না। কারণ জীবনে পেছনে ফিরে যাবার সুযোগ নাই। আমরা যেটুকু পারি তা হলো, ক্ষমা করে দিয়ে বা ক্ষমা চেয়ে নিয়ে নির্ভার হতে। অন্যের ভুল ক্ষমা করা আর নিজের ভুল বুঝতে পারাটাই সামনে চলার মন্ত্র।

লেখক: কথাসাহিত্যিক ও গণমাধ্যমকর্মী