
মূল্যহীন ভেঙে যাওয়া চুক্তির ক্ষেত্রে ‘প্রতারণা’র মামলা অদ্ভুত
জাকিয়া সুলতানা মুক্তাপ্রকাশিত : নভেম্বর ০৫, ২০২১
বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ নামের আইনটি সংশোধন করা এখন সময়ের দাবি। নারীদের এই জায়গাটায় একটু আত্মসম্মানবোধ রাখা দরকার বলে মনে করি। কোনো নারীর সাথে সামাজিক চুক্তি ছাড়া বিছানায় শোয়ার দায় পুরুষের যদি না থাকে, নারীরও থাকা ঠিক নায়। এটা একবিংশ শতাব্দী। চাইলেই যে কেউ সঙ্গীর সাথে শোয়ার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে পারে। সেটা না করে বরং আবেগে দুজনে ভেসে, এরপর একজনের ওপর সব দায় চাপালে তো মুশকিল। সন্তান জন্ম দেয়ার বিষয় এলে সেই সন্তান জন্ম দেয়া ও তাকে প্রতিপালন করার সামর্থ্য থাকলেই তবে আবেগের দরজায় খিল না দিলে চলে। নাহলে নয়। সেটা বৈবাহিক চুক্তির ক্ষেত্রেও সত্য, বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের ক্ষেত্রেও সত্য।
এদিকে বিয়ে নামক একটি চুক্তি দিয়ে ভূমিষ্ঠ হওয়া সন্তানকে বৈধ-অবৈধ বিবেচনার কোনো মানেই হয় না। এমনকি কোনো সম্পর্কও বিয়ে নামক সামাজিক চুক্তি দিয়ে বৈধ-অবৈধ বলে সংজ্ঞায়িত হওয়ার বিষয় বলে মনে করি না। সামাজিক চুক্তির আওতায় হোক কী ব্যক্তিগত দ্বি-পক্ষীয় স্বাধীন চুক্তির আওতাতেই হোক, যে কোনো প্রাপ্তবয়স্ক চুক্তির সৌন্দর্য নির্ভর করে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ-ভালোবাসা-বন্ধুত্ব-সহনশীলতা-সহমর্মিতা ও দায়িত্ববোধের ওপর। সেটা না থাকলে একটা সামাজিক চুক্তি বা স্বাধীন দ্বি-পাক্ষিক চুক্তির কী মূল্য! মূল্যহীন একটা ভেঙে যাওয়া চুক্তির ক্ষেত্রে ‘প্রতারণা’র মামলা করাটাই অদ্ভুত। তবুও যদি মেনে নিই, হতে পারে, তবুও এসব ক্ষেত্রে ‘বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ’ মামলা হয় কীভাবে?
প্রলোভন দেখানো যদি অপরাধ হয়, প্রলোভনে পড়াটাও তো অপরাধ। কারণ এক্ষেত্রে একটা লোভি চরিত্র প্রকাশিত হয়। অপ্রাপ্তবয়স্ক হলে না হয় মানা যায়, অশিক্ষিত কেউ কিংবা গ্রাম্য সহজ-সরল মানসিকতার কারোর ক্ষেত্রে না হয় তাও মানা যায়; উচ্চশিক্ষিত প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে এই মামলা দেয়াটা হাস্যকর ছাড়া আর কিছুই নয়। আমি সহজ কথা বুঝি, শোয়ার ইচ্ছা হলে শোবেন, ভালো কথা। সামাজিক চুক্তি করেই করেন আর ব্যক্তিগত ভাব-ভালোবাসাতেই করেন, তাতে কোনো অসুবিধা দেখি না। ক্ষেত্রবিশেষে এক সম্পর্কে থেকে একাধিক ভিন্ন সম্পর্কে জড়ানোতেও অভিযোগ করার খুব শক্ত ভিত্তি এই কালে নেই (যদিও মানতে কষ্ট হয়, সেটা আলাদা কথা)। কিন্তু শোয়াশুয়িগুলোর মধ্যেও একটা দায়িত্ববোধ রাখার প্রয়োজন আছে।
আবেগে ভাসবেন দুজনে, তাতে শিশুভ্রুণকে নিমন্ত্রণ জানাতে হবে কেন আর সেই ভ্রুণের দায়িত্ব নেয়ার সামর্থ না থাকলে তাকে মেরে ফেলে খুনী হতে হবে কেন? একটা প্রতিরোধ ব্যবস্থা আবেগের দরজায় খানিক দিলেই তো হয়। এতটুকুও করার কথা যাদের মনে থাকে না, তারা আবার একে অপরকে আবেগ চলে গেলে মামলা দেয় কীভাবে? ছাগলামি আনলিমিটেড! আর যে লোক কাউকে ‘বিষয়টি আমাদের আলোচনার ৫৫ নাম্বার আইটেম’ বলে, আর যাকে বলতে পারে; তাদের দুজনকে নিয়েই আমার চূড়ান্ত বিরক্তি। আমি লোকটার এই রকম ঘৃণ্য প্রতারণা ও অসভ্যতার যথাযথ বিচার দাবি করি, আর ভদ্রমহিলার বেক্কলগিরি ও লোভি চরিত্রের প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করি। সম্ভব হলে তাকেও ভ্রুণ হত্যার সহযোগী হিসেবে শাস্তির আওতায় আনলে খুশি হবো।