মুহাম্মদ আসাদ

মুহাম্মদ আসাদ

মাহিনূর রহমানের গদ্য ‘যে স্রোত থামার নয়’

প্রকাশিত : ডিসেম্বর ১৭, ২০২০

বিশ্বব্যাপী আলোচিত ন‌ওমুসলিম মুহাম্মদ আসাদ বলেন, কালের অনেক ঝড়ঝাপটা উজিয়ে মদিনার এক গ্রন্থালয়ে এখনো ইসলামের যত কিতাব রক্ষিত আছে, সেগুলোর দিকে তাকালেও কত বিস্ময় জাগে! কী তার বিশালতা! আগের কত শ্রম ও সাধনা! আর এখন... আমি বিভিন্ন জিনিস ভাবতে থাকি, আমার কল্পনায় ভেসে ওঠে অতীত ও অতীতের ইলমি সাধনা।

সে তন্ময় হয়ে কিতাবগুলো দেখতে থাকে, এমন সময় প্রাজ্ঞ শায়খ আবদুল্লাহ ইবনে বুদাইহিদ বলে ওঠেন, তোমাকে কি যেন পীড়া দিচ্ছে বেটা? তোমার মুখে এই তিক্ততার ছাপ কেন, বলো তো?

মুহাম্মদ আসাদ বললেন, শায়খ, আমি ভাবছিলাম আমরা মুসলমানরা কত দূরে চলে গেছি এগুলো থেকে। আমাদের বর্তমান দুঃখ-দুর্দশা ও অধঃপতনের দিকে।

শায়খ বললেন, হ্যাঁ বেটা, একদিন আমরা মহান ছিলাম। ইসলামের শিক্ষা আমাদের বড় করেছিল। আমরা ছিলাম একটি পয়গামের বাহক। যতদিন আমরা সেই পয়গামের প্রতি বিশ্বস্ত ছিলাম, ততদিন আমাদের হৃদয় ছিল উদ্দীপিত ও অনুপ্রাণিত আর আমাদের মন-মানস ছিল আলোকিত এবং উদ্ভাসিত। কিন্তু যেই আমরা ভুলে গেলাম কী উদ্দেশ্যে আল্লাহ আমাদের মনোনীত করেছেন, তখনই ঘটল আমাদের পতন।

এরপর তিনি ব‌ই ভাণ্ডারের দিকে ইশারা করে বললেন, আমরা অনেক দূরে চলে গেছি এগুলো থেকে, অনেক দূরে।

সেই ব‌ই ভাণ্ডারের দিকেই আজ আবার যাত্রা করতে চাচ্ছে নবপ্রজন্ম। ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রাহি, ইমাম ইবনুল তাইমিয়্যা রাহি, ইমাম ইবনু আবিদ দুন‌ইয়া রাহি, ইমাম ইবনুল জাওযি রাহি, ইমাম নববি রাহিসহ নামকরা অনেক ইমাম এবং বর্তমান সময়ের অনেক আলেমের ব‌ই বাংলায় অনুদিত হয়েছে এবং হচ্ছে। নতুন প্রজন্ম জানার ক্ষুধা নিয়ে এসব ব‌ইয়ের দিকে ছুটে যাচ্ছে।

আর পাশাপাশি আরিফ আজাদ, শামসুল আরেফীন শক্তি, আরিফুল ইসলাম, আসিফ আদনান, শিহাব আহমেদ তুহিন, আবদুল্লাহ আল মাস‌উদ, আবুল হাসনাত কাসিম, মহিউদ্দিন রূপম, জাকারিয়া মাসুদসহ অনেক ভাইবোন এই প্রজন্মের ক্ষুধা নিবারণের জন্য অনবরত লিখে চলেছেন। ক্লান্তি তাদেরকে ছোঁয় না, প্রতিপালকের জন্য নিরলসভাবে লিখতে কোনো সমস্যা তাদের আটকাতে পারে না।

ইসলামকে জানার জন্য আমাদের এই প্রজন্মের যে ক্ষুধা ও তৃষ্ণা, শিকড়ের সন্ধানে যে অনবরত ছুটে চলা, দ্বীন ইসলামের রাস্তায় থাকার জন্য এবং চূড়ান্ত গন্তব্যে পালতোলা নৌকা ভিড়ানোর জন্য যে প্রচেষ্টা, তাতে যেন ব্রেক না পড়ে। পয়গামের বাহক হ‌ওয়ার জন্য লেখক ও পাঠকের যে স্রোত তা যেন কোনোরূপ বাঁধ আটকে না দিতে পারে। `মহান` জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার যে সম্ভাবনা আকাশের নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বল করছে, তার প্রভা যেন কখনো নিভে না যায়। উল্টো তা যেন সমাজের স্রোতের বিপরীতে গিয়ে ইসলামের সৌন্দর্য ও দীক্ষাকে ছড়িয়ে দেয়।

যেভাবে আন্দালুসের আকাশে ইসলামের সাদা পতাকা উড়েছিল, কন্সটান্টিনোপোলের আকাশে কলেমা খচিত লাল পতাকা উড়েছিল, কোনোরূপ রক্তপাত ছাড়াই খলিফা ওমরের হাতে বায়তুল মুকাদ্দাসের চাবি উঠিয়ে দেয়া হয়েছিল, শিক্ষা ও সংস্কৃতির চূড়ায় বাগদাদ পুরো পৃথিবীর প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল— সেভাবেই যেন এই জ্ঞানপিপাসুদের স্রোতের শক্তিতে ইসলামের সৌন্দর্য পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে আর এই স্রোত কিসের?

এই‌ স্রোত কলম ও ব‌ইয়ের, এই স্রোত পাঠক ও লেখকের, এই স্রোত ইলম ও আমলের, এই স্রোত সিরাতাল মুস্তাকিমের দিকে ধাবমান নবপ্রজন্মের।