মুষ্ঠিযোদ্ধা মুহাম্মাদ আলীর ইসলাম ধর্ম গ্রহণের নেপথ্যে

সাফওয়ান বিন বাশের

প্রকাশিত : জুন ০১, ২০২১

মুহাম্মাদ আলী। আগের নাম, ক্যাসিয়াস মার্সেলাস ক্লে জুনিয়র। জন্ম ১৭ জানুয়ারি ১৯৪২। তিনি ছিলেন একজন আমেরিকান মুষ্টিযোদ্ধা। বক্সিং ক্যারিয়ারে ৬১টি বক্সিং ম্যাচের মধ্যে তিনি ৫৬টিতে জয়লাভ করেন। আর সেগুলোর মধ্যে ৩৭টিই নক-আউট। বিবিসির জরিপে, গত শতাব্দীর সেরা অ্যাথলেট হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন মুহাম্মাদ আলী। ক্যারিয়ারে অর্জন করেছেন তিনটি হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ানশীপ, একটি অলিম্পিক স্বর্ণপদকসহ ৩১টি মেজর ট্রফি।

তবে তার জীবনচলা সহজ ছিল না। অন্য আট-দশটা কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের মতো তিনিও অনেকবার বর্ণবাদের শিকার হন। এর মধ্যে একটি ঘটনা মুহাম্মাদ আলীর অলিম্পিকে স্বর্ণপদক জেতার পরের। তিনি একটি রেস্টুরেন্টে খেতে যান। কিন্তু রেস্টুরেন্টের ওয়েটাররা কৃষ্ণাঙ্গদের খাবার পরিবেশনে অসম্মতি জানায়। মুহাম্মাদ আলী রাগে ক্ষোভে তার একমাত্র অলিম্পিক স্বর্ণপদকটি `ওহিয়ো` নদীতে ফেলে দেন।

ইসলাম গ্রহণের পর তিনি বলেন, আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি, কারণ অন্য কোনো ধর্মের মানুষের মধ্যে আমি এত প্রেম-ভালবাসা দেখিনি। একে অন্যকে কোলাকুলি করা, সালাম বিনিময়, একসাথে প্রার্থনা করা। ভাইবোন, মা-বাবা, পারিবারিক শিক্ষা এবং মূল্যবোধ ইসলামেই সবেচেয়ে শক্ত। তাই ইসলাম ধর্ম নিয়েছি।

তার আত্মজীবনী থেকে জানা যায়, কৈশরে একদিন রাস্তা দিয়ে রোলার স্কেটিং করে যাওয়ার সময় তিনি কালো স্যুট পরা এক লোককে `নেশন্স অব ইসলাম` এর পত্রিকা বিক্রি করতে দেখেন। মুহাম্মাদ আলী `নেশন্স অব ইসলাম` এবং তার নেতা `এলিজা মুহাম্মাদ` এর নাম আগেও শুনেছেন। দলটি কৃষ্ণাঙ্গদের উপর শেতাঙ্গদের শোষণ-অত্যাচার এবং তাদের আত্ম-উন্নয়নমূলক নানা প্রচারণা চালাতো।

মুহাম্মাদ আলী কিছুটা অনিচ্ছাসত্ত্বেও ভদ্রতার খাতিরে তার কাছ থেকে একটি পত্রিকা নিলেন। পত্রিকাটিতে একটু চোখ বোলাতেই সেখানের একটি কার্টুনের দিকে তার দৃষ্টি আটকে যায়। সেখানে দেখানো হচ্ছে, একজন শেতাঙ্গ মালিক তার কৃষ্ণাঙ্গ দাসকে মারধর করে তাকে যিশুখ্রিস্টের কাছে প্রার্থনা করতে চাপ দিচ্ছে। কার্টুনটি দ্বারা বোঝানোর উদ্দেশ্য ছিল, শেতাঙ্গরা জোর করে কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর খ্রিস্টধর্ম চাপিয়ে দিচ্ছে।

তিনি বুঝতে পারেন, খ্রিস্টধর্ম তার পছন্দ নয়। ক্যাসিয়াস ক্লে নামটিও তার পছন্দ নয়। তিনি বুঝতে পারেন, তিনি স্বেচ্ছায় এ ধর্ম গ্রহণ করেননি। তিনি নিজে তো তার নাম ক্যাসিয়াস ক্লে রাখেননি। তাহলে কেন তাকে ওই দাসত্বের চিহ্নগুলো বহন করতে হবে? আর তিনি যদি তার ধর্ম এবং নাম না বহন করতে চান তাহলে কী পরিবর্তন তিনি আনতে পারেন?

১৯৬৪ সালে তিনি ইসলামি সংগঠন `নেশন্স অব ইসলাম`-এ যোগ দেন। ১৯৬৪ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে বক্সিংয়ে হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ানশীপ জেতেন। যা তাকে এনে দ্যায় তৎকালীন সর্বকনিষ্ঠ চ্যাম্পিয়ানের খেতাব। জেতার পর মুহাম্মাদ আলী জনসম্মুখে ঘোষণা করেন তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, আমি আল্লাহ ও শান্তিতে বিশ্বাস করি। আমি শেতাঙ্গদের এলাকায় ঢুকতে চেষ্টা করব না। কোনো শেতাঙ্গ নারীকে বিয়েও করতে চাই না। মাত্র ১২ বছর বয়সে আমাকে খ্রিস্টান বানানো হয়। কিন্তু তখন আমি বুঝতে পারিনি আমি কী করছি। আমি এখন আর খ্রিস্টান নই। আমি জানি, আমি কোথায় যাচ্ছি। আমি সত্য কী, তাও জানি। তোমরা আমাকে যা বানাতে চাও আমি তা হতে চাই না। আমি যা হতে চাই সে ব্যাপারে আমি আজ মুক্ত।