শিমুল বাশারের গদ্য ‘প্রতিপক্ষ চিনতে শিখুন’

প্রকাশিত : এপ্রিল ২৭, ২০২১

মুনিয়া হত্যাকাণ্ডের সাথে বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকের সম্পর্ক আপনি প্রথমে কিভাবে জেনেছেন? উত্তরটা ভাবতে থাকুন, এই অবসরে আমি একটু লিখি।

আমার এই লেখায় বাচ্চাদের মতো রিয়েক্ট করে ফেলবেন না আশা করি। আমি দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা পেশাতে আছি তো, একারণে লিখছি। আমি জার্নালিজম খাই, জার্নালিজম পড়ি। গণমাধ্যমের ইতিহাস ঘাঁটলে আপনি জেনে থাকবেন, এটাকে বলা হয় ফোর্থ পিলার অব ডেমোক্রেসি। জুডিশিয়ারি, লেজিসলেটিভ, এক্সিকিউটিভ এবং মিডিয়া এই হলো চারটা স্তম্ভ। এদেশের প্রেক্ষাপটে প্রথম তিনটা চেক অ্যান্ড ব্যালেন্সের সিস্টেম আর চতুর্থটা ওই সিস্টেমের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে কাজ করে।

নিশ্চয়ই আপনি সিস্টেমলস বিষয়টা বোঝেন। একটা সিস্টেমকে রান করাতে গেলে সেখানে সিস্টেম লস হবেই কোথাও বেশি কোথাও কম। প্রভুর কর্মকাণ্ডকে সমালোচনা করার জন্য এদেশে ভৃত্য রাখার প্রচলন নাই, তাই না?

গণতন্ত্রের অন্য তিনটি স্তম্ভের কথা বাদ দিলে মোটাদাগে এদেশে গণমাধ্যমকে প্রতিপক্ষ বানানোর কাজটা শুরু হয়েছিল ২০১৩ সালে, গণজাগরণ মঞ্চের উত্থানের পর। দেশব্যাপী গণজাগরণের ওই উত্থানের সাথে যারা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হচ্ছিল তখন তাদের আর কোনো পথ খোলা ছিল না গণমাধ্যমের প্রতি মানুষের অনাস্থা তৈরি করা ছাড়া। কারণ ওই উত্থানের খবর দেশের আনাচে কানাচে মুহূর্তেই পৌঁছে যাচ্ছে গণমাধ্যমের বরাতে। এমন একটা অবস্থা যে তখন অলিতে গলিতেও বাচ্চারা খেলার ছলে শ্লোগান দিচ্ছে ‘রাজাকারের ফাঁসি চাই’। গণমাধ্যমকে যেহেতু রাষ্ট্র নানাভাব নানাকারণে (যা আপনাদের জানা) পৃষ্ঠপোষকতা করে এবং গণতন্ত্রের অংশ হিসেবেই তা কাজ করছে, সেহেতু রাজনৈতিকভাবে মার খেতে থাকা ওই গোষ্ঠীটি গণমাধ্যমকেই কাজে লাগানোর চেষ্টা করে।

এগিয়ে আসে `আমার দেশ` `সংগ্রাম`সহ কয়েকটি পত্রিকা। ওইসব (আমার দেশ) পত্রিকার কপি হাটহাজারীতে কয়েক লক্ষ কপি বিক্রি হয়েছিল ওই একরাতেই। পত্রিকাটির মাধ্যমে শাহবাগে ফ্যাসিবাদের উত্থান, নাস্তিকের উত্থান এসব কথা লিখে নগ্নভাবেই ওই গণজাগরণকে তখন প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়। সেসময় মূলধারার গণমাধ্যমগুলো শাপলা চত্বরে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর তথ্যকে সমর্থন করে নাই কিন্তু আপনারা করেছেন, কেন? কোন সূত্রে? কার দেয়া তথ্যে আপনাদের এমন বিশ্বাস হয়েছিল? মনে আছে সেসব?

সুকৌশলে রাজনৈতিক স্বার্থেই গণমাধ্যমের ওপর অনাস্থা তৈরির কাজটা করা হয়েছিল। খেয়াল করলে দেখবেন লেখকেরা নাস্তিক, সাংবাদিকরা নাস্তিক, সরকারের দালাল এসব এখন অনেকেই মনে করেন। ২০১৩ সালের পর তাদের এই রাজনৈতিক বিজয়টা ছাড়া আর কোনো বিজয় আমার জানা নাই। লেখার শুরুতেই একটা প্রশ্ন রেখেছিলাম আপনি আপনার কোন অনুসন্ধানে জেনেছেন মুনিয়া হত্যাকাণ্ডের সাথে বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকের ছেলে তানভীর জড়িত? কোনো গণমাধ্যমের সূত্র ছাড়াই শুধুই নিছক ফেসবুকের কারোর একটি স্ট্যাটাস? যদি তাই হয় তবে জানবেন আপনিও চান্দের গায়ে সাঈদীর ছবি দেখে মানুষ মেরে ফেলাদের দলেরই একজন।

যাই হোক, যে করেই হোক এখনতো আপনি সত্যটা জেনেছেন, রাইট? বিচার নিশ্চিতের জন্য এখন আপনার কি করা দরকার সেই কাজটা ঠিকঠাক আন্তরিকতার সাথে করুন। প্রতিপক্ষ চিনতে শিখুন। ভৃত্যকে গালি দিলে কি প্রভুর বিচার হয়ে যায়?

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী