মেহেদি রাসেলের প্রকাশিতব্য বই থেকে কবিতা

প্রকাশিত : জানুয়ারি ০৯, ২০২০

এ বছর বইমেলায় প্রকাশিত হতে যাচ্ছে মেহেদি রাসেলের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘তোমার দিকে যাই’। নৈঋতা ক্যাফে থেকে প্রকাশিত এ বইটি থেকে পাঁচটি কবিতা প্রকাশিত হলো ‘ছাড়পত্র’র পাঠকদের জন্য।


শীতের চিঠি

সারাটা দিন কোথায় ছিলে কাল?
জারুলতলা?শেফালিদের ঝাঁকে?
পথের ধারে গাছের চেনা ডাল
বসতে দেবে শালিক পাখিটাকে।

পুকুর ঘাটে, উঠোনটার পাশে
বিকেল হলে তোমার চেয়ে থাকা
খেলার মাঠে ইটের নিচে ঘাসে
সংগোপনে একটি চিঠি রাখা

বুক কাঁপছে, উত্তেজনা খুব
লিখেছ- দেখা হবে নদীর ধারে।
শীতের ভোরে কুয়াশা অপরূপ
কিশোরবেলা, মধুমতির পারে।


নারীগণ


অবিশ্বস্ত নারীদের আমি অনেক দেখেছি-
তাদের ঠোঁটের লাল তোমাকে ঘুমোতে দেবে না
তাদের কটাক্ষ এমনকি খুনিকেও ক্ষণিক থামায়!
প্রেমিকের সরলতা তারা চড়া দামে বাজারে বিকিয়ে
অবলীলায় লিপ্ত হতে পারে পৃথক পুরুষে।

আহা! যৌনতার পর অন্ধাকারে অন্তর্বাস হাতড়ে নিয়ে
চলে যায় সেসব পুরুষ।
সঙ্গীনির দিকে একবার ফিরেও দেখে না।

ফলত, অনিদ্র মধ্যরাতে তারা স্নানঘরে যায়
তাদের নগ্নতা বেয়ে গলে পড়ে
উদ্দাম সন্ধ্যার মসৃণ মেকাপ।

অবিশস্ত, তবু  সে তো নারী
চিরকাল চেয়েছিল লম্পট নয়
প্রেমিকই খুলে নিক তার রঙিন কাঁচুলি।

ভাষা

ওই তো হরিৎ ঝর্ণা ঝরে বনে
ওই তো ফুলে পাগল করা ঘ্রাণ-
ভোরের বেলার রৌদ্র রাঙা দিনে
ওই তো পাখি গাইছে আবার গান।

ওই তো বাতাস নদীর জলে ভিজে
কুলুকুলু ধ্বনির সাথে ভাসে
পত্রঝরা বনভূমির ছায়া-
ওই আমাদের ডাকছে অবকাশে।

ওই যে আলো গাছের পাতার ফাঁকে
খেলছে কেমন লুকোচুরি খেলা-
ওই তো পুকুর মাখছে না তার গায়ে
সকালবেলার রোদের অবহেলা।

তোমার আমার প্রাণের যত প্রেম
ওই তো নদী, ঝর্ণাধারা জানে!

হৃদয় যখন হৃদয় ছুঁয়ে থাকে
নীরবতার হাজার তখন মানে।

প্রসঙ্গ
(পরীকে)

একদিন সবকিছু ইতিহাস হয়ে যাবে।

নদীর প্রবাহ প্লাবন, পালিত পাখির ঝাঁক
সন্ধ্যার মেঘের বিষাদিত ছায়া
তোমার নধর স্তন, তার উদ্ধত চূড়া
আর গ্রীবার গর্বিত ভঙ্গি
একদিন, একদিন সব ইতিহাস হয়ে যাবে।

বনের মর্মর কিংবা শান্ত ঝরনার ঝিরি
বহুদূর পথ গিয়ে পূনরায় তার চলমানতা
আবার হারিয়ে ফেলে দিগভ্রান্ত হয়।
অন্ধ ভিখারি যেমন পতিত মুদ্রার শব্দে
হাতড়ায় তার নিরাপদ নির্ভরতা।

অথচ কোনো কোনো দিন ঘরে ফিরবার তাড়না থাকেনা।
স্বপ্নের সন্ধানে মানুষেরা তবু নিদ্রার নিকটে যায়
নির্ভার নতির কথা তারেই জানায়।

উচ্ছ্বাস চিরদিন থাকে-
আর থাকে পরাজিতের কান্না
তারা খুব পাশাপাশি থাকে।
বোধের অতীত জ্ঞানে তবু কত দূর!
অথবা সমস্ত সাম্যের ধারনা এভাবেই
নির্ধারিত হয়ে আছে চিরকাল।

যাত্রা

হয়তো সমুদ্রে যাব-

ভেসে ভেসে পেয়ে গেলে কোনো দ্বীপ
বনলতা আর ঘাস দিয়ে বানাব কুটির
মমতার মিহিন দেয়াল তুলেব সেখানে
জমিতে বুনব সদবৃক্ষের বীজ

পাখিদের কাছে তুমি
শিখে নিও গানের কৌশল
অসুখের দিনে দিও সুরের শশ্রুষা।

এখানে ভীষণ রক্তপাত।
চক্ষুষ্মান মানুষেরা একে অপরের চোখ তুলে নিয়ে
ক্রমান্ধকারের দিকে উল্লাসে ছুটে যাচ্ছে এখানে।
ভাইয়ের প্রতি মারণাস্ত্র তাক করে আছে ভাই
আর, প্রেমিকার মুখে এসিড ছুঁড়ছে প্রেমিক;

অবিশ্বাসের ডানায় ভর করে সভ্যতার সন্তানেরা
দৃষ্টিহীন উড়ে উড়ে কতদূর যাবে?

তার চেয়ে চলো অই রোদের অত্যাচারে
আমাদের দেহ পেতে দিয়ে চুপচাপ থাকি।
সন্ধ্যার বাতাসে যখন শীতল প্রশান্তি নামে
তখন জোনাকি হয়ে উড়ি ঝোপেঝাড়ে
বনের সবুজ স্নেহ গায়ে মেখে
আমাদের হৃদয়ের মুখোমুখি হই

মর্মের বেদনাবোধ ভাসাই সমুদ্রজলে।