সাঈফ ইবনে রফিকের গদ্য ‘হায় টোকন ঠাকুর, হায় কাঁটা!’

প্রকাশিত : অক্টোবর ২৬, ২০২০

বিকেলে শরিফ খিয়াম আহমেদ ঈয়ন বলল, চলেন, টোকন ঠাকুরের লগে আড্ডা দিয়া আসি। প্রায় আট-দশ বছর কবিকে দেখি না। ফেসবুকে টুকটাক যোগাযোগ, এই যা।

ভাবলাম, প্রস্তাব মন্দ না। যাই। পথে মিছিল খন্দকারকেও তুলে নিলাম। বাটা সিগন্যালে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন এসএম তুষার ভাই। চার বরিশাইল্যা ঢুকলো ঝিনেদার কবি টোকন ঠাকুরের বাসায়।

দেখলাম, তিনি চিলেকোঠার বাইরে ছাদে বসে দুজনের সাথে আলাপ করছেন। ভাবলাম, সিনেমার টিমের কেউ হবে। দশ মিনিট পর টোকনদা আমাদের রুমে এলেন। বললেন, সরকারি অনুদানের সিনেমা সংক্রান্ত মামলায় আমার নামে ওয়ারেন্ট বেরিয়েছে। এখন থানায় যেতে হবে, ওসির সাথে একটু কথা বলে আসি।

ওয়ারেন্টের আসামিকে আবার পুলিশ ছেড়ে দেয় নাকি? ঈয়নকে বললাম।
টোকনদা তখনও কনফার্ম, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই ছেড়ে দেবে।
এরই মধ্যে ইউনিফর্মের দুই পুলিশ তার বাসায় ঢুকলো। এর আগে যারা আলাপ করছিলেন, তারা সাদা পোশাকে ছিলেন।

আমাদের মিডিয়া সংশ্লিষ্ট পরিচয় জানার পর টোকনদাকে যথেষ্ট সম্মানের সাথে নামানো হলো। পুলিশের গাড়িতে না তুলে রিকশায় করে এক এসআই তাকে নিয়ে গেলেন থানায়।

তুষার ভাইকে বাসায় পাঠিয়ে দিয়ে আমরা তিনজনই থানায় গেলাম। টোকনদা বারবারই মিডিয়ায় না জানানোর অনুরোধ করছিল। বলছিল, অসুস্থ বাবা-মা এটা নিতে পারবে না। কিন্তু আমরা জানি, বাস্তবতা ভিন্ন। থানায় সেটা আঁচ করতে পেরে তিনজন একসাথে গ্রেফতারের স্ট্যাটাস দিলাম। খবর ছড়িয়ে পড়লো দাবানলের মতো। এক ঘণ্টার মধ্যে থানায় শ’খানেক ফিল্মমেকার-কবি-সাংবাদিক।

প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব ও কবি কামাল চৌধুরী ভাই বিষয়টি সম্পর্কে অবগত। তার সাথে দুই দফা এ নিয়ে ফোনালাপ হয়েছে। আজই জীবনে প্রথম তার সাথে কথা বললাম। রেসপন্স অসাধারণ ও প্রাণবন্ত। প্রকাশ বিশ্বাস আইনি বিষয়টা দেখবেন। তার সাথেও আলাপ হয়েছে। কোর্টে চালানের পর জামিনের আবেদন করবেন তিনি।

হায় শহীদুল জহির! হায় কাঁটা! নিউমার্কেট থানা হাজতে রাত কাটালেন কবি ও ফিল্মমেকার টোকন ঠাকুর।