
হানিয়া আমির
শাকিল রিয়াজের গল্প ‘টোল’
প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৫
ঢাকা কেবল একটি শহর নয়, এটি এক ভূগর্ভস্থ শ্বাস, মৃতদের মহড়া, এক অচিন্তনীয় ভয়ের স্মৃতি, যা দিনের বেলায়ও মাটির ফাঁক গলিয়ে উপরে উঠতে চায়। নদীর ওপর ঝুলে থাকা ধোঁয়া, দেয়ালের ভাঁজ থেকে বেরোনো শ্যাওলা, কাকের ডাক, বৃষ্টিতে ভিজে থাকা পুরনো রাস্তাঘাট— সব মিলিয়ে শহরটি যেন এক অনন্ত সমাধিক্ষেত্র।
অরণ্য এই শহরেরই সন্তান। অথচ শহরের দিকে তাকায় ভিন্ন চোখে। সে তরুণ বিজ্ঞানী, কিন্তু বিজ্ঞান তার কাছে কেবল তথ্য নয়, এক আলো-ছায়ার ভাষা, যে ভাষায় মৃতেরা কথা বলে। তার ল্যাবরেটরি শহরের সীমানার কাছে, বুড়িগঙ্গার ধারে, যেখানে রাত হলে নদী ফিসফিস করে।
অরণ্যর গবেষণার বিষয় নিউরন স্টিমুলেশন। মৃতদের ভেতরে কিছু অবশেষ থেকে যায়, এক অনন্ত বৈদ্যুতিক ছাপ। রক্ত জমাট বেঁধে গেলেও, দেহ মাটিতে মিশে গেলেও, সেই ছাপ মুছে যায় না। অরণ্য সেগুলো সংগ্রহ করে। মস্তিষ্কের ছিন্নাংশ থেকে, অস্থির গহ্বর থেকে, বা কোনো ভাঙা হাড়ে মিশে থাকা শূন্যতা থেকে সে তুলে আনে সংকেত। তারপর অ্যালগরিদমের মতো কোড ভেঙে স্ক্রিনে প্রক্ষেপণ করলে ভেসে ওঠে ধূসর আলোকছবি— অতীতের ভগ্নচিহ্ন।
কখনও একটি কণ্ঠস্বর, কখনও এক টুকরো গন্ধ, কখনও কেবল ভয়ের দীর্ঘশ্বাস। অরণ্য যে প্রজেক্টে কাজ করে তার নাম চেতনা-টেক। একাত্তরের শহিদদের নিয়ে তার কাজ। এই কাজ করতে গিয়ে অরণ্যর কাছে সবচেয়ে গভীর যে মুখটি ভেসে ওঠে তাহলো, আসমা।
আসমা জন্মেছিল এক অন্ধকার বৃত্তে। সে পাকিস্তান থেকে ঢাকায় এসেছিল বাবা-মায়ের সঙ্গে। বাবা পাকিস্তান আর্মির ব্রিগেডিয়ার। ঊনসত্তরে গণঅভ্যুত্থানের ঠিক পরপরই তাকে ঢাকায় পোস্টিং করা হয়। ক্যান্টনমেন্টে ওদের বাড়ির বারান্দা থেকে ঢাকা শহরের রক্ত দেখা যেত। বাইরে গুলির আওয়াজ, মানুষের চিৎকার, মশাল, ধোঁয়া। ভেতরে বাবার বুটের শব্দ, ফোনে আদেশ, পরিকল্পনা। সেনা ছাউনিতে বেড়ে ওঠা আসমা দেখলো, এই শহর তার নিজের মতোই নিপীড়িত। তবু আসমা ভেবেছিল, সে আসলে কারও পক্ষে দাঁড়াবে না। কিন্তু হৃদয় নিজের অজান্তেই পক্ষ বেছে নেয়।
একাত্তরের অবরুদ্ধ দিনগুলোতে ধীরে-ধীরে সে জড়িয়ে পড়েছিল মুক্তিকামীদের সঙ্গে। জড়িয়ে পড়েছিল মূলত আজাদের কারণে। ভালোবাসার মানুষ আজাদ, টগবগে বাঙালি যুবক, ততদিনে নাম লিখিয়েছে গেরিলা যোদ্ধার দলে। আজাদের চোখে ছিল ভয়হীন দীপ্তি, ঠোঁটে দুঃসাহসী হাসি। ঢাকা শহরের ধ্বংসস্তূপের ভেতরে তারা একে অপরকে আরও বেশি করে খুঁজে পেয়েছিল। কুয়াশা ঢাকা রাতে, পরিত্যক্ত ছাদের নিচে, গুলির শব্দের মাঝেই তাদের প্রেম লড়ে যাচ্ছিল।
আজাদ বলত, এই যুদ্ধ আমাদের রক্তের দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু তোমার চোখ আমাকে মনে করিয়ে দেয় জীবন এখনও আছে।
আসমা উত্তর দিত, যুদ্ধ হয়তো আমাদের শরীরকে মেরে ফেলতে পারবে, কিন্তু হৃদয়ের স্পন্দনকে নয়।
কিন্তু এই প্রেম ছিল নিষিদ্ধ। আজাদ যে শত্রুপক্ষের যোদ্ধা! চারদিকে গুপ্তচর, সন্দেহ, রক্ত। তাদের প্রতিটি সাক্ষাৎ ছিল মৃত্যুর খেলা।
এক রাতে, আজাদ একটি অপারেশনে ধরা পড়ে যায়। বন্দুকের গুলিতে ঝাঁঝরা দেহ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। আসমা ছুটে যায় খবর পেয়ে, কিন্তু কিছুই করতে পারে না। উল্টো ধরা পড়ে যায় পাকিস্তানি সেনাদের হাতে। পাকিস্তানী হয়ে শত্রুপক্ষকে আশ্রয় দিয়েছে, তথ্য পাচার করেছে, এই সন্দেহে তাকে নিয়ে যায় পাকসেনারা। আসমা আর ফিরে আসে না।
আজাদ আর আসমার প্রেম ঢাকার মাটিতে চাপা পড়ে যায় একাত্তরে, সেপ্টেম্বরের এক বৃষ্টিধোয়া রাতের শেষভাগে। কিন্তু অরণ্যর ল্যাবে সেন্যাপ্সের কোডে, নিউরন সংকেতে, প্রতিদিন জেগে ওঠে সেই চাপা পড়া প্রেম। আসমা কখনও গোপনে আজাদের নাম ধরে ডাকে, কখনও মৃত্যুর মুহূর্তে চিৎকার করে, আবার কখনও ভালোবাসার টানকে আলিঙ্গন করে।
অরণ্য বুঝতে পারে, সে মৃতদের নিয়ে গবেষণা করছে না, সে আসলে প্রেমের ভূত খুঁজে বেড়াচ্ছে।
একদিন, হাতে কফি নিয়ে কোডিং করছিল অরণ্য। কোডের ভাঙাগড়ার মধ্যে হঠাৎ কম্পিউটারের স্ক্রিনে ঝলসে উঠল এক নতুন মুখ। মুখে মোহময় হাসি, দুই গালে দুটি গভীর টোল। আসমার মতো, কিন্তু আসমা নয়।
অরণ্য সবসময় ভাবতো, ঢাকা শহর কেবল ধ্বনির জটিলতা। রিকশার ঘণ্টি, হর্নের চিৎকার, পানের দোকানের টুংটাং, ভাঁজ করা রাস্তায় মানুষজনের উথালপাথাল। কিন্তু সেই সন্ধ্যায় আহসান মঞ্জিলের সামনে দাঁড়িয়ে সে প্রথম অনুভব করলো, ঢাকা কখনও কখনও এক আশ্চর্য মায়ার নগরীও হতে পারে।
গোধূলি বেলা। বুড়িগঙ্গার পানিতে লাল আলো। আহসান মঞ্জিলের পুরনো দেয়ালে কালের ক্ষত। ফুটপাথের ফুসকার দোকানটা ঘিরে ভিড়। রিকশার ঘন্টাধ্বনি ও দূরাগত লঞ্চের ভ্যাঁপু মিলেমিশে তৈরি করেছে অদ্ভুত সুর। সেই ভিড়ের মাঝেই হঠাৎ চোখে পড়ল তাকে। হানিয়া আমির।
ঢাকার ধুলোঝড়া বাতাসে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানের পর্দা-কাঁপানো ইনফ্লুয়েন্সার, মডেল, অভিনেত্রী। হাতে কাগজের প্লেটে ফুসকা, ঠোঁটে হালকা কৌতূহলী হাসি। প্রতিটি ফুসকার টক-ঝালে যখন তার গাল দুলে উঠছে, তখন গালের টোলগুলো যেন আরও গভীর হয়ে উঠছে— শহরটা সমস্ত কোলাহল থামিয়ে কেবল সেই টোলের দিকে তাকিয়ে আছে।
হানিয়ার পাশে ছিল এক বাঙালি ইনফ্লুয়েন্সার— ঢাকার তরুণ, যার সোশ্যাল মিডিয়ায় লাখো ফলোয়ার। সে যেন গাইডের মতো হানিয়াকে রাস্তায় ফুসকার জগতের সঙ্গে পরিচয় করাচ্ছে। আর হানিয়া খেয়ে খেয়ে বলছে, ইস! এত ঝাল! এত টক! কিন্তু মজা লাগছে… খুব মজা।
তার হাসি ভিড়ের মাঝেই ঢেউ তুলল। আশপাশের মানুষজন থেমে গেল, হাতে হাতে মোবাইলগুলো সরব হলো। এক পাকিস্তানি মেয়ের মুখে বাংলা ফুসকার টক-ঝালের বিস্ময় যেন একসাথে ইতিহাসের সমস্ত বিভাজন মুছে দিচ্ছে।
অরণ্য দাঁড়িয়ে ছিল একটু দূরে, বুকের ভেতর হঠাৎ অদ্ভুত আলোড়ন। তার মনে হলো, এ মুখটাই সে দেখেছে ল্যাবের পর্দায়, নিউরন কোডের ভিতর, আসমার মৃত্যুর আগে সেই শেষ হাসিতে। আজকের হানিয়ার হাসির সঙ্গে ভয়ানকভাবে মিলে যাচ্ছে তা।
ঢাকা উত্তাল হয়ে উঠল হানিয়ার আগমনে। একটি প্রসাধনী কোম্পানি তাকে এনেছে দু’দিনের জন্য। ব্যানার, বিজ্ঞাপন, সোস্যাল মিডিয়া, টেলিভিশন— সবখানে হানিয়ার মুখ।
অরণ্যর মনে হলো, আসমা ফিরে এসেছে অন্যরূপে। সে তাকিয়ে রইল। এ কি সেই আসমা— যে মৃত্যুর মুহূর্তেও প্রেম ভুলতে পারেনি?
কাকে যেন চোখ মারলো হানিয়া। অরণ্য স্নায়ুর জগৎ থেকে ফিরে এলো বাস্তবে।
বাস্তব হানিয়া আধুনিক, উজ্জ্বল। সে জনতার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে হাত নাড়লো। কোলাহলের মধ্যে তার চোখে এক ছায়া খেলে গেল— যেন সে কাউকে খুঁজছে, অচেনা কাউকে।
নিজেকে হঠাৎ অচেনা লাগলো অরণ্যর।
সেই রাতে শহর কেঁপে উঠলো আলোয়। পাঁচ তারকা হোটেলের বিশাল অডিটোরিয়ামে মঞ্চে উঠেছে হানিয়া। জনতার উল্লাসে ছাদ নড়ে উঠলো।
হানিয়া নাচলো জনপ্রিয় এক বাংলা গানে। তুমি কোন শহরের মাইয়া গো...। অরণ্যর মনে দুটি শহরের নাম জেগে ওঠে। হতে পারে রাওয়ালপিণ্ডি, নাকি ঢাকা? সঠিক উত্তর জানা নেই। হানিয়ার ঠোঁটে ভাঙা বাংলা শব্দ, উচ্চারণে সরলতা, কিন্তু এতেই জনতা পাগল হয়ে উঠেছে। আলো তার শরীর ভিজিয়ে দিচ্ছে, চোখে অদ্ভুত দীপ্তি।
অরণ্য ভিড়ের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে। হানিয়ার প্রতিটি পদক্ষেপের ছায়ায় যেন মৃতরা উঠে দাঁড়াচ্ছে। ভিড়ের করতালির মাঝে সে শুনতে পেল গুলির শব্দ। হানিয়ার হাসির আড়ালে আসমার রক্তমাখা মুখ।
কোথাও যেন আজাদের কণ্ঠ প্রতিধ্বনিত হচ্ছে, প্রেম মৃত্যুর থেকেও বড়।
ল্যাবে ফিরে অরণ্য কোড খুলে বসলো। আলো-ছায়ার মায়াবী তরঙ্গে ভেসে উঠলো আসমা, আজাদ, ওরা আমাদের দেখছে…
তারপর আজাদের কণ্ঠ, ভয় পেয়ো না…
তারও পর গুলির শব্দ, নীরবতা।
তখনই হঠাৎ স্ক্রিনে ঢুকে পড়লো অন্য একটি কণ্ঠ, বাংলাদেশ, আমি তোমাকে ভালোবাসি।
ভাঙা বাংলায়, অদ্ভুত সরলতায়। ঠিক এই কণ্ঠটি একটু আগে শুনে এসেছিল সে। হানিয়া কিভাবে ঢুকলো এই মৃতদের দলে?
অরণ্যর হাত থেকে মাউস আলগা হয়ে গেল। জীবিত কারও কণ্ঠ মৃতদের নিউরনে কিভাবে মিশলো, তার বোধে আসে না।
পৃথিবীটা যেন অতীত আর বর্তমানের মধ্যে এক বিভ্রম। অরণ্য যখন হানিয়াকে দেখে তখন মনে হয়, সে আসমা। আর যখন আসমার সংকেত পড়ে, তখন সেখানে হানিয়ার হাসি ফুটে ওঠে।
অরণ্যর ভেতর দ্বন্দ্ব জন্মায়। সে কি ইতিহাসের শিকার, নাকি বর্তমানের বন্দি?
রাত করে ল্যাব থেকে বেরিয়ে যায় অরণ্য। বুড়িগঙ্গার ধারে হাঁটে, বাতাসে শোনে ফিসফিসানি। আসমার ডাক। আবার জনতার উল্লাসে শোনে হানিয়ার নাম।
বাংলাদেশ— যে দেশ জুলাই অভ্যুত্থানের পর বিভাজন ভুলে নতুন ভবিষ্যতের দিকে হাঁটছে— তার ভেতরে এখনও লুকিয়ে আছে একাত্তরের রক্তের দাগ।
অরণ্য বোঝে না, এই দাগ কি হানিয়ার টোলে মিশে মুছে যাচ্ছে, নাকি আরও গভীর হয়ে উঠছে।
হানিয়া চলে যাচ্ছে।
বিমানবন্দরে মানুষের ভিড়। ফ্ল্যাশ, ক্যামেরা, উল্লাস। হানিয়া শাদা পোশাক পরে হাসছে। অরণ্য দূরে দাঁড়িয়ে দেখছে।
ঢাকার রাজপথে তখনও ঝুলে আছে জুলাই অভ্যুত্থানের উত্তেজনা। চায়ের দোকানে তরুণরা কথা বলছে, বিভাজনের রাজনীতি আমরা চাই না আর। আমরা ভালোবাসা চাই, ঐক্য চাই।
কিন্তু সেই ভালোবাসার প্রতীক কি হানিয়ার হাসি হতে পারে? অরণ্য বুঝতে পারছিল না। সে শুধু মনে মনে ভাবলো, যদি ফুসকার টক আর ঝালে দুটি টোল জন্মায়, তবে কি সেই টোল ইতিহাসের গভীর ক্ষতকেও ঢেকে দিতে পারে?
বিমান বন্দরে গেট দিয়ে অদৃশ্য হবার আগে হানিয়া শেষবারের মতো ঘুরে তাকালো। তার চোখ সরাসরি অরণ্যর চোখে এসে ঠেকলো। টোল দুটি আরও গভীর হয়।
অরণ্য অনুভব করল, আসমা তাকাচ্ছে।
প্লেন আকাশে মিলিয়ে গেল।
অরণ্য ল্যাবে ফিরে আসে। যন্ত্রগুলো গুনগুন করছে। স্ক্রিনে আবার সঙ্কেত, নিউরন কোড। আসমা, আজাদ, তাদের প্রেম, তাদের মৃত্যু, হানিয়ার টোল সব মিলেমিশে এখন এক। শহরের ইতিহাস, শহিদের রক্ত, প্রেমের কোড, সৌন্দর্যের ছায়া— সব প্রবাহিত হচ্ছে তার চোখের সামনে।
তারপর, হাসির রিনরিন ধ্বনি। টোল। হানিয়া।
সব একসঙ্গে মিশে গেল। আসমা, আজাদ, হানিয়া— তিনটি সংকেত, একটিমাত্র কোডে।
অরণ্যর শ্বাস রুদ্ধ হয়ে যায়। বুঝলো, সে কেবল ইতিহাস ঘাটছে না, সে নিজেই ইতিহাসের ফাঁদে বন্দি হয়ে গেছে।
উদ্ভ্রান্ত হয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো অরণ্য। ঢাকা শহরের ভেতরে, ছায়ার ফিসফিসানিতে, রাতের স্যাঁতসেঁতে বাতাসে এক নতুন ছায়া জন্ম নিয়েছে। সেখানে প্রেম, মৃত্যু, সৌন্দর্য— সবকিছু একই টোলের অন্ধকারে মিলেমিশে গেছে। এবার তার মনে হলো, ঢাকা আসলে এক নিউরন নেটওয়ার্ক, প্রতিটি গলি একেকটা সিন্যাপ্স, প্রতিটি মানুষের মুখ একেকটা সংকেত। আর ইতিহাস? সেটা কেবল বৈদ্যুতিক ঝলক, একবার জ্বলে ওঠে, আবার মিলিয়ে যায়।
একাত্তরের শহিদরা সেই নেটওয়ার্কের পুরোনো সংকেত, আর চব্বিশের অভ্যুত্থান নতুন সিগন্যাল— কিন্তু দুটোই একই সার্কিটে জট পাকিয়ে গেছে।
এমন কি হানিয়া, যে আসলে এসেছিল একটি প্রসাধনী পণ্যের আমন্ত্রণে, এখন অরণ্যর চোখে হয়ে উঠেছে এক অদৃশ্য কোড। তার টোল নিছক সৌন্দর্য নয়— স্মৃতির গোপন গহ্বর, যেখানে যুদ্ধ আর প্রেম একই সঙ্গে বাস করে।
অরণ্যর ভাবনা আরও গভীর হয়। তার মনে হয়, যুদ্ধ ও প্রেমের মধ্যে কোনো দেয়াল নেই, আছে কেবল এক গোলকধাঁধা। এখন সেই গোলকধাঁধার ভেতরেই সে হাঁটছে।
অরণ্য চিৎকার করতে চায়, কিন্তু তার গলা দিয়ে কোনো শব্দ বের হয় না। দুই গালে হাত রেখে মাটিতে বসে পড়ে সে।
ঠিক তখনই অরণ্য অনুভব করে, তার নিজের গালেও দুটি টোল পড়েছে।
স্টকহোম, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫