মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মান

রেজা ঘটক

প্রকাশিত : মে ২৪, ২০২২

মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মান আবারো কমিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সোমবার প্রতি মার্কিন ডলারের বিনিময়মূল্য ৪০ পয়সা বাড়িয়ে ৮৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও এতে রপ্তানিকারক ও প্রবাসীরা লাভবান হবে।

অন্যদিকে আমদানিকারকদের খরচ যাবে বেড়ে। এর আগের সোমবার ৮০ পয়সা বাড়িয়ে ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা করা হয়েছিল ডলারের মান। এরপর আরও ১০ পয়সা বাড়ানো হয়। এক সপ্তাহের মধ্যে এ নিয়ে তৃতীয়বার মানি ডিভ্যালুয়েট করা হলো।

এবছর জানুয়ারি মাসের শুরুতে ডলারের বিনিময়মূল্য ২০ পয়সা বাড়িয়ে ৮৬ টাকা করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারপর ২৩ মার্চ তা আবার ২০ পয়সা বাড়িয়ে ৮৬ টাকা ২০ পয়সা করা হয়েছিল। এরপর ২৭ এপ্রিল বাড়ানো হয় ২৫ পয়সা। তাতে ১ ডলারের বিনিময়মূল্য দাঁড়ায় ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা। তারপর ৯ মে ডলারের বিনিময়মূল্য ২৫ পয়সা বাড়িয়ে ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়।

একদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে প্রতিনিয়ত ডলার বিক্রি করছে। আর ডলারের চাহিদা বেশি হওয়ায় ধীরে ধীরে দামও বাড়াচ্ছে। এভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, ডলারের দাম চাহিদা-যোগানের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত।

রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোগ্যপণ্য থেকে শুরু করে কাঁচামাল ও তেলের দাম বেড়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে জাহাজের ভাড়াও। এতে আমদানি ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৪৪ শতাংশ। ফলে চাপ পড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর। কারণ আমাদের আমদানি যে হারে বেড়েছে, রপ্তানি সে হারে বাড়েনি।

আবার প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স থেকে আয়ও কিন্তু কমে গেছে। এ কারণে প্রতি মাসেই ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। ফলে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে যোগান দিতে হচ্ছে আমদানির খরচ। এখন আমাদের যে রিজার্ভ রয়েছে, তা দিয়ে সাড়ে পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। আবার আমদানি খরচ এভাবে বাড়তে থাকলে রিজার্ভ আরও কমে যাবে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপ রয়েছে রিজার্ভের হিসাব সঠিক নিয়মে করার।

আইএমএফ-এর শর্ত পূরণ করতে গেলে রিজার্ভের অর্থে গঠিত রপ্তানিকারকদের ঋণ তহবিল, সরকারি প্রকল্প ও শ্রীলঙ্কাকে দেওয়া ঋণের পরিমাণ এবং সোনালী ব্যাংকে রাখা আমানত রিজার্ভের হিসাব থেকে বাদ দিতে হবে। এতে রিজার্ভ কমবে ৭০০ কোটি ডলারের বেশি। বর্তমানে আমাদের রিজার্ভ রয়েছে ৪ হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলার।

ব্যাংকাররা বলছেন, ঈদের কারণে দেশে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ছিল উল্লেখ করার মত। কিন্তু আমাদের বর্তমানে আমদানি খরচ যে হারে বেড়েছে, প্রবাসী আয় ও রপ্তানি আয় দিয়ে সেই খরচ মেটানো যাচ্ছে না। এ কারণে ডলার নিয়ে দেশের মুদ্রাবাজারে এখন অস্থিরতা বিরাজ করছে। খুব শিগগিরই এ সংকট কমারও কোনো লক্ষণ নেই।

ফলে এ সংকটের প্রভাব পড়ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে গচ্ছিত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। পাশাপাশি ব্যাংক ব্যবস্থায় নগদ টাকারও তরল সংকট দেখা দিয়েছে। কারণ, বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রি করে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে। এতে চলতি হিসাবে লেনদেন ভারসাম্যেও এক ধরনের ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। এ নিয়ে চলতি বছরে এ পর্যন্ত ৬ বার টাকার অবমূল্যায়ন করল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

লেখক: কথাসাহিত্যিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা