মোহাম্মদ রোমেল

মোহাম্মদ রোমেল

মোহাম্মদ রোমেলের কলাম ‘ইসলামের সিলসিলা ও না-লায়েক আদমিগণ’

প্রকাশিত : মে ১২, ২০২২

আমি বাঙালি মুসলমান। নিজে নিজে কোরআন পড়তে জানি। আরব, নবিজি ও ইসলামের ইতিহাস জানি। আল্লাহ তার নবির মাধ্যমে বান্দাদের ম্যাসেজ দিয়েছেন একমাত্র তারই ইবাদত করতে। তার কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করতে। সে কারণে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো গোলামি ইসলামে নিষিদ্ধ। ফলে সামন্তীয় চিন্তার পণ্ডিত ও আধুনিকতাবাদী স্কলারদের তৈরি করা নিজস্ব জ্ঞানের কাছে মাথানত করা বা দাসত্ব করার কোনো বাধ্যবাধকতা ইসলামে নাই। ফলে দেশ ও কালের গণ্ডিতে বেড়ে ওঠা মানবীয় সীমাবদ্ধতা সম্পন্ন ব্যক্তির উৎপাদিত যে কোনো সংশয়ী জ্ঞান মানতে জোড়াজোড়ি বা নসিহত করা কতটা ইসলাম সম্মত, এইটা নিয়া ইসলামের ইতিহাসে প্রশ্ন থেকে গেছে।

ফলে পুরানা জ্ঞানের লিগাসী নিয়া অথরিটির ভঙ্গিতে যারা সামনে এসে মুসলমানের টুঁটি চেপে ধরতে চায়, বলতে চায় তাদের ব্যাখ্যাই ছহি, এইটাই মানতে হবে, এইভাবেই ইসলাম বুঝতে হবে— তারা মূলত সচেতনে-অচেতনে নিজেদের আল্লাহর জায়গায় বসায় ফেলতে চায় (নাউজুবিল্লাহ)। যেমন: খ্রিস্টান পোপ নিজেদের অথরিটি জায়গায় বসায় রাখছে।

একজন মুমিন মুসলমানের স্বাধীন কর্তাসত্তা সরাসরি আল্লাহ ও তার আনুগত্যের সাথে কানেক্টেড। ফলে ইসলামে মাঝখানের কারো জ্ঞানগত ব্যাখ্যা মানার বাধ্যবাধকতা নাই। প্রত্যেক মানুষকে আল্লাহ চিন্তার ক্ষমতা দিয়া ভালো-মন্দ বিচার করার বিবেক দিয়া পয়দা করেছেন। তার ভালো ও মন্দ কাজের জবাবও তাকেই দিতে হবে। অন্য কোনো পণ্ডিত বা জ্ঞানীলোক আমার-আপনার জবাবদিহিতা আল্লার কাছে করবে না।

কিন্ত কিছু আধুনিক শিক্ষিত পণ্ডিত তাদের গোষ্ঠিগত কায়েমি স্বার্থে অন্যদের ওপর ছুরি ঘুরাইয়া তাদের ‘ইসলাম’ ব্যাখ্যা মানতে বাধ্য করতে চায়। তাদের আসল লক্ষ্য ইসলামের প্রাধান্য কায়েম নয়, নিজেদের গোষ্ঠীগত প্রাধান্য কায়েম করা। এইটা যখন আপনি মানেন না বা চ্যালেঞ্জ করেন, তখন তারা নানান ধরনের ট্যাগিং ও মিথ্যা অপবাদ দিয়া আপনাকে নাজেহাল করতে চায়। তারা তাদের গোষ্ঠীস্বার্থ আড়াল করে নিজেদের ছহি অথরিটির ভঙ্গিতে হাজির করে অন্যদের ক্রমাগত নাজেহাল করতে থাকে। ইতিহাসে বাতিল হয়ে যাওয়া সামন্তীয় গোষ্ঠীতন্ত্র জাহির করতে থাকে। প্রোপাগাণ্ডা করতে থাকে আপনি ইসলামের বাইরে চলে গেছেন। যেন ইসলাম তার গোষ্ঠিগত বাপ-দাদার সম্পত্তি। সকলকে ইসলামের সিলসিলা থেকে খারিজ করে দখল নিতে পারাই যেন তাদের কাজ। ফলে একে ওকে ইসলামবিরোধী ট্যাগ দিয়া সেই কাজ সারে।

এরা অনেকদিন ধরে এই ভঙ্গিতে সোস্যাল মিডিয়ায় সঙ্ঘবদ্ধ সন্ত্রাস করে যাচ্ছে। হুটহাট একে-ওকে ইসলামবিরোধী ট্যাগ দিয়ে মানুষের সহজ সেন্টিমেন্টকে উস্কায় দিচ্ছে। অনেকে তাদের উস্কানিতে বিভ্রান্ত হয়ে সেইসব প্রচার করছে। তার ফলে জালিমদের বানানো ডিজিটাল আইনে জেলেও গেছেও। যেন জালিমদের রসদ যোগানোই তাদের মনজিলে মকসুদ।

এইসব সঙ্গবদ্ধ প্রোপাগাণ্ডা পরিষ্কারভাবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। তাদের কর্মের পরিষ্কার ফল হচ্ছে, বাংলাদেশে ইসলাম নিয়ে জ্ঞানগত আলাপ-আলোচনার পথ বন্ধ করে দেয়া। এইকালের প্রয়োজনে মুসলমানের জন্য নতুন জ্ঞানের উৎপাদন আটকায় দেয়া। বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশ তথা দুনিয়াতে বাঙালি মুসলমানকে একটা পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠি হিসাবে কুয়ার মধ্যে রেখে দেয়া। এইটা এককালে বাঙালি জাতিবাদীরা করত ইসলাম নিয়া আলাপ-আলোচনা সমাজে-পাবলিক পরিসরে করতে না দিয়ে। করলেই আপনাকে মৌলবাদীসহ নানান ট্যাগিং দিত। এখন এই গোষ্ঠীবাদী সামন্তীয়রা করছে উল্টা রেটরিক দিয়া। যা বাংলাদেশের উপর আধিপত্য করা বিদেশি নানান হায়েনাদেরও চাওয়া। কারণ স্বাধীন চিন্তাশীল যে কোনো কর্তাসত্তার বিকাশ বাংলাদেশের ওপর তাদের চলমান আধিপত্য কায়েম রাখার জন্য বিপদজনক।

রাজনৈতিক ভাবে না-লায়েক এইসব পুরুষতান্ত্রিক আদমিরা সেই বিপদজনক কাজে লিপ্ত। ফলে তাদের কর্মের ধরন এমনভাবে প্রকাশ-প্রচার হচ্ছে যে, তারা চায় না বাংলাদেশে ইসলামের এমন কোনো জ্ঞানগত বিকাশ, যে বিকাশে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল বিশ্বাসের মানুষেরা স্বস্তির সাথে তার রূপে আপলুত হবে, নানান ফালতু হাওয়াই বিভেদ ভুলে একটা সম্মিলিত শক্তিশালী জনগোষ্ঠি হিসাবে উপমহাদেশ তথা দুনিয়ায় খাড়াবে। নানান সংকীর্ণ বিভ‌ক্তির বাইরে একটা জ্ঞানভিত্তিক জনগোষ্ঠির হিসাবে আমরা পৃথিবীতে বুক টানটান করে দাঁড়াব। পৃথিবীকে বাংলার ভূগোল থেকে নতুন দিশা দেব।

ফলে নানান ধোয়াশা মার্কা কথার ছলে তাদের রাজনৈতিক কাণ্ডজ্ঞানহীন সাম্প্রদায়িক জাতিবাদী তথা বিভক্তিবাদি একটিভিটি ফ্যাসিস্টদেরই সাহায্য করছে। সাহায্য করছে বাংলাদেশের পরাধীনতাকে আরো লম্বা করতে। যেমনটা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের গণ মানুষের স্বার্থ বুঝতে অক্ষম ছিল  খনকার কোলাবেটররা, ফলে তাদের কর্ম-চিন্তা পাকিস্তানিদের গণহত্যার সাথে মিশে গিয়েছিল। এখনও তারা সেই সিলসিলার বেহুশ দশা থেকে মুক্ত হয় নাই। নিশ্চয়ই আল্লাহ ২০২২ সালে জালিমদের থেকে বাংলাদেশের সকল মানুষকে হেফাজত করবেন। আমিন।

লেখক: চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সম্পাদক www.banan.space