ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

শপিং ছাড়া এদেশে ঈদ থেমে যেতে পারে!

পর্ব ১৩

প্রকাশিত : মে ০৫, ২০২১

কথাসাহিত্যিক মারুফ ইসলাম ‘দহনদিনের লিপি’ শিরোনামে আত্মজীবনীর মতো করে গদ্য লিখছেন ছাড়পত্রে। আজ প্রকাশিত হলো ১৩ পর্ব।

২৯ এপ্রিল ২০২১ বৃহস্পতিবার
এমন এক শহরে থাকি, যে শহরে একটি সিএনজির জন্য টানা চল্লিশ মিনিট অনলবর্ষী সূর্যের নিচে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এমনই এক শহর!

এ নিশ্চয় শহরের দোষ নয়, দোষ আমার কপালের। কতজনই তো পাচ্ছে, শুধু আমিই পাই না। কতজনের জীবন নিস্তরঙ্গ বয়ে চলেছে, কোনো বাধা-বিপত্তি নেই, শুধু আমার জীবনেই চড়াই আর উৎরাই!

তো শেষে যখন সিএনজি একটা পেলাম, ততক্ষণে ঘড়িতে বেজে গেছে সাড়ে দশটা বা পৌনে এগারোটা। ভেতরে ভেতরে বিবিধ তাড়া অনুভব করছি। বিশেষত এতক্ষণেও অফিসে না পৌঁছাতে পারার উদ্বেগ, যেকোনো সময় বসের ফোন আসার ভয় আমাকে অস্থির করে তুলল। অস্থিরতা খুব দ্রুতই মেজাজ খারাপের দিকে গেল।

না, সিএনজিটা আমি অফিসে যাওয়ার জন্য নেইনি। মাকে আবার হাসপাতালে নিতে হবে। হাসাপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো। ভর্তিটর্তি করিয়ে অফিসে যেতে যেতে বারোটা! সান্ত্বনা একটাই, অফিস থেকে কেউ খোঁজটোজ নেয়নি আমার।

প্রতিদিনকার মতো অফিসে ঢোকার সময় সিকিউরিটি গার্ডকে জিজ্ঞেস করলাম, চাকরি আছে?
সে দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল, আছে স্যার। যান, কাজ করেন।
অফিসের কাজকর্ম দ্রুতই সারলাম। এরমধ্যে বন্ধু জাহিদ ফোন করল। নতুন নাম্বার, চিনতে পারলাম না। সে কপট অভিমান করে বলল, আমার নাম্বার তুই সেভ করে রাখিস নাই?
বললাম, কয়টা নাম্বার সেভ করে রাখব, বল! তোর যতগুলো সিম, আনভীরের ততগুলো রক্ষিতাও নাই।

তেমন জরুরি কিছু নয়। বন্ধু আমার ফরমাল ফোন করেছে। খোঁজ-খবর নেয়ার জন্য। ঈদে বাড়ি যাব কিনা, গেলে কীভাবে যাব, লকডাউন আরও বাড়বে কিনা, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট খুলে দেবে কিনা— এইসব নিয়ে আলাপ হলো। শেষে তাকে একদিন ধানমন্ডির দিকে এসে ইফতার করার দাওয়াত দিয়ে ফোন রাখলাম।

বিকেলে অফিস থেকে বের হয়ে দেখি, ভয়াবহ যানজট। সবই প্রাইভেট কার। এত মানুষ ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে কেন রাস্তায় নেমেছে, তার কারণ খুঁজে পেলাম না। শপিং? হতে পারে। ঈদ তো সমাগত প্রায়। শপিং ছাড়া এদেশে ঈদ থেমে যেতে পারে! চাঁদ আলো ছড়ানো বন্ধ করে দিতে পারে। বাতাস থমকে দাঁড়াতে পারে।

আমার তো হাঁটা ছাড়া উপায় নেই। কী রোদ কী বৃষ্টি, কী শীত কী গরম, আমার তো হেঁটে চলাই নিয়তি। অতএব হাঁটতে শুরু করলাম। চলবে