শশী হকের গদ্য ‘বিপুল তরঙ্গ রে’

প্রকাশিত : জানুয়ারি ১০, ২০২১

জগতের সবকিছুই `একে বহে অনন্ত ধারা, ইচ্ছার এমন এক প্রেমসূত্রের Law of Attraction দিকে ধাবমান। দিব্যজ্ঞান হচ্ছে স্থানকাল আর বস্তুর মনোরঞ্জন পার হয়ে প্রেমের এই শ্বাশত সূত্রটাকে বুঝতে পারা; তার এনার্জি, ফ্রিকোয়েন্সী আর ভাইব্রেশনকে অনুভব করতে শেখা, আর কিছু না।

হ্যাঁ, সবকিছুই একর্থে এনার্জি। কোয়ান্টাম ফিজিক্স যে একচুয়াল রিয়েলিটির কথা বলে, তা কিন্তু স্রেফ এনার্জিরই এক মহা ভাবতরঙ্গ, যেখানে বস্তু শুধুই বন্ধনাবদ্ধ চৈতন্যের Being এক অনুপম বিনির্মান, আমাদের সেকেন্ড রিয়েলিটি।

সবকিছুই কম্পমান। এবং অদ্ভুত হলেও সত্য যে, এই কম্পন নিপুণ এক ভাবছন্দ, এই কম্পন কারণের অনুপম জ্যামিতিক প্যাটার্ন Logos। এই কম্পনে যে তরঙ্গ বহে, তা আসলে এক প্রকার কোড, ইউনিভার্সাল ল্যাংগুয়েজ কোড, যা বোঝার ক্ষমতা (তৃতীয় দৃষ্টি) থেকে মানুষ বহু দূরে সরে গেছে। তবে আজ এটা জানা দরকার যে, আমাদের ইন্দ্রিয় জ্ঞানও আসলে কোনো-না-কোনো তরঙ্গের মনোময় ইন্টারপ্রেটেশন বা অনুবাদ মাত্র।

আমরা ভাবতেই পারি, বস্তু-অবস্তু সবই চৈতন্যময়। আর এই সময় কোয়ান্টাম ফিজিক্স বলে, চৈতন্যের মৌলিক ভাষাই হচ্ছে কম্পন, গভীর ছন্দময় কম্পন। আর এই কম্পনছন্দ আসলে  আর কিছুই না, প্রেম-অপ্রেমের (পজিটিভ-নেগেটিভ/আপ-ডাউন) অনুভূতিকে এনার্জির  ফ্রিকোয়েন্সি-ভাষায় প্রকাশ করার এক জগতবিধি Law of vibration। তাই একথা যদি ভাবা হয় যে, সবাই, সবকিছুই, কম্পনের ভাষায় তাদের আত্মজীবনীকে অবিরাম প্রকাশ করে যাচ্ছে এই বিধিমতে, তবে তা ফ্যান্টাসি হবে না।
 
প্রতিটা বস্তুর মতো মানুষেরও নিজস্ব এক এনার্জি-ফীল্ড আছে, যার গঠন নির্মিত হয় তার দেহকণা বা আবদ্ধ এনার্জির ভাইব্রেশান থেকে। আর এই ভাইব্রেশানের প্যাটার্নেই ব্যক্ত হয় মানুষের আসল মনোরূপ। আরেকভাবে বললে বলা যায় যে, মানুষের চিন্তা, ইমোশন আর বিশুদ্ধ ইচ্ছার Pure will সাথে এই ভাইব্রেশান এক যুগলবন্দি। এবং তা আরেকটু এগিয়ে, আকর্ষণ বা প্রেমসূত্রগুলির সাথে কীভাবে সম্পর্কিত হয়, সেটা অবশ্য ভিন্ন আলাপ। আমি শুধু বলতে চাই, লোকমান হাকিম যেভাবে গাছেদের সাথে কথা বলতেন সেই জ্ঞান কিন্তু সম্ভব। আর এনার্জির রিয়েলিটিতে কেউ একা নয়, সবাই সবার জন্য; শুধু নিতে জানতে হয়, দিতে জানতে হয়, আর চাওয়ার মতো চাইতে হয়।

তবে এটা ঠিক যে, আমাদের খুব সাবধানে চিন্তা করা উচিত। কারণ চিন্তাও Thought এক প্রকার কম্পমান এনার্জি, যার তরঙ্গ আর ফ্রিকোয়েন্সি আছে, ক্ষেত্র আছে। ব্যক্তির পজেটিভ চিন্তা (হাই ভাইব্রেশান) যেমন সামগ্রিক চিন্তাক্ষেত্রকে উজ্জীবিত করতে পারে, তেমনি তার নেগেটিভ চিন্তা (লো ভাইব্রেশান) করতে পারে তার উল্টাটা। চিন্তা খুব শক্তিশালী এনার্জি, যদি তা জগতের আনন্দ-তরঙ্গের সাথে, নৃত্য-রসের সাথে নিজেকে হারমোনাইজ করতে পারে। আর তখন, সেই একীভূত শক্তি থেকেই জন্ম নেয় প্রেম, অভেদ, সুদর্শন-চক্র। অথচ আমরা মানুষেরা প্রেমের সেই মহারূপকে চিনতে পারি নাই। এখন, এই পৃথিবীতে, বুদ্ধিদীপ্ত গিজগিজ অজস্র চালাকের ভিড়ে প্রেমরূপ যেন নিখোঁজ হয়ে আছে।

রবীন্দ্রনাথের একটা ব্রহ্মগীত খুব গাইতে ইচ্ছা করছে এখন। চলুন পাঠক, আজ না হয় একসাথে গাওয়া যাক, `যে যার ভূমিতে দূরে দূরে` দাঁড়িয়ে, একসাথে:

বিপুল তরঙ্গ রে, বিপুল তরঙ্গ রে।
সব গগন উদ্‌বেলিয়া— মগন করি অতীত অনাগত
আলোকে-উজ্জ্বল জীবনে-চঞ্চল, একি আনন্দ-তরঙ্গ।

তাই, দুলিছে দিনকর চন্দ্র তারা,
চমকি কম্পিছে চেতনাধারা,
আকুল চঞ্চল নাচে সংসার, কুহরে হৃদয়বিহঙ্গ।।