সরকার আবদুল মান্নানের গল্প ‘কলাগাছের ভেলা’

প্রকাশিত : এপ্রিল ০৫, ২০২৪

এই গফুর, তোর চোখ কই?
গফুর আঙুল দিলে চোখ দেখায়।
চোখ দিয়ে কী করস? জিজ্ঞাসা করলে গফুরের উত্তর, চোখ দিয়া ঘুমাই।
তোর নাক কই?
গফুর আঙুল দিয়ে নাক দেখায়।
নাক দিয়ে কী করস?
নাক দিয়ে হিঙ্গুল মুছি।
কান কই?
গফুর কান দেখায়।
কান দিয়ে কী করস?
কান দিয়ে কান চুলকাই।
আর পা দিয়ে কী করস?
পা দিয়ে লাথি দিই।
গফুর কিছুতেই বুঝতে পারে না চোখ দিয়ে কী করে দেখে, দেখা জিনিসিটা কী। নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নেওয়ার কী আছে। আর কান দিয়ে শোনে কীভাবে। সারাক্ষণ হেঁটে বেড়ানো গফুর কিছুতেই বুঝতে পারে না যে, পা দিয়ে হাঁটার কী আছে। গফুরের বয়সে আমরা সবাই বুঝে গিয়েছিলাম যে, শরীরে বাইরের কোন অঙ্গের কী কাজ। বিশেষ করে হাত-পা নাক কান চোখ দিয়ে কী করে। কিন্তু গফুর বোঝে না। ওর কাছে বিষয়গুলো খুবই গোলমেলে।

এখন আমরা অনেক বড় হয়ে গেছি। সাঁতার কাটতে পারি। পুকুরের এপার থেকে ওপারে চলে যেতে পারি সাঁতার কেটে। বিলও পাড়ি দিতে পারি। গফুরও এসব কিছুই করতে পারে। কিন্তু ওর বোকামিগুলো আমাদের বারবার বিপদে ফেলে।

বর্ষাকাল। আমরা তিনজন কলাগাছের তিনটি টুকরায় বসে হাত-পা ছুড়ে কলাগাছ চালিয়ে নিতে লাগতাম। পাশাপাশি তিনজনে জলের মধ্যে কোলাহল তুলে যাচ্ছিলাম। ধানখেতের আল দিয়ে, পাটখেতের আল দিয়ে শেওলা, শাপলা, শালুক কচুরিপানা মাড়িয়ে মাড়িয়ে আমরা কোথায় চলে গেলাম! তখন শুধু চলতে জানতাম। কোথায় যেতে হয়, কখন যেতে হয় আর কখন থামতে হয়— এসব জটিল বিষয় তখন জানা হয়নি।

এক সময় বুঝতে পারলাম, আমরা কোথায় তা জানি না। ধানখেত আর পাটখেতের জন্য আমাদের বাড়ি দেখা যায় না। এমন কি গ্রামও দেখা যায় না। মাথার ওপরে বিপুল একটা নীল আকাশ দেখা যায়। আর চারদিকে ধানখেত, পাটখেত, ধনচা খেত।

আমরা কলাগাছের ওপর দাঁড়িয়ে আমাদের বাড়ি দেখতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু জলের ওপর কলাগাছের একটি টুকরার ওপর দাঁড়ানো যায় না। দাঁড়ানোর চেষ্টার একটি খেলা আমরা অনেকবার করলাম। কিন্তু কেউই সফল হলাম না।

তখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার উপক্রম। চারদিক থেকে আলো ক্রমেই কমে আসছে। বাড়িতে ফিরতে হবে। সেদিন আমরা তিনজনই একটি কঠিন সত্যের মুখোমুখি হলাম। আর তা হলো, বাড়িতে ফিরতে হয়। প্রত্যেক মানুষেরই একটি ঘর থাকা দরকার। আর তাকে সেই ঘরে ফিরে যাওয়াও দরকার। আমরা প্রতিদিনই দিনের শেষে ঘরে ফিরতাম। কিন্তু বুঝতাম না যে, ঘরে ফিরি।

গফুর সারাক্ষণই নাক দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাসের কাজ করে। কিন্তু ও কিছুতেই ব্যাপারটা বুঝতে পারত না। বকর ভাই একদিন বলল, গফুর নাক-মুখ বন্ধ কর। গফুর কয়েক সেকেন্ড নাক-মুখ বন্ধ করে রাখতে পেরেছিল। তারপর বলল, ভাই মইরা যাইতেছিলাম তো।

বকর ভাই নতুন একটা কিছু আবিষ্কার করেছে এমন ভাব নিয়ে গফুরকে বুঝিয়ে দিল, বুঝলি গফুর, বাতাস ছাড়া কেউ বাঁচে না। আমরা প্রতিমুহূর্তে বাতাস নিই, কিন্তু বুঝি না। গফুর এখন বুঝল বাতাস কত দরকার।

ঘরে ফেরার বিষয়টিও আমাদের কাছে তেমনই ছিল। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় ঘরে ফিরি বলেই বুঝতে পারতাম না ঘরে ফিরতে হয়। কিন্তু আজ টের পাচ্ছি, ঘর কত জরুরি। যখনই আমরা বিপদে পড়ি তখন একমাত্র ভরসা গফুর। গফুর আমাদের কখনই বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারে না। বরং নতুন বিপদের মধ্যে ফেলে। কিন্তু তারপরেও গফুরকেই আমরা জিজ্ঞাসা করিÑ
কিরে গফুর, কী করমু? বাইত যামু ক্যামনে?

গফুর বলে, চিন্তা করিস না। অইব অনে পথ।
সত্যি গফুর চিন্তা করে না। অবলীলায় বলে, তিনজন আছি না! তিনদিকে গেলে কেউ না কেউ বাড়ি পামুই।

গফুরের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা বেড়ে যায়। তাই তো! এভাবে তো আমি ভাবিনি। তারপর গফুর নির্দেশের সুরে আমাকে বলল, তুই যা এই দিকে, বাট্টুকে নির্দেশ করে বলল, তুই যা ওই দিকে। নিজে কোন দিকে যাবে তা না-বলে এক দিকে যাওয়া শুরু করল।

কলা গাছের উপর বুক পেতে হাতপা ছুড়ে আমরা যার যার মতো নিরুদ্দেশ হয়ে গেলাম। গফুর চিৎকার করে বলছিল, যা যা, ডরাইস না। বাড়ি পামু অনে।

এক সময় গফুরের কণ্ঠস্বর আর শোনা যাচ্ছিল না। আমরা কে কোথায় আছি তাও বুঝতে পারছিলাম না। আর এতক্ষণ আমাদের মধ্যে যে গোয়েন্দা অনুভূতি তৈরি হয়েছিল তাও এখন আর নেই।

অন্ধকার ঘনিয়ে আসছিল। ধান-পাটখেতের আড়ালে জলের ওপর অন্ধকার কেমন তা বুঝতে পারছিলাম। ভয়ে কাঁপন ধরছিল শরীরে। জল আর অন্ধকার ক্রমেই মিলে-মিশে এক হয়ে যাচ্ছিল। সেই অন্ধকারের মধ্যে আমরা জলে ডুবে যাচ্ছিলাম নাকি অন্ধকারে, তা ঠিক বুঝতে পারছিলাম না।

পানিতে কুমির থাকে, হাঙ্গর থাকে— এসব কথা শুনেছি বহুবার। আমাদের কাছে এসব কথা ছিল শ্রেফ কথার কথা। পানিতে নেমে হিংস্র প্রাণী কুমির কিংবা হাঙ্গরের কথা ভেবে ভয় পেয়েছি এমন মনে হয় না। আর এই সব বিলের ফালতু পানিতে থাকে জোঁক, টাকি মাছ, পুটি মাছ— এই সব নিম্ন শ্রেণির প্রাণী। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে, কুমির আসা অসম্ভব নয়। নদী-সমুদ্র ছেড়ে ধানখেতের মধ্যে, পাটখেতের মধ্যে সামান্য জলে এই অভিজাত প্রাণীটি কেন আসবে—  সেই যুক্তি কাজে দিচ্ছিল না।

মনে হচ্ছিল, এই বুঝি ভুল করে কোনো একটি হিংস্র কুমির বিলের জলে ঢুকে পড়ল। আর জলের স্রোতে মানুষের গন্ধ পেয়ে আমার দিকে ধেয়ে আসল। ভূতপ্রেত, দৈত্য-দানব— এইসবের ভয়ও ক্রমেই জমাট হয়ে উঠতে লাগল। সব কিছু মিলে এমন একটা ভয়ের আবহ তৈরি হলো যা বলার নয়। বুকটা এমনভাবে ধরফর করে উঠল যে তার কাঁপন জলের মধ্যে ঢেউ তৈরি করছিল।

সিনেমায়, বিশেষ করে নায়িকারা বাঁচাও বলে চিৎকার করার কথা শুনেছি। সেই চিৎকারে শব্দ অবশ্যই নায়ক পর্যন্ত পৌঁছবে। নায়ক কত দূরত্বে আছে— তিন মাইল, নাকি তের মাইল সেটা বিবেচনার বিষয় নয়। সে-রকম চিৎকার করে বাঁচাও বলা শিখিনি। আর আমরা তো নায়িকা নই। দূরে কিংবা কাছে কোনো নায়ক সেই চিৎকার শুনে ঝাপিয়ে পড়ার জন্যও অপেক্ষা করে নেই। তবু আমি চিৎকার করে বললাম, বাট্টু... বাড়ি কোন দিকে? অ গফুর... শুনতে পাস... বাড়ি কোন দিকে?

কিন্তু কোথাও থেকে কোনো সাড়া-শব্দ নেই। অধিকন্তু মনে হচ্ছে আমার কথাগুলো ব্যঙ্গ করে আমার কাছেই ফিরে আসছে। বকর ভাইয়ের কথা মনে পড়ল। একদিন বকর ভাই শব্দ বিষয়ে পড়ছিল। গফুরকে দেখে বলল, এই গফুর, ক দেহি শব্দ বালা চলে কী দিয়া?

গফুর তো হতবম্ব, আর মহা বিরক্ত। এই ধরনের ফালতু কথা কেউ বলতে পারে ও তা ভাবতেই পারেনি। বিরক্ত হয়ে বলল, আচ্ছা বকর ভাই, তোমার মাথা কি ঠিক আছে? শব্দরে চলতে দেখছ কোনো দিন? শব্দ কী মানুষ যে নাও দিয়া যাইব, নাকি শব্দের শইল পাঙ্খা গজায় যে বাতাস দিয়া উইড়া উইড়া চলব?

বকর ভাই বিরক্ত হয়ে বলল, তুই একটা গাধা। এই যে আমি কথা কইলাম আর তুই হুনলি। কেমনে? আমার মুখের কতাডা তোর কানে গেল কেমনে?

গফুর ওই সব ফালতু কথা পাত্তা দেয় না। বলে, কেমনে আবার? তুমি কইছ, আমি হুনছি। হুননের লইগ্যা এত কিছুর দরকার কী?
বকর ভাই ওর সঙ্গে আর কিছু বলতে চায় না, তোর লগে কতা কওনের চেয়ে ওই কলা গাছটার লগে কতা কওন অনেক বালা। দূর হ! বাট্টুররে ডাইক্কা দে।

গফুরও কম যায় না। বকর ভাইকে বলে, তুমি তো সব বোঝ। বুইঝ্ঝা বুইঝ্ঝা পরীক্ষায় আণ্ডা পাও। আমি ডাকতে পারতাম না। বাট্টুররে তুমি ডাইক্কা লও।

বাট্টুকে ডাকতে হলো না। সে নিজেই পাটকাঠির মাথায় আগুন ধরিয়ে কাচারি ঘরে পৌঁছল। বকর ভাই বিড়ি খাবে। বাট্টুরর কাছ থেকে পাটকাঠিটা নিয়ে বিড়িতে আগুন ধরাতে ধরাতে বকর ভাই বলল, অ বাট্টু। তুই তো পড়ায় বালা। বল তো দেহি শব্দ বালা চলে কী দিয়া? কইতে পাড়লে লেবনচুষ পাবি।

বকর ভাই এমন সহজ প্রশ্ন করবে তার জন্য বাট্টু প্রস্তুত ছিল না। বলল ভাই, এইডা তো অনেক সহজ। আত্মবিশ্বার সঙ্গে বাট্টু বলল, শব্দ সবচে ভালা চলে মুখ দিয়া। অইচে না ভাই? দেও। লেবেনচুষ দেও।

বকর ভাই মহা বিরক্ত হয়ে বলল, অইচে তোর মাতা। মুখ দিয়া শব্দ চলে কীভাবে? মুখ দিয়া তো আমরা কতা কই।
বাট্টু বলল, তাইলে বিষয়ডা কী তুমিই কও। শব্দ বালা চলে পানি দিয়া। পানি অইল শব্দের ভালো মাধ্যম। তুই বিলের পানির কাছে খাড়াইয়া কতা ক, হেই কতা অনেক দূর থিকা হোনা যাইব। বুঝলি?

বাট্টু অবজ্ঞার দৃষ্টিতে বকর ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকল। আর বলল, হ, বুজছি।
শব্দের গতিপথ নিয়ে এরপর অনেক গবেষণা করেছি আমরা। পুকুরের এপারে পানির উপর মুখ দিয়ে কথা বলত গফুর আর ওপারে পানির উপর কান পেতে রেখে শুনত বাট্টু। গফুর অতি আস্তে কথা বলে বাট্টুকে জিজ্ঞাসা করত, বাট্টু, ক দেহি কী কইছি?
কইসছ তোর মাতা। কিছুই তো হুনলাম না।
আমারে জিজ্ঞাসা করত গফুর, এই পোড়া মরিচ, তুই হুনসছ?
পোড়া মরিচ কয় আমারে! আমি কি এত কালো আর চিকনা। মেজাজটা বিগড়িয়ে যায়।
বললাম, হ, হুনছি।
কী হুনসছ ক।
কলি, গফুর তুই একটা কুত্তা।

এরপর ঝগড়া শুরু হয়ে যেতো। পানিতে শব্দের গতি আর মাপা হতো না। কিন্তু আজ এই মহা বিপদের সময় কেন যেন মনে হলো আসলেই পানি দিয়ে শব্দ অতি দ্রুত চলতে পারে। তাই পানির উপর মুখ রেখে চিৎকার করে ডাকতে লাগলাম গফুরকে আর বাট্টুকে। ওরাও হয় তো একইভাবে আমাকে ডাকছিল। কিন্তু আমরা কেউই কারো চিৎকার শুনতে পাচ্ছিলাম না। উত্তরে-দক্ষিণে বিস্তৃত বিল। আমি দক্ষিণের নিরুদ্দেশে যাত্রা করেছি আর গফুর উত্তরে। বাট্টু পাশের নম জহিরাবাদের দিকে গিয়ে আমাদের বাড়ি জহিরাবাদের উলটো দিকে গিয়ে ওঠে। আর পশ্চিম দিকে আমাদের বাড়ি। তিনজন হওয়াতে সে দিকে কারোরই যাওয়া হয় না। গফুর এই হিসাবটা মাথায় রাখেনি যে আমরা বালক তিনজন, কিন্তু দিক চারটি।

গ্রামের ঘরগুলোতে যখন কেরোসিনের প্রদীপ জ্বলে উঠছিল তখন আমি কান্না শুরু করে দিলাম। ভীষণ চিৎকার করে কান্না। ততক্ষণে পানু ডাক্তার বাট্টুকে উদ্ধার করে ফেলেছে। আর বাট্টুরর কাছ থেকে তথ্য নিয়ে নৌকা যোগে দ্রুত আমার কাছে চলে আসে। আর তার কিছুক্ষণ পরে উদ্ধার করে গফুরকে।

আমাদের বাড়িতে বিপুল জনসংখ্যা। সেই কুড়ি কুড়ি আবালবৃদ্ধবনিতা গ্রামময় চষে বেড়াচ্ছে আমাদের খুঁজে পেতে। আর তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শত শত পাড়াপ্রতিবেশী। তাদের চিৎকার-চেচামিচি, আদেশ-নির্দেশ আর হা-হুতাশ মিলিয়ে যা তৈরি হয়েছে শত শত বাড়ি-ঘরে আগুন ধরলেও তা হয় না। সেই বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও লোকের আফসুসের আড়ালে ভিতরগত আনন্দে হঠাৎ বাধা পরল আমাদের আবির্ভাবে।

বাড়ির দক্ষিণের ঘাটে নৌকা ভিড়িয়েই দৌঁড়াল পানু কাকু। আর অসাধারণ এক উদ্ধার কাজের সফল নায়কের মতো বুক ফুলিয়ে চিৎকার করে বলতে লাগল, পাইসি পাইসি, ওগ পাইসি। মুহূর্তে আমাদের দেখার জন্য এত মানুষ হৈচৈ আর কোলাহল করে এগিয়ে এলো যে তা আর কী বলব। কুপি, হারিকেন, মশাল, টর্চ ইত্যাদির আলোয় আমাদের বিশাল বাড়িটি আলোকিত হয়ে উঠল। তারপর জনতার অসংখ্য প্রশ্নে, জিজ্ঞাসায়, গালাগালে, ভিতি প্রদর্শনে আমরা নাস্তানাবুদ হয়ে উঠলাম।

একজনে বলল, বাইরা, বাইরা। আচ্ছা মতো বাইরা। রাইত কইরা পানিত যাওনের কাম কী?
জয়নাল ভাই মহা বিরক্ত। যে কোনো বিপদে-আপদে সিংহভাগ ঝামেলা যায় তার ওপর দিয়ে। সে বলল, কই ওরা, কই। আমার কাছে দে। পানির থিকা চুবাইয়া আনি।

এমন মর্মান্তিক অবস্থায় ফুপি এসে জনতার মধ্য থেকে আমাদের উদ্ধার করে ঘরে নিয়ে যায়। ডরাইসছ সোনা, ডরাইসছ? নে এই লবণ পোড়া মুখে দে। আমরা তিনজনে লবণ পোড়া মুখে দিয়ে যার যার ঘরে চলে গেলাম। ঘরে যাওয়ার পরে মায়ের আনন্দের মাইর থেকে একমাত্র রক্ষা পেয়েছিল গফুর। কারণ ওর মা নেই।