সমকামিতা ও একটি জাতির ধ্বংসকাহিনি

নাবিল হাসান

প্রকাশিত : ডিসেম্বর ১০, ২০২০

লূত (আ.) যে জাতির প্রতি প্রেরিত হয়েছিলেন তারা এমন একটি জঘন্য কাজে লিপ্ত ছিল, যা এর আগে পৃথিবীর কোনো জাতিই করেনি। তারা সমকামিতা নামক জঘন্য একটি পাপে লিপ্ত ছিল। আর অবাক করা বিষয় হলো, তারা এই কাজ একদম প্রকাশ্যেই করতো। নামমাত্র লজ্জাবোধও ছিল না তাদের মাঝে। বুঝতেই পারছেন, এমন জাতির মাঝে সত্যের দাওয়াতি কাজ করা মুখের কথা নয়।

লূত ছিলেন ইবরাহিমের (আ.) ভাতিজা। ইবরাহিমের সাথে তিনিও জন্মভূমি থেকে হিজরত করে কেনআনে চলে আসেন এবং সেখান থেকে চলে যান জর্ডান ও ফিলিস্তিনের মধ্যবর্তী এক জায়গায়। সেখানে তিনি নবুয়ত প্রাপ্ত হন এবং দাওয়াতি কাজ শুরু করেন। অন্য নবিদের মতো তিনিও তাওহিদের দাওয়াত দিতে থাকেন। তিনি তার জাতিকে ডেকে বলেন, তোমরা এমন এক কাজ করছো যা এর আগে কেউ করেনি। আর তোমরা তা প্রকাশ্যেই করছো। জবাবে তার জাতির লোকজন বলল, তবে তুমি শাস্তি নিয়ে আসো।

তাদেরকে বারবার বলা সত্ত্বেও তারা মুখ ফিরিয়ে নিতে লাগলো। তারা লূতকে বললো, তুমি যখন এত ভালো মানুষ সাজতে চাও তাহলে এখান থেকে বেরিয়ে যাও। আর নাহলে তোমার প্রতিপালককে বলো আমাদের উপর গজব দিতে। জবাবে লূত বললেন, ‘আমার সাহায্যকারী আল্লাহ।’ তিনি ধৈর্যধারণ করলেন আর দাওয়াত দিতে থাকলেন। কিন্তু তারা বিরক্ত হয়ে তাকে হুমকি দেয়া শুরু করলো। তবুও লূত ধৈর্য হারালেন না।

তারা যখন তাদের চূড়ান্ত সীমা অতিক্রম করলো তখন তাদের উপর আল্লাহর গজব অবধারিত হয়ে গেল। যে ফেরেশতারা ইবরাহিমের কাছে সুসংবাদ নিয়ে এসেছিলেন, সেই একই ফেরেশতারা লূতের কাছে আসলেন তার জাতির জন্য দুঃসংবাদ নিয়ে। ফেরেশতারা এসেছিলেন সুদর্শন কিশোরের আকৃতিতে। লূতের জাতি তাদের দেখে লোভে তার বাড়ি ঘিরে ফেললো। তারা এদের সাথে অপকর্ম করতে চায় দেখে লূত চিন্তিত হয়ে পড়লেন। তিনি তখনো জানতেন না যে, এরা ফেরেশতা।

লূত তার জাতির উদ্দেশ্যে হাত জোড় করে বললেন, `তোমাদের মাঝে কি একজনও ভালো লোক নেই? তোমরা আমার মেহমানদের উপর রহম করো।` কিন্তু তারা তবুও দমে গেল না। লুত বললেন, `হায়, আমার যদি শক্তি থাকতো!` এবার ফেরেশতারা তাদের পরিচয় খুলে বললেন লূতের কাছে। আর জানালেন, খুব শীঘ্রই এদের উপর গজব আসবে। আর তিনি যেন ভোর হওয়ার আগেই তার পরিবার নিয়ে এখান থেকে চলে যান। কিন্তু তার স্ত্রী ছাড়া। উপস্থিত সেইসব লোকদেরকে আল্লাহ অন্ধ করে দিলেন। ফলে তারা ভয় পেয়ে ভেগে গেল।

ভোরের আলো ফুটবার আগেই লূত শহর ছেড়ে বেরিয়ে পড়লেন। একটিবারও পিছন ফিরে তাকালেন না। কারণ আল্লাহর নির্দেশ। এবার শুরু হলো আল্লাহর নির্ধারিত সেই গজব যা তারা এতদিন ধরে আশা করছিল। জীবরাইল (আ.) তার পাখা দিয়ে পুরো শহরকে উপরে তুলে উপুড় করে নিচের দিকে ফেলে দিলেন। আর সেই সাথে শুরু হলো পাথর বর্ষণ। ভয়াবহ আজাবে নিমিষেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল অবাধ্য এক জাতি।

এই ঘটনাগুলো আল্লাহ কোরআনে কেন বর্ণনা করলেন? স্রেফ গল্প বলার জন্য? না,  আমাদেরকে এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিতে হবে। কিন্তু আমরা তা করছি কি? নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করে দেখেন, আজ সারাদিন কতটা মুহূর্ত আপনি আপনার প্রতিপালকের সীমারেখা অতিক্রম করে কাটিয়েছেন?