রেজা ঘটকের গদ্য ‘বইমেলায় ডায়েরি’

পর্ব ১

প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০২৪

অমর একুশে বইমেলার দ্বিতীয় দিন শুক্রবারে প্রথম যাবার সুযোগ হলো। বৃহস্পতিবার মাঘের শেষের বৃষ্টি বইমেলার মাঠের ধুলো হজম করে নেওয়ায়, আজ ধুলোহীন বইমেলায় ঘুরে একটু আরাম লেগেছে। তবে আজ পুরো বইমেলা ঘুরতে পারিনি। আজ বইমেলার মাঠে প্রায় পাঁচ মাইল হেঁটেছি। কোথায় কোন স্টল এসব ঘুরে ঘুরে দেখেছি। আজ খুব একটা বই দেখার চেষ্টা করিনি। সবার সাথে কুশল বিনিময় আর আড্ডা মেরেই সময় কেটেছে।

এবারের বইমেলার নকশা অনেকটাই গোছানো মনে হয়েছে। বইমেলার মাঠে এখনও প্রায় ১০ শতাংশ স্টলের কাজ শেষ হয়নি। খোদ বাংলা একাডেমির সাজসজ্জাও এখনো শেষ হয়নি। বইমেলার মাঠে কোনো চায়ের স্টল দেয়নি। এমনকি রমনা কালী মন্দিরে আগের বছরগুলোতে যেখানে আমরা চা খাবার সুযোগ পেতাম, সেই সুযোগটিও রাখা হয়নি। ফলে এবারের বইমেলা চা-প্রেমীদের খুব হতাশ করবে।

বইমেলায় ঢুকতে টিএসসি গেট পেরিয়েই মূল মেলায় ঢোকার ব্যবস্থাটি ভালো হয়েছে। পাশাপাশি শিখা চিরন্তন থেকে সোজা রাস্তা থেকে মেলায় প্রবেশের সুযোগটি খোলা রাখলে ভালো হতো। এবার রমনা কালী মন্দিরের গেট থেকে বইমেলায় প্রবেশ ও প্রস্থান এবং দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি পর্যন্ত মেট্রোরেলের নিচ থেকে পায়ে হেঁটে বইমেলায় প্রবেশ ও প্রস্থানের সুযোগটি আমার পছন্দ হয়েছে। পুরো বইমেলা চলাকালীন সময়ে টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর রাস্তা অংশটি বন্ধ রাখলেই ভালো হবে।

বইমেলা থেকে মেট্রোরেলে যাবার সুযোগ করার জন্য মেট্রোরেল রাত ৯.৩০ টা পর্যন্ত চালু রাখা এখন সময়ের দাবি। আশা করি মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ বইমেলায় আগতদের বাড়িতে ফেরার সুযোগ করার জন্য মেট্রোরেলের সময় সূচিতে অচিরেই পরিবর্তন আনবে।

বইমেলার প্রতিটি কর্নারে খাবার জলের অবাধ ব্যবস্থা করা জরুরি। বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষকে বলব, বইমেলায় সবার জন্য খাবার জলের উন্মুক্ত ব্যবস্থা দ্রুতই করা হোক। এবার বইমেলায় খাবারের দোকান দেওয়া হয়েছে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের দিকে। বইমেলার প্রবেশ ও প্রস্থান পথে খাবারের দোকান বরাদ্দ না দেওয়ার জন্য বাংলা একাডেমিকে ধন্যবাদ।

এবছর `লেখক বলছি` মঞ্চ ও নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন মঞ্চ ঠিক কোথায় দেওয়া হয়েছে, এখনও বইমেলা ঘুরে বোঝা যায়নি। বইমেলার বিশাল চত্বরে প্রয়োজন মতো বসার ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। পুরো বইমেলা ঘুরে যাদের বসতে ইচ্ছা করবে, তারা যেন বিশ্রাম করতে পারে, সেই ব্যবস্থা থাকা জরুরি।

এবারের বইমেলার বিশেষ আকর্ষণ মেট্রোরেল। উত্তরা ও মিরপুরের বইপ্রেমীরা এবছর খুব সহজেই মেট্রোরেলে চড়ে বইমেলায় আসতে পারবে। শিশু চত্বর রমনা কালী মন্দিরের রাস্তার উভয় দিকে ছড়িয়ে দেওয়ায় ওই অংশে বইমেলাটি এবার জমজমাট হবে। বইমেলার নকশার এই বিন্যাসটিও ভালো লেগেছে।

পুরো ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে অমর একুশে বইমেলা হোক সবার প্রাণের মেলা। নিজে বই কিনুন এবং প্রিয়জনকে বই উপহার দিন। বই হোক আপনার সার্বক্ষণিক সঙ্গী। সবাইকে অমর একুশে বইমেলার শুভেচ্ছা...

২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

লেখক: কথাসাহিত্যিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা